‘রক্ষিতা’ হইনি বলেই নিঃস্ব আমি : নীলা
নারায়ণগঞ্জের আলোচিত সাত খুনের ঘটনার পরই উঠে আসে ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত নূর হোসেনের বান্ধবী ও সাবেক মহিলা কাউন্সিলর জান্নাতুল ফেরদৌস নীলার নামটি। সবার মুখে মুখে ছড়িয়ে পড়ে নীলা ও নূর হোসেনের নানা প্রেম কাহিনী।
তবে নীলা বরাবরই দাবি করে আসছেন, তার ইচ্ছা না থাকা সত্ত্বেও নূর হোসেন তাকে বিয়ে করেছিলেন। একপর্যায়ে নূরকে ভালোও বেসেছিলেন নীলা।
জান্নাতুল ফেরদৌস নীলা বলেন, আমি কাউন্সিলর হওয়ার পরই নূর হোসেন আমাকে রক্ষিতা বানাতে চেয়েছিলেন। আমি নূরের চোখে সুন্দরী, এটাই আমার অপরাধ। এজন্য আমার জীবন এখন অভিশপ্ত। নূর হোসেনের ‘রক্ষিতা’ হইনি বলেই সব হারিয়ে আজ আমি নিঃস্ব। সাজানো-গোছানো সংসার ভেঙেছি, প্রাণপ্রিয় স্বামীকে ডিভোর্স দিয়েছি। এখন আমি নিরূপায়।
কিন্তু বিশ্বাস করুন, এলাকার প্রায় সবাই আমাকে নূরের স্ত্রী হিসেবে জানলেও আমার সঙ্গে তার কোনো অধিকারের সম্পর্ক নেই। স্বামী-সন্তানের জীবন রক্ষায় নিজের সম্মান জলাঞ্জলি দিয়ে অভিনয় করেছি দিনের পর দিন। কারণ আমি ছাড়াও তার আরও পাঁচজন ‘রক্ষিতা’ ছিল। যদিও তার ভাষায় স্ত্রী। সেখানে আমার কোনো গুরুত্ব ছিল না। এজন্য আমাকে তার কোনো সম্পত্তি কিংবা অধিকারের সঙ্গে সংযুক্ত করেনি নূর হোসেন।
এভাবেই নিজের অভিব্যক্তি প্রকাশ করেছেন নারায়ণগঞ্জ সিদ্ধিরগঞ্জের সংরক্ষিত আসনের সাবেক এই নারী কাউন্সিলর। সাত খুন মামলার রায় ঘোষণার পর নীলার অভিব্যক্তি জানতে দেশের গণমাধ্যম তার সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করে। কারও কাছে বলেছেন নিজের অভিমত আবার অনেককে দেখাও দেননি তিনি।
গত মঙ্গলবার জাগো নিউজের এ প্রতিবেদকের সঙ্গে কথা হয় নীলার। নীলার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সাত খুনের মামলায় ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত গডফাদার নূর হোসেন সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের পাশাপাশি নারী কেলেঙ্কারির ঘটনায়ও ব্যাপক আলোচিত ছিলেন।
কোনো সুন্দরী নারী তার চোখে ধরলেই ওই নারীকে বিপদগামী হতে হয়েছে। যেকোনো মূল্যে তার কব্জায় নিয়ে আসতেন। নূর হোসেনের সঙ্গে অসংখ্য নারীর সখ্যতা ছিল। বলা যায় নারীলোভী ছিলেন তিনি। বিশেষ করে নারী কাউন্সিলর জান্নাতুল ফেরদৌস নীলার সঙ্গে সম্পর্কের সূত্র ধরে নূর হোসেনের নারী কেলেঙ্কারির বিষয়টি উঠে আসে। বৃহস্পতিবার নীলার সঙ্গে এ প্রতিবেদকের আবার কথা হয়।
এ সময় নীলা বলেন, নূর হোসেন নারীলোভী ছিলেন। যাকে চোখে ধরেছে তাকেই বিয়ে করেছে। এ তালিকায় তার রক্ষিতা স্ত্রী ছিল পাঁচজন। এছাড়া তালিকার বাইরে আরও অনেক নারী ছিল। যার কোনো হিসাব নেই। এছাড়া অসংখ্য বান্ধবী ছিল তার।
