ফ্রিল্যান্সিং ভাগ্য বদলে দিয়েছে জান্নাতের
“ঘরে বসে আয়” কথাটি আশ্চর্য হলেও সত্য। একটি ডেক্সটপ বা ল্যাপটপ এবং ইন্টারনেট সংযোগ দিয়ে ফ্রিল্যান্সিং করে ঘরে বসে আয় করে অনেকেই এখন স্বাবলম্বি হচ্ছেন। চাকরির পেছনে না দৌঁড়ে এই পেশায় করছেন নিজের ভাগ্যের পরিবর্তন।
তেমনি একজন নওগাঁ শহরের হাট-নওগাঁর মেয়ে জান্নাত হোসেন। মফস্বলের এই নারী ফ্রিল্যান্সিং করে নিজের ভাগ্যের পরিবর্তন ঘটিয়েছেন। পরিবারের অর্থনৈতিক দিকটায় অবদান রাখছেন।
পড়াশুনা শেষ হওয়ার পূর্বেই পারিবারিকভাবে বিয়ে হয় জান্নাতের। বিয়ের পর পড়াশোনা শেষ করেন তিনি। এরপর আর চাকরি না খুঁজে তিনি বেছে নেন ফ্রিল্যান্সিং পেশাকে।
গত দেড় বছর ধরে কাজ করছেন ফ্রিল্যান্সার হিসেবে। ফ্রিল্যান্সিং করে তার আয়ের কথা শুনে অনেক ছেলে-মেয়েদের মধ্যে ফ্রিল্যান্সিংয়ের প্রতি কাজের আগ্রহ বেড়েছে।
নওগাঁ শহরের বাটার মোড়ে ক্রিপ্টন আইটি নামের একটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান আছে জান্নাত হোসেনের স্বামীর। কম্পিউটার ব্যবসা থাকার সুবাদে এই কাজে অনেক সুযোগ-সুবিধা তিনি পান বলে জানান। ফ্রিল্যান্সিংয়ের কাজের জন্য যখন কর্মীর প্রয়োজন হয় তখন কম্পিউটার ও ইন্টারনেট সংযোগ আছে এবং এই ধরনের কাজ করতে পারবে এমন ছেলে-মেয়ে আমি খুব সহজেই পেয়ে যাই এবং তাতে আমি আমার প্রতিটি প্রজেক্ট সঠিক সময়ে শেষ করতে পারি বলে জানান জান্নাত।
তিনি বলেন, ফ্রিল্যান্সিং করার পূর্বে আমার একটি কম্পিউটার ট্রেনিং সেন্টার ছিল। সেখানে আমিসহ আরো ২ জন শিক্ষক নিয়ে আমরা অনেক ছেলে-মেয়েদের কম্পিউটার ও ইন্টারনেট বিষয়ে প্রশিক্ষণ দিয়েছি। আমাদের প্রতিষ্ঠান থেকে কম্পিউটার ও ইন্টারনেটের যাবতীয় বিষয় সংক্রান্ত প্রশিক্ষণ নিয়ে অনেকেই এখন দেশে ও প্রবাসে চাকরি করছেন।
অন্য পেশা থাকতে ফ্রিল্যান্সিং করে আয়ের বিষয়ে তিনি বলেন, আমেরিকাতে আমার এক আত্মীয়ের সাথে ফোনালাপের সময় তিনি আমাকে ফ্রিল্যান্সিংয়ের ব্যাপারে বলেন এবং এই বিষয়ে পরামর্শ দেন। তারপর থেকেই আমি আজ অবধি কাজ করে চলছি।
কাজ পাওয়া ও আয় রোজগারের বিষয়ে তিনি জানান, প্রথম যখন কাজ পেতে বিট করেছিলাম তখন কাজ পাচ্ছিলাম না। কাজ পেতে প্রায় তিন মাসের মতো সময় লেগেছিল। একটি কাজ পেয়েছিলাম ২০ ডলারের। এখন দক্ষতার সাথে কাজ করে যাচ্ছি এবং প্রতি মাসে প্রায় ১৫/২০ হাজার টাকা আয় করছি।
চাকরির পাশাপাশিও ফ্রিল্যান্সিং করা যায়। আবার অনেকে শুধু মাত্র ফ্রিল্যান্সিংকেই পেশা হিসেবে বেছে নিয়েছেন। অনেক বেকার ছেলেমেয়েরাই কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করছে এই পেশার মাধ্যমে।
জান্নাত যাদেরকে ফ্রিল্যান্সিং প্রশিক্ষণ দিয়েছেন তাদেরকে সঙ্গে নিয়েই কাজ করছেন।
কাজের কৌশলগত বিষয়ে তিনি বলেন, কিভাবে কাজ পেতে হয় এবং ক্লায়েন্ট কি বলতে চায় তা বুঝে উত্তর দিতে হবে। এতে কাজ পাওয়ার সম্ভবনা বেশী থাকে। এছাড়া কাজ ভালো করে দিতে পারলে ক্লায়েন্ট খুশি হয়ে কাজের যে রেট ছিল তার চেয়ে অনেক সময় বেশি সম্মানী দেয়। ক্লায়েন্টদের সাথে ভালো সম্পর্ক হয়ে গেলে পরবর্তীতে আবারও কাজ পাওয়া সহজ হয়।
তিনি বলেন, আমি কাজ শুরু করেছিলাম কোনো প্রশিক্ষণ ছাড়াই। বর্তমানে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান “ভিলেজ ইনফো”র (এসইও) উপর প্রশিক্ষণ নিয়েছি। তবে ভালো প্রশিক্ষণ পেলে আমি আরও ভালো কাজ করতে পারব আশা করছি। আউটসোর্সিংয়ের উপর অবশ্যই প্রশিক্ষণের প্রয়োজন আছে। প্রশিক্ষণ পেলে আরও ভালো কাজ করা সম্ভব। আউটসোর্সিং এর ওয়েব সাইটগুলোতে প্রচুর কাজ আছে। শুধু ভালো দক্ষতা থাকলে উপার্জন করা সম্ভব। মেয়েদের জন্য এটি খুব ভালো একটি পেশা।
বর্তমানে জান্নাত শুধু আউটসোর্সিং নিয়েই কাজ করছেন। নিজে প্রশিক্ষণ নিয়ে অন্যদেরও প্রশিক্ষণ দিচ্ছেন।
পেশা হিসেবে ফ্রিল্যান্সিং বিষয় নিয়ে জান্নাতের ভাষ্য হলো, আমি পেশা হিসেবে বেছে নিয়েছি কারণ মেয়েদের জন্য এটি একটি আধুনিক যুগোপযোগী পেশা। যার মাধ্যমে ঘরে বসেই বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা সম্ভব। এই কাজ করতে গিয়ে আমি পারিবারিক ভাবে খুব সমর্থন পেয়েছি। আমার স্বামী, শ্বশুর, শ্বাশুড়ি আমাকে খুব সহযোগীতা করে বলেই আমি কাজ করতে পারছি। ফ্রিল্যান্সিং করে মেয়েরা ঘরে বসে আয় করছে যা নিঃসন্দেহে একটি চাকরি বা ব্যবসার চেয়ে ভালো বলে আমি মনে করি। শুধু ধৈর্য্য ধরে কাজের সাথে লেগে থাকতে হবে। বাংলাদেশের ইন্টারনেট খরচ অন্যান্য দেশের তুলনায় বেশি। ইন্টারনেট খরচ কমানোর দাবিতে সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।
এমজেড/এমএএস/পিআর