মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি চান রহিমা বেওয়া


প্রকাশিত: ০৪:৫৯ এএম, ২৩ ডিসেম্বর ২০১৬

স্বাধীনতার ৪৫ বছর পার হলেও অনেক বীরাঙ্গনা এখনো স্বীকৃতি পাননি। তেমনি কুড়িগ্রামের দেবালয় গ্রামের ৬৫ বছর বয়সী বিধবা রহিমা বেওয়ার বীরাঙ্গনা স্বীকৃতি মেলেনি। দেশের জন্য সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকার করেও আজ পেটে ভাত নেই, অনাহারে-অর্ধাহারে, রোগে-শোকে দিন কাটছে রহিমার। সেই বিভীষিকাময় দিনের কথা মনে পড়লেই তার গা শিউরে ওঠে, দেই চোখের কোণ বেয়ে গড়িয়ে পড়ে অশ্রু।

লোকলজ্জার ভয়ে এতদিন মুখ না খুললেও সরকারের মহতি উদ্যোগের কারণে জীবনের শেষ সময়ে এসে মুক্তিযোদ্ধার সম্মান নিয়ে কবরে যেতে চান রহিমা বেওয়া। জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিলের (জামুকা) ৩৭তম সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী দেশের ২৪ জন বীরাঙ্গনাকে মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি দেয়া হয়। এর মধ্যে কুড়িগ্রামের ১০ জন বীরাঙ্গনাকে দেয়া হয় মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি। এতে রহিমার বুকেও আশার সঞ্চার হয়েছে। তার শেষ ইচ্ছা মৃত্যুর আগে সরকারিভাবে মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি।   

প্রত্যক্ষদর্শী কুড়িগ্রাম জেলা কমিউনিস্ট পার্টির সাবেক সভাপতি ও সরকারি মহিলা কলেজের শিক্ষক মাহাবুবুর রহমান বলেন, ১৯৭১ সালের আগস্ট মাসের শেষ দিকে বিকেলে পাকবাহিনীরা দেবালয় গ্রামের মধ্যে তাণ্ডব চালায়। এসময় তারা প্রায় ৭০/৮০টি ঘর জ্বালিয়ে দেয়। পরদিন আবার ওই এলাকায় পাকবাহিনীর চার-পাঁচজনের একটি দল খুতুব উদ্দিনের বাড়ির দিকে যায়। বাড়িতে প্রবেশ করা দেখে আমি চিৎকার করলে সবাই পালাতে শুরু করে। এ সময় রহিমা ইন্দ্রার পাড়ে এসে তাদের হাতে ধরা পড়ে। রহিমাকে পাকবাহিনীরা তুলে নিয়ে খুতুব উদ্দিনের ঘরে নিয়ে পালাক্রমে পাশবিক নির্যাতন চালায়। ঘটনার সময় রহিমার চিৎকার আর পাকবাহিনীর উল্লাসের শব্দ শুনতে পাই আমি পাশের জঙ্গল থেকে।

প্রতিবেশী পাঙ্গা উচ্চ বিদ্যালয়ের সাবেক সিনিয়র শিক্ষক তসর উদ্দিন জানান, রহিমার স্বামী ওমর আলী ছিলেন একজন চায়ের দোকানদার। কাঁঠালবাড়িতেই ছিল তার ছোট্ট একটি দোকান। ২০০৯ সালে হাঁপানি রোগে আক্রান্ত হয়ে ওমর আলী মারা যান। তাদের তিনজন ছেলে-মেয়ে। এর মধ্যে ছোট্ট ছেলেটি ৯ বছর বয়সে রক্ত আমাশয় মারা যায়। বড় মেয়ে পারুল বেগম (৩৫) ও ছোট রমিছা বেগমের (৩২) বিয়ে দিয়ে দেন। এরপর থেকে রহিমা বাড়িতে একাই থাকেন। এখন  প্রতিবেশীর সহায়তা আর ভিক্ষাবৃত্তি করেই দিন চলে রহিমার। তাকে একাত্তরের বীরাঙ্গনা হিসেবে এলাকার সবাই জানে।

জেলার প্রথম পতাকা উত্তোলনকারী বীরপ্রতীক আব্দুল হাই সরকার বলেন, জেলায় ৬১ জন বীরাঙ্গনা সরকারের কাছে আবেদন করলেও ১০ জন বীরাঙ্গনা মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি পেয়েছেন। এমন আরো অনেকেই আছেন, যারা শুধু লজ্জা আর সংসার বাঁচানোর জন্য এতদিন নিজেদের আড়াল করে রেখেছিলেন । তিনি সরকারের কাছে সঠিকভাবে যাচাই-বাছাই করে বীরাঙ্গনাদের মুক্তিযোদ্ধার খেতাব দিয়ে সম্মানিত করার দাবি জানান।

এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক খান মো. নুরুল আমিন জানান, জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিলের (জামুকা) ৩৭তম সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী দেশের ২৪ জন বীরাঙ্গনাকে মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি দেয়া হয়। এর মধ্যে কুড়িগ্রামের ১০ জন বীরাঙ্গনা রয়েছেন। তবে যারা বাদ পড়েছেন কিংবা নতুন কেউ বীরাঙ্গনা হিসেবে আবদেন করতে চান তারা সঠিক তথ্য ও প্রমাণাদিসহ উপজেলা কমিটি বরাবর আবেদন করবেন। এরপর সেখান থেকে জেলা কমিটির কাছে আসলে আমরা সেগুলো যাচাই-বাছাই করে মন্ত্রণালয়ে পাঠানোর ব্যবস্থা নেব।

আরএআর/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।