বেঁচে থাকুক চলনবিল


প্রকাশিত: ০১:২২ পিএম, ০৬ মার্চ ২০১৫

চলন বিল একটি ইতিহাস, একটি ঐতিহ্য। বাংলাদেশে সবচেয়ে বড় বিল চলনবিল। এই বিলের বিশালত্ব, ভয়ংকরী রূপ সুদূর অতীতে মানুষের মনে যেমন ভীতি সঞ্চার করত, তেমনি চলনবিলের প্রশান্ত বুকের প্রাকৃতিক নৈসর্গিকতা রূপালী সম্পদ বিভিন্ন প্রজাতির মাছের অবাদ বিচরণ, গাংচিল, বালিহাস, পানকৌড়ি, ডাহুক আর শীত মৌসুমের অতিথি পাখিদের কলরব, নাম না জানা হাজারো পাখির নীলাকাশে উড়ে বেড়ানো, ঋষি বকের ধ্যানমগ্ন ছবি মানুষের মনে অনাবিল সুখানুভূতির সৃষ্টি করত। এ সব সৌন্দর্য দেশ বিদেশের পর্যটকদের দৃষ্টি আর্কষণ করত।

কিন্তু কালের বিবর্তনে চলনবিলের সেই রূপ আর চোখে পড়ে না। হারিয়ে যাচ্ছে চলনবিলে ইতিহাস ঐতিহ্য। নষ্ট হচ্ছে চলনবিলের জীববৈচিত্র্য, পরিবেশ। হারানো চলনবিলকে ফিরে পেতে চায় স্থানীয় মানুষেরা।

সে লক্ষেই ঐতিহ্যবাহী চলনবিলের জীববৈচিত্র্য, প্রকৃতি ও পরিবেশ রক্ষার দাবিতে স্থানীয় কৃষকরা মানববন্ধন করেছে। শুক্রবার বেলা সাড়ে ১০টার দিকে সিংড়া পরিবেশ উন্নয়ন ও প্রকৃতি সংরক্ষণ ফোরামের উদ্যেগে ডাহিয়া ইউনিয়নের বিয়াশ বাজার মোড়ে এ মানববন্ধন কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়।

এ সময় তারা চলনবিলের প্রকৃতি ও পরিবেশ রক্ষা করে ভবিষ্যত প্রজন্মের নিরাপদ বসবাস নিশ্চিত করতে সবাইকে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করার আহ্বান জানান।

এ ছাড়াও ঐতিহ্যবাহী চলনবিলের জীববৈচিত্র্য ও পরিবেশ সংরক্ষণে আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়। গত সোমবার বিকেলে নাটোরের সিংড়ায় পাখির অভয়ারণ্য হিসেবে পরিচিত আগপাড়া শেরকোল এলাকায় উত্তরবঙ্গের ৪৫টি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের সমন্বয়ে গঠিত বাংলাদেশ জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ ফেডারেশন (বিবিসিএফ) আয়োজনে মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়।

স্থানীয় একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের সহযোগিতায় সভায় নারী-পুরুষ, কিশোর, যুবকদের এই অন্দোলনের সাথে সম্পৃক্ত করার ওপর গুরুত্ব আরোপ করা হয়। চলনবিলের জীববৈচিত্র্য ও পরিবেশ সংরক্ষণের বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনা করা হয়।

সংগঠনের পক্ষ থেকে জানানো হয়, চলনবিলাঞ্চলে একটি গবেষণাগার, ইকোপার্ক ও মুভিং টাওয়ার করার পরিকল্পনা রয়েছে তাদের।

চলনবিলের উন্নয়নকে টেকসই করতে নিজেদের এখন থেকেই জীববৈচিত্র ও পরিবেশ সংরক্ষণে ঐক্যবদ্ধভাবে ঝাঁপিয়ে পড়তে হবে, দুর্বার আন্দোলন গড়তে হবে।

চলনবিলের অসংখ্য খাল ও নদী রয়েছে। এ সব খাল ও  নদী পুনঃখনন করে সংরক্ষণের উদ্যোগ নিতে হবে। এ লক্ষ্যে এ অঞ্চলের সাধারণ মানুষকে যুক্ত করে কাজ করতে হবে এমনটাই মনে করেন চলনবিলাঞ্চলের মানুষেরা।

ইতিহাস খ্যাত চলনবিল সেই আগের মত নেই। বিলের গতিশীলতা, সুবিশাল জলরাশির গভীরতা, পাখিদের কোলাহল, মৎস্য ভান্ডরের প্রাচুর্যতা সব হারিয়ে চলনবিলের জীর্ণ দশা বর্তমান প্রজন্মের কাছে যেন এক কল্প কাহিনীর রূপ নিয়েছে। শুষ্ক প্রায় চলনবিলের জীর্ণদশা দেখে বর্তমান প্রজন্মের ছেলে-মেয়েরা বিশ্বাসই করতে চায় না এখানে বহু প্রজাতির মাছ আর পাখি পাওয়া যেত। দূর ভবিষ্যতে চলনবিলের খ্যাতি ইতিহাসের পাতায় ছাড়া বাস্তবে অনুধাবন করা সম্ভব নয়। তাই চলনবিলের জীববৈচিত্র্য ও পরিবেশ সংরক্ষণে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে- চলনবিলাঞ্চলের মানুষের এই দাবি।

এলএ/পিআর

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।