সাত খুনের রায় সোমবার : আসামিদের মৃত্যুদণ্ড দাবি


প্রকাশিত: ১২:০০ পিএম, ১৫ জানুয়ারি ২০১৭

নারায়ণগঞ্জের চাঞ্চল্যকর সাত খুন মামলার রায় আগামীকাল সোমবার ঘোষণা করা হচ্ছে। এ মামলার রায়ের অপেক্ষায় প্রহর গুণছে নিহতের পরিবারসহ দেশবাসী। সবারই প্রত্যাশা আসামিদের সর্বোচ্চ সাজা মৃত্যুদণ্ড দেবেন আদালত। সোমবার সকালে নারায়ণগঞ্জ জেলা ও দায়রা জজ আদালতে এ মামলার রায় ঘোষণা করা হবে।

এদিকে আলোচিত সাত খুন মামলার রায়কে সামনে রেখে নারায়ণগঞ্জে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। বিশেষ করে জেলা জজ কোর্টে বাড়তি নিরাপত্তা নেয়া হয়েছে।

এছাড়া আদালতের বাইরে পুলিশের টহল বৃদ্ধি করা হবে। রোববার সকাল থেকে দুপুর ও সোমবার সকাল থেকে নারায়ণগঞ্জ আদালতপাড়া নিরাপত্তার চাদরে ঢেকে রাখার প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন জেলা পুলিশ সুপার মঈনুল হক।    

২০১৬ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু হওয়া বিচার কাজের আইনি কার্যক্রম শেষ হয় গত ৩০ নভেম্বর। ২০১৪ সালের ২৭ এপ্রিল অপহরণের পর ২০১৫ সালের ৮ এপ্রিল চার্জশিট, ওই বছরের ১২ নভেম্বর ভারত থেকে নূর হোসেনকে দেশে আনা, আদালতে সাক্ষীদের চোখ রাঙানি, বাদী পক্ষকে হুমকি, অন্যতম আসামি র‌্যাবের চাকরিচ্যুত কর্মকর্তা তারেক সাঈদের অসুস্থতার নাটকে হাসপাতালে ভর্তি, কাঠগড়ার ভেতরে নূর হোসেনের মারামারিসহ অনেক নাটকীয়তাও হয়েছে মামলা চলাকালে।

২০১৪ সালের ২৭ এপ্রিল নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের প্যানেল মেয়র নজরুল ইসলামসহ সাতজন অপহরণ হওয়ার পর ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে যে আন্দোলন শুরু হয়েছিল তার তিনদিন পর শীতলক্ষ্যা নদীর ত্রিমোহনায় বন্দর শান্তিরচর এলাকা থেকে হাত-পা বাঁধা অবস্থায় প্রত্যেকের বিভৎস মরদেহ উদ্ধারের পর উত্তপ্ত হয়ে উঠে নারায়ণগঞ্জ।

ওই ঘটনায় নারায়ণগঞ্জ জেলা ও দায়রা জজ আদালতের একজন প্রবীণ আইনজীবী চন্দন সরকার নিহত হওয়ায় রাজপথ থেকে আদালত প্রাঙ্গণ পর্যন্ত আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে।

নারায়ণগঞ্জের আইনজীবীরা হত্যাকারীদের বিচারের দাবিতে রাজপথে নেমে আসেন। এমনকি আইনজীবীরা নারায়ণগঞ্জে নজিরবিহীন হরতাল পালন করেন।  
 
অপরদিকে অপহরণ আর সাতজন খুনের নেপথ্যে তৎকালীন সিটি কর্পোরেশনের ৪নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর সিদ্ধিরগঞ্জের ডন নূর হোসেন, র‌্যাব-১১’র সিইও লেফটেন্যান্ট কর্নেল তারেক সাঈদসহ র‌্যাবের শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তাদের জড়িত থাকার তথ্য ফাঁস হওয়ার পর বিশ্ব মিডিয়ার দৃষ্টি চলে আসে নারায়ণগঞ্জের দিকে।

নিহতদের পরিবারকে সান্ত্বনা দিতে নারায়ণগঞ্জ আসেন বিএনপি চেয়ারপারস বেগম খালেদা জিয়াসহ আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টির শীর্ষস্থানীয় নেতারা।