নূর হোসেনের ঘনিষ্ঠ সূত্রে জানা গেছে, নূর হোসেন ট্রাক হেলপার থেকে অবৈধ উপার্জনের মাধ্যমে অল্প সময়ের মধ্যে কোটি টাকার মালিক বনে যান। নারীদের প্রতি আলাদা নেশা ছিল তার। সুন্দরী নারী দেখা মাত্রই তার বিষয়ে খোঁজখবর নিয়ে দখলে নেয়ার একটা নেশা ছিল তার।
নূর হোসেনের পাঁচ স্ত্রীর বিষয়ে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, পাঁচ স্ত্রীর মধ্যে প্রথম স্ত্রী লিলির বাড়ি ঢাকার মিলব্যারাক এলাকায়। তিনি এখন নূরের সংসারে নেই।
দ্বিতীয় স্ত্রী লিপির বাড়ি নারায়ণগঞ্জ শহরের খানপুরে। তার সংসারে বিপ্লব নামের এক ছেলে ছিল। কলেজপড়ুয়া এ ছেলে বাপের বসানো মদের দোকান থেকে মদ পান করতে করতে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে। মাদক নিরাময় কেন্দ্রে নিয়েও তাকে বাঁচানো সম্ভব হয়নি। মদ সেবন করতে করতে নির্মমভাবে তার মৃত্যু হয়। এ মৃত্যুকে ‘বাবার পাপে ছেলের মৃত্যু’ হিসেবে উল্লেখ করেন এলাকাবাসী।
তৃতীয় স্ত্রী পারুলের বাড়ি ডেমরার সারুলিয়ায়। তিনিও এখন নূরের সংসারে নেই। আর চতুর্থ স্ত্রী কাঁচপুরের রুমা। তার সংসারে এক ছেলে ও এক মেয়ে আছে। রুমার সঙ্গেই সিদ্ধিরগঞ্জের শিমরাইলে বসবাস করতেন নূর হোসেন। তার এই স্ত্রীর নামে অনেক সম্পদ গড়ে তোলেন।
এছাড়া পঞ্চম স্ত্রী রাধার বাড়ি ভারতের কলকাতার সদর স্ট্রিটে ২০০১ থেকে প্রায় ৬ বছর ভারতে পালিয়ে থাকার সময় ‘গোপাল’ নাম ধারণ করে রাধাকে বিয়ে করেন নূর হোসেন।
এদিকে কাউন্সিলর নূর হোসেনের ‘রক্ষিতা’ হতে চাননি বলে সব হারাতে হয়েছে সুন্দরী জান্নাতুল ফেরদৌস নীলার সাজানো-গোছানো সংসার। নূর হোসেনের কারণেই নীলা তার স্বামীকে ডিভোর্স দিয়েছেন। এমনটাই দাবি করেছেন নীলা।
নীলার দাবি, নূর হোসেন আমাকে দেখার পর নানা ছলচাতুরির মাধ্যমে কাছে পাওয়ার সুযোগ খোঁজে। এক সময় নূর হোসেন আমাকে নিজের স্ত্রী বলে প্রচার চালাতে থাকে। সেই সঙ্গে নানা হুমকি-ধামকি দেয়। উপায় না পেয়ে তার সঙ্গে সম্পর্কে জড়িয়ে যাই।
নীলার ভাষ্যমতে, আগের স্বামীর জীবন রক্ষা ও সস্তানকে বাঁচাতে নূর হোসেনকে বিয়ে করেছি। এজন্য আমাকে অনেক কাঠখড় পোড়াতে হয়েছে। নূরের সঙ্গে হোটেল শেরাটনে স্বামী-স্ত্রী পরিচয়ে রাতযাপন। একই সঙ্গে ভারত সফরে যেতে হয়েছে। দিনের পর দিন তার অন্যায় অবিচার দেখে যেতাম। কিছুই করার ছিল না আমার। আমি আগেও বলেছি, এখনও বলছি, সাত খুনে যারা জড়িত, তাদের সবার সাজা হওয়া উচিত। সেই সঙ্গে নূর হোসেনের দৃষ্টান্তমূলত শাস্তি হওয়া উচিত।
মো. শাহাদাত হোসেন/এএম/এমএস