সমুদ্রপথে মানবপাচার : বান্দরবানে জিম্মি ৫৩ পরিবার


প্রকাশিত: ০৬:৫৮ এএম, ০৭ মার্চ ২০১৫

বান্দরবানের লামা উপজেলায় গত চার মাসে ৫৩ জনকে দেশীয় দালালরা অবৈধভাবে সমুদ্রপথে মালয়েশিয়ায় পাচার করেছে। পরে পরিবারগুলোকে জিম্মি করে অর্থ আদায় করছে এসব পাচারকারীরা ।

মানবাধিকার কমিশনের বান্দরবান জেলা শাখার এক প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, মালয়েশিয়াতে ভালো বেতনে কাজের প্রলোভন দেখিয়ে লামার ফাঁসিয়াখালী ইউনিয়নের ইয়াংছা হতে ৫৩ জনকে দালালরা ট্রলারযোগে টেকনাফ হয়ে অবৈধ পথে মালয়েশিয়া পাঠায়। পরে দেশীয় মানব পাচারকারীরা বিদেশি দালালের মাধ্যমে মোবাইল যোগে তাদের স্ত্রী ও পরিবার পরিজনদের কাছ থেকে মোবাইলের মাধ্যমে লাখ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করছে ।

প্রতিবেদন আরও বলা হয়, মালয়েশিয়া ও থাইল্যান্ড পয়েন্টে পাচার হওয়া লোকজন অনেকে নিরাপত্তাহীনতার মাঝে মৃত্যুর মুখে মানবেতর জীবন যাপনসহ অনেকে বিদেশের কারাগারে বন্দী রয়েছেন।

ফাঁসিয়াখালীর রুবি আক্তার জানান, বেশি টাকা আয়ের কথা বলে আমার স্বামীকে দালালরা মালয়েশিয়ায় নিয়ে গেছে। স্বামী বেঁচে আছে কিনা জানিনা।

পাচার হয়ে যাওয়া অনেকের পরিবারের সাথে কথা বলে জানা যায়, সহায় সম্পত্তি বিক্রি করে দালালদের অর্থ পরিশোধ করছে অনেকে। এরপরও নির্যাতনের হাত থেকে রেহায় পাচ্ছে না কেউ। অনেকে পরিবারের সাথে যোগাযোগ বন্ধ করে দিয়েছে। হদিস না পেয়ে ধারণা করা হচ্ছে তাদের হত্যা করা হয়েছে ।

এছাড়াও আরও জানা যায়, ভুক্তভোগীরা বিষয়টি স্থানীয় প্রশাসনের কাছে অবহিত করলেও কোনো প্রতিকার পাচ্ছে না ।

গত ১২ জানুয়ারি লামা উপজেলার ফাঁসিয়াখালি এলাকার লায়লা বেগম তার স্বামী নুরুল ইসলামকে সহায় সম্পত্তি বিক্রি করে স্থানীয় দালাল বজল আহম্মেদকে প্রায় ২ লক্ষ টাকা পরিশোধ করে মালয়েশিয়ার পাঠায়। ২৯ জানুয়ারি থাইল্যান্ড পৌঁছানোর পর থেকে তার উপর নির্যাতন শুরু হয়।

লায়লা বেগম জানান, অর্থ উপার্জনের জন্য স্বামীকে মালয়েশিয়া পাঠানো হয়েছে। ফোনে কান্নাকাটি করে বারবার দালালদের অমানুষিক নির্যাতনের কথা বলছে, আর টাকা পরিশোধের কথা বলছে।

লামার ফাঁসিয়াখালী রোজিনা বেগম জানান, বেশি টাকা আয়ের কথা বলে আমার স্বামীকে দালালরা মালশিয়ায় নিয়ে গেছে। এখন তার কোনো হদিস নেই ।

পাচার হয়ে যাওয়া ৫৩ জনের সবাই লামা উপজেলার হিমছড়ি, ভিলিজারপাড়া, পোয়াংবাড়ি, বাজারপাড়া, মেম্বারপাড়া, কাঁঠালছড়া, শামুকছাড়া, বদুরঝিড়ি, ইয়ংছাবাজার, ঠান্ডাঝিড়িসহ বিভিন্ন এলাকার বাসিন্দা। তাদের মধ্যে উপজেলার ইয়াংছা মৌজার হিমছড়ি এলাকার বজল আহাম্মদ, সাবেক চেয়ারম্যান কামাল উদ্দিনের পুত্র কাফি উদ্দিন, শামুকছড়ার জমির উদ্দিন এবং কক্সবাজার চকরিয়ার মোজাফফর, জসিম উদ্দিন, ভিলিজারপাড়ার আব্দু শুক্কুর বিভিন্ন প্রলোভন দেখিয়ে ৫৩ জনকে মালেয়শিয়া নিয়ে যায়। বজল স্থানীয় যুবলীগের সাবেক সদস্য।

ফাসিঁয়াখালী ইউনিয়নের ইয়ংছা এলাকার বাসিন্দা নবী হোসেন তার ভাই বেলাল উদ্দিনকে মালয়েশিয়া পাঠান। কিন্তু ভাইয়ের কোনো হদিস না পেয়ে গত ২২ ফেব্রুয়ারি লামা থানায় পাচারকারী বজল আহম্মাদ, নুরুল ইসলাম, রুবি আক্তার, আবু জাকেরকে আসামি করে একটি মামলা দায়ের করেন।

আরও জানা গেছে, উক্ত মামলায় বজল আহম্মাদকে গ্রেফতার করে পুলিশ। পাচারকারী দলের অন্য তিন সদস্য এলাকায় প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়ালেও পুলিশ তাদের আটক না করায় ভুক্তভোগীরা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে।

এ ব্যপারে মামলা বাদী নবী হোসেন বলেন, অপরাধীরা প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছে। পুলিশ তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা না নেওয়ার কারণে অপরাধীরা বিভিন্ন সময় হুমকি দিচ্ছে ।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ মানবাধিকার কমিশনের বান্দরবান জেলার সাধারণ সম্পাদক মো. রুহুল আমিন বলেন, মানবপাচারে সাতে জড়িত পাঁচজনকে বিবাদী করে একটি আবেদনপত্র কমিশনের দাখিল করা হয়েছে। কমিশনের তথ্যানুসন্ধানে অভিযোগের প্রাথমিক সত্যতা পাওয়া গেছে। এ বিষয়ে প্রশাসন দ্রুত পদক্ষেপ না নিলে পরিবারগুলো আরো নিঃস্ব হয়ে যাবে ।

লামা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সিরাজুল ইসলাম জানান, তদন্তপূর্বক জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে ।

এসএইচএ/বিএ/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।