মামলা পরিচালনা করা রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী নারায়ণগঞ্জ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) ওয়াজেদ আলী খোকন বলেন, গত ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু হয়ে মাত্র আট মাসেই মামলার আইনি কার্যক্রম শেষ হয়েছে। ১২৭ জন সাক্ষীর মধ্যে ১০৬ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ করা হয়েছে। যুক্তিতর্ক ও আসামিদের জেরায় রাষ্ট্রপক্ষ আদালতে প্রমাণ করতে সক্ষম হয়েছি যে, মামলায় অভিযুক্তরা সবাই সাতজনকে অপহরণ থেকে শুরু করে হত্যা, গুমসহ পুরো কার্যক্রমে জড়িত।

সেহেতু আমরা আদালতের কাছে আসামিদের সর্বোচ্চ সাজা মৃত্যুদণ্ড দাবি করেছি। আমরা আশা করছি সোমবারের রায়ে আদালত সর্বোচ্চ সাজা মৃত্যুদণ্ড ঘোষণা করবেন।

বাদী পক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন খান বলেন, যেভাবে সাতজনকে হত্যা করা হয়েছে তা খুবই মর্মান্তিক ও নৃশংস। এ খুনের ঘটনায় নিহতের পরিবারগুলো এখনো কাঁদছে। সাত খুনে মামলার সুষ্ঠু বিচার হবে এ প্রত্যাশা শুধু নারায়ণগঞ্জবাসীর নয়, পুরো দেশের। আদালতের প্রতি মানুষের আস্থা রয়েছে। সেই আস্থা থেকেই আমার প্রত্যাশা আসামিদের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড হবে। কারণ সাক্ষ্যপ্রমাণে আসামিদের সম্পৃক্ততা প্রমাণিত হয়েছে।

সাত খুনের একটি মামলার বাদী নিহত আইনজীবী চন্দন সরকারের জামাতা ডা. বিজয় কুমার পাল বলেন, আসামিদের সর্বোচ্চ সাজা মৃত্যুদণ্ড প্রত্যাশা করছি।

সাত খুনের ঘটনায় নিহত নজরুল ইসলামের স্ত্রী সেলিনা ইসলাম বিউটি একটি মামলার বাদী। তিনি বলেন, সাত খুনের পর থেকেই বিচার চাওয়ায় আমাকে ও আমার পরিবারের লোকজনদের নানাভাবে হুমকি দেয়া হয়েছে। তার পরও আমরা মামলার কার্যক্রম চালিয়েছি। আমরা চাই আসামিদের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড যেন দেন আদালত।

২০১৪ সালের ২৭ এপ্রিল ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লিংক রোডের খান সাহেব ওসমানী স্টেডিয়ামের সামনে থেকে নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের তৎকালীন প্যানেল মেয়র নজরুল ইসলাম, তার বন্ধু মনিরুজ্জামান স্বপন, তাজুল ইসলাম, লিটন ও গাড়িচালক জাহাঙ্গীর আলম এবং আইনজীবী চন্দন কুমার সরকার ও তার গাড়িচালক ইব্রাহীম অপহৃত হন।

পরে ৩০ এপ্রিল শীতলক্ষ্যা নদী থেকে ছয়জনের ও ১ মে একজনের মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। ওই ঘটনায় ফতুল্লা মডেল থানায় দুটি মামলা হয়। একটি মামলার বাদী নিহত অ্যাডভোকেট চন্দন সরকারের জামাতা বিজয় কুমার পাল। অপর মামলার বাদী নিহত নজরুল ইসলামের স্ত্রী সেলিনা ইসলাম বিউটি।

দুটি মামলার তদন্ত শেষে ২০১৫ সালের ৮ এপ্রিল নূর হোসেন, র‌্যাবের সাবেক তিন কর্মকর্তাসহ ৩৫ জনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দেন তদন্তকারী কর্মকর্তা। এতে দুটি মামলায় সাক্ষী করা হয়েছে ১২৭ জন করে। মামলায় গ্রেফতার রয়েছেন ২৩ জন। আর পলাতক ১২ জন।

আরএআর/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।