পায়রা বন্দরে ড্রেজিং শুরু : বহির্নোঙরে পণ্য খালাস


প্রকাশিত: ১১:৫৭ এএম, ১৪ ডিসেম্বর ২০১৬

প্রতিদিনই কোনো না কোনো অগ্রগতি হচ্ছে পায়রা সমুদ্র বন্দরের। বন্দরের উন্নয়নে পরিকল্পনা গ্রহণ ও দেশি-বিদেশি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সমজোতা চুক্তি যেমন চলমান, তেমনি বন্দরের বহির্নোঙরে নিয়মিত পণ্য খালাস কার্যক্রমও চলছে।

ইতোমধ্যে বন্দর থেকে দেশের অভ্যন্তরে পণ্য পরিবহন সহজ করতে তেঁতুলিয়া, বুড়াগৌরঙ্গ ও কাজল নদীতে ড্রেজিং কাজ শুরু করেছে বন্দর কৃর্তপক্ষ। সার্বিকভাবে ২০২৩ সাল নাগাদ বন্দরটি পূর্ণাঙ্গ বন্দর হিসেবে ব্যবহৃত হবে বলে জানায় বন্দর সংশ্লিষ্টরা।

জানা গেছে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১৩ সালের ১৮ নভেম্বর দেশের তৃতীয় সমুদ্রবন্দর হিসেবে পায়রা বন্দরের উদ্বোধন করেন। ২০১৬ সালের ১৩ আগস্ট ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে পায়রা বন্দরের অপারেশন কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী।

এরপর থেকে শুরু হয় বন্দরের বহির্নোঙরে পণ্য খালাস কার্যক্রম। ইতোমধ্যে বন্দরে প্রায় ৮টি বিদেশি জাহাজ পণ্য খালাস করেছে। পাশাপাশি বন্দরের বহির্নোঙরে খালাস হওয়া পণ্য নৌপথে দেশের বিভিন্ন স্থানে পরিবহন করছেন ব্যবসায়ীরা।

এসব পণ্য পরিবহন করতে বিভিন্ন স্থানে ডুবোচরের কারণে নাব্যতা সঙ্কটে পড়তে হয় পণ্যবাহী এসব নৌযানকে। এ কারণে বাংলাদেশ নৌ-বাহিনীর একটি দল সার্ভের মাধ্যমে পায়রা বন্দর টু ঢাকা নৌরুটে ৫ মিটারের কম গভীরতা রয়েছে এমন ৫টি স্পটকে চিহ্নিত করে তা খননের জন্য সরকারের কাছে ফান্ডের জন্য আবেদন করেছে। এরই ধারাবাহিকতায় একনেক সভায় সরকার ২৫৪ কোটি টাকার একটি প্রকল্প অনুমোদন দেয়।

পুরো নৌপথে যাতে পাঁচ মিটারের অধিক উচ্চতার জাহাজ চলাচল করতে পারে এজন্য বাংলাদেশ নৌ-বাহিনীর তত্ত্বাবধায়নে চায়না হারবার নামে একটি ড্রেজিং কোম্পানি ডিসেম্বরের প্রথম দিকে খনন কাজ শুরু করেছে।

পায়রা বন্দরের চেয়ারম্যান কমডোর মো. সাইদুর রহমান জানান, খনন কাজ শেষ হলে দিন-রাত ২৪ ঘণ্টাই এ রুটে পণ্যবাহী জাহাজ চলাচল করতে পারবে। ফলে জোয়ার-ভাটার সময় নাব্যতা সঙ্কটে তাদের কোনো সমস্যায় পড়তে হবে না। আগামী নয় মাসের মধ্যে এ ড্রেজিং কাজ শেষ হবে বলেও জানান তিনি।

গত ৮ ডিসেম্বর পায়রা বন্দরের মূল অবকাঠামো নির্মাণ, তীর রক্ষা বাঁধ ও অন্যান্য স্থাপনা নির্মাণে চীনের দুটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে তিনটি সমঝোতা স্মারকে সই করেছে বাংলাদেশ সরকার। নৌ-মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে বাংলাদেশের পক্ষে পায়রা বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান কমডোর মো. সাইদুর রহমান, চায়না হারবার ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি লিমিটেডের (সিএইচইসি) পক্ষে যুগ্ম ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম এল জেন নানহাই এবং চায়না স্টেট কনস্ট্রাকশনস ইঞ্জিনিয়ারিং কর্পোরেশন লিমিটেডের (সিএসসিইসি) পক্ষে ব্যবস্থাপনা পরিচালক লি শুজিয়াং এসব সমঝোতা স্বারকে সই করেন।

Patuakhali

দেশের তৃতীয় এ সমুদ্র বন্দরের মূল অবকাঠামোগত নির্মাণ কাজ ২০২৩ সালের মধ্যে শেষ করা সম্ভব হবে। আর পায়রা নদীর তীর রক্ষা বাঁধ নির্মাণ এবং বন্দরের আবাসন, শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবার জন্য স্থাপনা নির্মাণে সিএসসিইসির সঙ্গে বাকি দুই সমঝোতা স্মারক হয়েছে।

প্রকল্পের মোট ৯টি অংশের মধ্যে তিনটি বাস্তবায়িত হবে দুই দেশের সরকারি পর্যায়ে, অর্থাৎ জি টু জি ভিত্তিতে। বন্দর এলাকার সংযোগ সেতু, সড়ক, বন্দরের জন্য অত্যাবশ্যক অবকাঠামোসহ পয়নিষ্কাশন, জলনিষ্কাশন, আন্তঃসড়ক সংযোগ ও রেল যোগাযোগ অবকাঠামো নির্মাণের বিষয়টি মূল অবকাঠামোর মধ্যে অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।

পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলার টিয়াখালী ইউনিয়নে রামনাবাদ চ্যানেলের পশ্চিম তীরে সাত হাজার একরের বেশি ভূমিজুড়ে নির্মিত হচ্ছে পায়রা বন্দর। এতে প্রাথমিক ব্যয় ধরা হয়েছে ১ হাজার ১৪৪ কোটি টাকা।

পটুয়াখালী চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, একটা সময় ছিল যখন পায়রা বন্দরকে নিয়ে আমরা স্বপ্ন দেখতাম। তবে বর্তমান সরকার প্রধানের যোগ্য নেতৃত্ব ও যুগোপযোগী সিদ্ধান্ত গ্রহণের কারণে আমাদের সে স্বপ্ন এখন বাস্তব রূপ পাচ্ছে। ইতোমধ্যে আমরা স্থানীয় ব্যবসায়ীরা পায়রা বন্দর ব্যবহার করে বিদেশ থেকে পাথর আমদানি করছি, যা দক্ষিণ অঞ্চলের সার্বিক উন্নয়নমূলক কাজে দ্রুত সময়ে ব্যবহৃত হচ্ছে।

পায়রা বন্দর চালু হলে পটুয়াখালীসহ পুরো দক্ষিণ অঞ্চলের অর্থনৈতিক অবস্থারও আমূল পরিবর্তন ঘটবে বলে মনে করেন স্থানীয় ব্যবসায়ীরা।

মহিব্বুল্লাহ্ চৌধুরী/এএম/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।