আশুগঞ্জে সরকারি চাল সংগ্রহের নামে বাণিজ্য
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জ খাদ্য গুদামে সরকারি চাল সংগ্রহের নামে কমিশন বাণিজ্যের অভিযোগ উঠেছে। নতুন আমন মৌসুমে শুরু হওয়া চাল সংগ্রহ অভিযানে আশুগঞ্জ খাদ্য গুদাম কর্তৃপক্ষ এবারও প্রতি কেজি চালে ৮০ পয়সা থেকে ১ টাকা পর্যন্ত কমিশন আদায় করছে বলে অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগীরা।
এ ছাড়া মিল চুক্তি ও মিল লাইসেন্স নবায়ন করার জন্য প্রতি মিল থেকে ১০-১৫ হাজার টাকা উৎকোচ ও ভুয়া মিলের নামে বরাদ্দ দেয়ার অভিযোগও রয়েছে খাদ্য গুদাম কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা থেকে চলতি আমন চাল সংগ্রহ অভিযানে সিদ্ধ চাল ৫ হাজার ৫০৩ মেট্রিক টন ও আতব চাল ১২ হাজার ৪৪০ মেট্রিক টন চাল সংগ্রহ করবে সরকার। জেলার মোট বরাদ্দের ৪ ভাগের ৩ ভাগই নেয়া হয় আশুগঞ্জ থেকে।
এর মধ্যে আশুগঞ্জের স্থানীয় বিভিন্ন চাতাল কল থেকে ৩ হাজার ৯০১ মেট্রিক টন সিদ্ধ ও ১১ হাজার ১২৩ মেট্রিক টন আতব চাল সংগ্রহ করার কথা রয়েছে।
সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, চলতি বছর সরকারিভাবে সিদ্ধ চালের দাম প্রতি কেজি ৩৩ টাকা ও আতব চাল প্রতি কেজি ৩২ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। তবে সরকারি মূল্য অনুযায়ী সিদ্ধ চাল ৩৩ টাকা হলেও আশুগঞ্জ খাদ্য গুদাম কর্তৃপক্ষ স্থানীয় মিল মালিকদের সঙ্গে সখ্যতা করে নিম্নমানের চাল সংগ্রহ করছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
এ ছাড়াও ২৮-৩০ টাকা মূল্যের চাল সংগ্রহ করা হচ্ছে ৩৩ টাকার দরে। ফলে দেদারসে চলছে চাল দেয়ার নামে খাদ্য গুদাম কর্তৃপক্ষের কমিশন বাণিজ্য। এ কমিশনের টাকা সংগ্রহ করছেন মিল মালিকরা। ফলে প্রতি বছর কোটি টাকার কমিশন বাণিজ্য চলে আশুগঞ্জ খাদ্য গুদামে।
কমিশনের এ টাকার ভাগ যাচ্ছে উপজেলা থেকে শুরু করে জেলা ও মন্ত্রণালয় পর্যন্ত। অভিযোগ রয়েছে, একটি সিন্ডিকেটের মাধ্যমে চাল সংগ্রহ অভিযান চালায় আশুগঞ্জ খাদ্য গুদাম। এ সিন্ডিকেটে উপজেলা আওয়ামী লীগসহ বিভিন্ন রাজনৈতক দলের শীর্ষ নেতাদের নামও রয়েছে।
তবে ভয়ের কারণে এসব সিন্ডিকেটের ব্যাপারে মুখ খোলার সাহস পান না কেউ। বিষয়টি নিয়ে দেশের একটি জাতীয় গোয়েন্দা সংস্থা তদন্ত করে অভিযোগের পাওয়ায় ১০-১৫টি মিলের লাইসেন্স বাতিলসহ ভাল চাল সংগ্রহ, কমিশন বাণিজ্য বন্ধ এবং দোষী মিল মালিক ও খাদ্য গুদামের অসাধু কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রেহণের জন্য সুপারিশ করে।
গোয়েন্দা সংস্থার সুপারিশের জের ধরে আশুগঞ্জ উপজেলা খাদ্য কর্মকর্তা আবদুস সালাম ও খাদ্য গুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা গিয়াস উদ্দিন পাটোয়ারীকে অন্যত্র বদলি করা হলেও অভিযুক্ত মিল মালিক কিংবা মিলগুলোর বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি খাদ্য মন্ত্রণালয়।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন ব্যবসায়ী জানান, প্রতি কেজি চাল সরবরাহ করতে ৮০ পয়সা করে কমিশন দিতে হয় চাল সরবরাহকারীদের। সেই কমিশনের অর্থ যাচ্ছে আশুগঞ্জ উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক আবু কাউছার, খাদ্য গুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মনির হোসেনসহ চাতাল কল মালিক সমিতির কয়েকজন শীর্ষ নেতার পকেটে।
নাম প্রকাশ্যে অনিচ্ছুক কয়েকজন মিল মালিক জানান, খাদ্য গুদাম আমাদের যেভাবে চালায় আমাদেরকে সেভাবেই চলতে হয়। কমিশন বাণিজ্য নিয়ে লিখলে কোন কাজ হবে না। এ টাকার ভাগ সবাই পায়।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা চাতাল কল মালিক সমিতির সভাপতি মো. জিয়াউল করিম খান সাজু বলেন, কমিশন নেয়া হচ্ছে না। তবে এবার চালের দাম বাজারে বেশি হওয়ায় কিছুটা সমস্যা হচ্ছে। চাল সংগ্রহ নিয়ে কোনো অনিয়ম বা দুর্নীতি হচ্ছে না।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে আশুগঞ্জ খাদ্য গুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. মনির হোসেন জাগো নিউজকে বলেন, আমরা গতকাল (রোববার) চাল সংগ্রহ শুরু করেছি। কমিশন বাণিজ্য কিংবা নিম্নমানের চাল সংগ্রহণের অভিযোগ সত্য নয়।
কমিশন বাণিজ্য ও নিম্নমানের চাল সংগ্রহের অভিযোগ অস্বীকার করে জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক মো. সাজ্জাদ হোসেন জাগো নিউজকে বলেন, নিম্নমানের চাল সংগ্রহ ও কমিশন বাণিজ্যের অভিযোগ একেবারে মিথ্যা। স্থানীয় সাংসদ ও উপজেলা প্রশাসনের কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতেই চাল সংগ্রহ কার্যক্রম শুরু হয়েছিল।
এ ব্যাপারে জেলা প্রশাসক রেজওয়ানুর রহমান জাগো নিউজকে বলেন, অভিযোগের সত্যতা পেলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এএম/জেআই