পণ্য পরিবহন ধর্মঘটে খুলনার বাজারে নেতিবাচক প্রভাব
১২ দফা দাবিতে পণ্য পরিবহণ মালিক-শ্রমিক ঐক্য পরিষদের ডাকা ধর্মঘটের নেতিবাচক প্রভাব পড়তে শুরু করেছে খুলনার বাজারে। মাত্র এক দিনের ব্যবধানে দাম বেড়েছে প্রায় সব পণ্যের। দিনভর পণ্যবোঝাই পরিবহনগুলো পণ্য নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকলেও কেই খালাস করেনি।
সংকট নিরসনের লক্ষ্যে স্থানীয় প্রশাসনের সঙ্গে সমঝোতা না হওয়ায় মঙ্গলবার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে মিটিং বসছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, গতকাল সোমবার থেকে শুরু হওয়া ধর্মঘটের কারণে সড়ক-মহাসড়কে চলেনি ভারি চাকার পণ্যবাহী যানবাহন। ফলে খুলনার বাজারগুলোতে কোনো মালামাল সরবরাহ হয়নি। যার নেতিবাচক প্রভাব পড়তে শুরু করেছে বাজারে।
এদিকে এসব সমস্যা সমাধানে স্থানীয় প্রশাসনের সঙ্গে মালিক-শ্রমিক ঐক্য পরিষদের বৈঠক হলেও কোনো সমাধান হয়নি।
ধর্মঘট প্রত্যাহারের বিষয়ে ঐক্য পরিষদের নেতা আব্দুর রহিম বক্স দুদু জানান, উদ্ভূত সমস্যা সমাধানে স্থানীয় প্রশাসনের সাথে পণ্য পরিবহন মালিক-শ্রমিক ঐক্য পরিষদের বৈঠক হয়। সোমবার সন্ধ্যায় খুলনা সার্কিট হাউজে অনুষ্ঠিত বৈঠকে বিভাগীয় কমিশনার মো. আবদুস সামাদ, অতিরিক্ত ডিআইজি মো. হাবিবুর রহমান, খুলনা জেলা প্রশাসক নাজমুল আহসানসহ প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ উপস্থিত ছিলেন। তবে বৈঠকে কোনো সমাধান না হওয়ায় মঙ্গলবার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে বৈঠক হবে।
বৈঠকের বিষয়ে খুলনা জেলা প্রশাসক নাজমুল আহসান বলেন, আমরা ধর্মঘট প্রত্যাহারের বিষয়ে ঐক্য পরিষদের নেতৃবৃন্দের সঙ্গে বৈঠক করেছি। সেখানে জনদুর্ভোগ রোধে কর্মসূচি প্রত্যাহারের অনুরোধ করি।
তবে পরিষদের নেতৃবৃন্দ জানিয়েছেন, পচনশীল পণ্য পরিবহনে তারা কোনো বাধার সৃষ্টি করবে না।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ে মঙ্গলবার দুপুর ১২টায় ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে মালিক-শ্রমিকরা বৈঠক শেষে ধর্মঘট প্রত্যাহারের বিষয়ে জানাবেন।
দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত এ আন্দোলন চলবে বলে জানিয়েছেন পণ্য পরিবহণ মালিক-শ্রমিক ঐক্য পরিষদের আহ্বায়ক আব্দুল গফফার বিশ্বাস। তিনি বলেন, ব্যবসায়ী ও মানুষের স্বার্থেই আমরা ১২ দফা দাবি উত্থাপন করেছি। এগুলো জনস্বার্থের জন্যই। মালামাল বহনে পথে পথে চাঁদাবাজি হয়। আমরা এর প্রতিবাদ জানিয়ে-ফেরিঘাটে চাঁদাবাজি ও অনিয়ম বন্ধ, কাগজপত্র পরীক্ষার নামে হয়রানি বন্ধ, পৌরসভা ও সিটি কর্পোরেশনের নামে চাঁদাবাজি বন্ধ, ব্রিজের টোল কমানো, অপ্রয়োজনীয় স্পিড ব্রেকার অপসারণ, প্রশিক্ষণের মাধ্যমে ড্রাইভিং লাইসেন্স প্রদান, জ্বালানি তেলের দাম কমানো, ভারতের পেট্রাপোল বন্দরে চালকদের নির্যাতন বন্ধ, গত বছরের সীতাকুন্ডু থানায় ৪০০ জন অজ্ঞাত ট্রাক চালকদের নামে মামলা প্রত্যাহার, ট্রাক ও কাভার্ড ভ্যানের সাইড অ্যাঙ্গেল, বাম্পার ও হুক অপসারণ সিদ্ধান্ত বাতিল, পরিবহনে অতিরিক্ত পণ্য বোঝাই না করতে প্রেস নোট জারি, অতিরিক্ত পণ্য পরিবহন নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্র স্থাপন, ওয়েব্রিজে জরিমানা বাতিল, ১২ হাজার টাকা স্কেল জরিমানা প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছি।
এদিকে পণ্যবাহী যানবাহন ধর্মঘটের কারণে মাত্র একদিনের ব্যবধানেই খুলনার কাঁচাবাজারসহ বিভিন্ন পণ্যের দাম বেড়েছে। বাজার ঘুরে দেখা গেছে, সবজির বাজারে কেজি প্রতি ৫-৭ টাকা হারে দাম বেড়েছে।
শহরতলী থেকে কাঁচা পণ্যবাহী কোনো গাড়ি শহরে প্রবেশ না করায় খুলনার সোনাডাঙ্গাস্থ পাইকারি কাঁচা বাজারে পণ্য কেনাবেচার হার ছিল খুবই কম। আগের দিন অর্থাৎ সোমবার রাতে যারা আগে ভাগেই যেসব পণ্য নিতে পেরেছে সেগুলোই বেচাকেনা হয়েছে খুলনার বাজারগুলোতে।
আলমগীর হান্নান/আরএআর/এমএস