শুকিয়ে যাচ্ছে তিস্তা : দুশ্চিন্তায় কৃষক


প্রকাশিত: ০৭:২০ এএম, ২০ ডিসেম্বর ২০১৬

প্রতিদিন উজান থেকে পানির প্রবাহ কমতে থাকায় বাংলাদেশের ডালিয়া পয়েন্টে তিস্তা নদীর পানি প্রবাহ অব্যাহতভাবে শুকিয়ে যেতে শুরু করেছে। ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহের পানি প্রবাহ কমতে থাকায় আগামী জানুয়ারিতে সেচ নির্ভর বোরো আবাদে তিস্তা ব্যারেজ সেচ প্রকল্পের চাহিদা মোতাবেক পানি পাবে কিনা এ নিয়ে সঙ্কায় রয়েছেন কমান্ড এলাকার কৃষকরা।

এদিকে নদীতে প্রয়োজনীয় পানির অভাবে তিস্তা সেচ প্রকল্পের আওতায় পানি উন্নয়ন বোর্ড আসন্ন বোরো মৌসুমে মাত্র আট হাজার হেক্টর জমিতে সেচ প্রদানের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে।

সোমবার তিস্তা ব্যারেজ সেচ প্রকল্প এলাকা ঘুরে কৃষক ও ডালিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে এ চিত্র পাওয়া গেছে।

সরেজমিনে দেখা যায়, উজানের প্রবাহ না থাকায় তিস্তা ব্যারেজ পয়েন্টে নদীর পানি প্রতিদিন কমছে। ফলে নদীর উজান ও ভাটি এলাকা ধু-ধু বালুচরে পরিণত হয়েছে। সরু নালার আকার ধারণ করেছে তিস্তার স্রোতধারা। ফলে আসন্ন সেচ মৌসুমে সেচ নিয়ে চরম দুশ্চিন্তায় পড়েছেন উত্তরাঞ্চলের কৃষকরা।

গত এক সপ্তাহ আগেও ওই পয়েন্টে পানি প্রবাহ ছিল ৪ হাজার কিউসেক। এখন সেটি এসে দাঁড়িয়েছে ১২শ কিউসেকে। তাও প্রতিদিন পানি প্রবাহ কমছেই।

Nilphamary

একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র জানায়, ডালিয়া পয়েন্টের তিস্তা ব্যারেজ এলাকায় নদীর উজানের প্রবাহ ঐতিহাসিক গড় প্রবাহের (১৯৭৩-১৯৮৫ সাল পর্যন্ত) তুলনায় গতবারের মতো এবারো ১০ শতাংশে নেমে এসেছে।

সূত্র মতে, ২০০১ সাল থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত তিস্তা সেচ প্রকল্পের কমান্ড এলাকায় ৬৫ হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে সেচ প্রদান করা হয়েছিল। ওই সময় এই সেচের ক্যানেলের মাধ্যমে পানি সরবরাহ হত নীলফামারী, ডিমলা, জলঢাকা, কিশোরীগঞ্জ, সৈয়দপুর, রংপুর জেলার তারাগঞ্জ, গঙ্গাচড়া ও দিনাজপুর জেলার পার্ব্বতীপুর ,খানসামা, চিরিরবন্দর পর্যন্ত।

কিন্তু ২০১১ সালের পর থেকে শুস্ক মৌসুমে উজানের পানি প্রবাহ এতটাই নেমে আসে যে, সে সময় ২৮ হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে সেচ প্রদানের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হলেও বাস্তবে তা সম্ভব হয়নি।

পাউবোর সূত্রে জানা যায়, উজান হতে নদীর পানির প্রাপ্ততা না পাওয়া যাওয়ায় গত বছর (২০১৫) বোরো মৌসুমে আট হাজার হেক্টর জমিতে সেচ প্রদানের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয় এবং সাড়ে ১০ হাজার হেক্টর পর্যন্ত সেচ দেয়া সম্ভব হয়েছিল।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা রাফিউল বারী জাগো নিউজকে জানান, চলতি মৌসুমে ১ জানুয়ারি থেকে বোরো মৌসুমের জন্য কৃষকদের সেচ প্রদান কার্যক্রম শুরুর সম্ভাব্য দিন ধার্য করে এবারো আট হাজার হেক্টর জমিতে সেচ প্রদানের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।

এ ক্ষেত্রে সেচ দেয়ার স্থানগুলো ধরা হয়েছে নীলফামারী সদরে আটশত হেক্টর, ডিমলা উপজেলার ৫ হাজার হেক্টর, জলঢাকা উপজেলায় ২ হাজার হেক্টর ও কিশোরীগঞ্জ উপজেলায় ২০০ হেক্টর। তবে উজানের পানি বেশি পাওয়া গেলে সেক্ষেত্রে সেচ প্রদানে জমির পরিমাণ বৃদ্ধি করা হবে।

Nilphamary
 
ডিমলা উপজেলার নাউতরা ইউনিয়নের সাতজান গ্রামে তিস্তা সেচ প্রকল্পের প্রধান খালের পাশের কৃষক আবুল কালাম জাগো নিউজকে অভিযোগ করে বলেন, উজানের প্রবাহ না থাকায় তিস্তা সেচ প্রকল্প আগের মতো পানি দিতে পারে না। ফলে নিজস্ব সেচ যন্ত্র দিয়ে এক বিঘা জমিতে বোরো আবাদ করতে খরচ হয় ৫ হাজার টাকা।


পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, ২০১২ সাল পর্যন্ত শুস্ক মৌসুমে প্রথম তিন মাসে গড়ে সর্বোচ্চ তিন হাজার থেকে সর্বনিম্ন ৯০০ কিউসেক, ২০১৩ সালের প্রথম তিন মাসে গড়ে সর্বোচ্চ তিন হাজার থেকে সর্বনিম্ন দেড় হাজার, ২০১৪ সালের প্রথম তিন মাসে সর্বোচ্চ দুই হাজার ৭০০ থেকে সর্বনিম্ন ৩০০ কিউসেক ও ২০১৫ সালে সর্বোচ্চ এক হাজার ২শ থেকে সর্বনিম্ন ৫০০ কিউসেক পানি পাওয়া গেছে।

এছাড়া ২০১৬ চলতি ডিসেম্বরে এখন ডালিয়া তিস্তা ব্যারেজ পয়েন্টে মঙ্গলবার পর্যন্ত পানি প্রবাহ এক হাজার ২০০ কিউসেক ছিল। তবে প্রতিদিন উজানের পানি কমছে।

পানি উন্নয়ন বোর্ড ডালিয়া বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মোস্তাফিজার রহমান জাগো নিউজকে বলেন, উজান থেকে তিস্তার পানি আসা কমে যাওয়ায় বোর্ড মিটিং এ চলতি বোরো মৌসুমে আট হাজার হেক্টর জমিতে সেচ প্রদানের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।  

এদিকে পানি উন্নয়ন বোর্ডের উত্তরাঞ্চলীয় পরিমাপ বিভাগের সূত্র মতে, শুষ্ক মৌসুমে নদীর পানি কমবে বাড়বে এটি স্বাভাবিক ব্যাপার। তারপরও তিস্তার পানি প্রবাহ রেকর্ড পরিমাণ কমছে। নদীর স্বাভাবিক প্রবাহ ধরে রাখতে তিস্তা ব্যারেজের সেচ প্রকল্পের জন্য ১০ হাজার কিউসেক পানি প্রয়োজন।

এফএ/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।