সুরের মূর্ছনায় মুখরিত লালনের আখড়াবাড়ী


প্রকাশিত: ১২:২৭ পিএম, ০৫ মার্চ ২০১৫

‘মানুষ ছাড়া ক্ষ্যাপারে তুই কুল হারাবি/ মানুষ ভজলে সোনার মানুষ হবি’, এমন অজস্র ভাব সঙ্গীতের মূছনায় মুখরিত কুষ্টিয়ার কুমারখালীর ছেঁউড়িয়ায় লালনের আখড়াবাড়ী।

পাঁচ দিনব্যাপী লালন স্মরণোৎসবের দ্বিতীয় দিন বৃহস্পতিবার। হরতাল-অবরোধ উপেক্ষা করে উৎসবকে ঘিরে বাউল সম্রাট ফকির লালন সাঁইয়ের আখড়াবাড়ী এখন তার ভক্ত ও অনুরাগীদের সুরের মূর্ছনায় পূর্ণ। সাঁইজির প্রেমে মশগুল ভক্তরা অবিরামভাবে গেয়ে চলেছেন সাঁইজির অমর বাণী। কেউ বা মেতে উঠেছেন গুরুবাদি বাউল ধর্মের নিগুঢ় তত্ব কথার আলোচনা নিয়ে। আবার কেউ সহজ মানুষের সন্ধানে নিজেকে উজাড় করার জন্য সাঁইজির ধামে এসে ধ্যান জ্ঞানের সন্ধানে রয়েছেন।



আখড়াবাড়ির আঙিনা ও কালীগঙ্গা নদীর তীরে ভবের হাটে বসে ভজন-সাধনে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন আগত বাউল ভক্ত-সাধুরা। হাতে একতারা, দোতারা, খঞ্জনী, তবলা আর হারমোনিয়াম নিয়ে গলা ছেড়ে গাইছেন- পারে লয়ে যাও আমায়/, সাঁই আমার কখন খেলে কোন খেলা/, আমি অপার হয়ে বসে আছি/, সব লোকে কয় লালন কি জাত সংসারে/, জাত গেলো জাত গেলো বলে/, খাঁচার ভিতর অচিন পাখি কেমনে আসে যায়/, আপন ঘরের খবর লে না/, আমারে কি রাখবেন গুরু চরণদাসী/, মন তুই করলি একি ইতরপনা/, এই মানুষে সেই মানুষ আছে/, যেখানে সাঁইর বারামখানা/, বাড়ির কাছে আরশীনগর সেথা একঘর পড়শী বসত করে/, মিলন হবে কতদিনে-ইত্যাদি গান।

গানশেষে সাধু-গুরুরা তাদের শিষ্য-ভক্তদের গানের মর্মকথা ব্যাখ্যা করে শোনাচ্ছেন। খণ্ড-খণ্ড স্থানে গান পরিবেশনের সময় দর্শক-জনতাও নেচে-গেয়ে তাল মিলাচ্ছেন। বাউল শরফুদ্দিন শাহ বলেন, গুরুকে জানতে হলে সাঁইজিকে গুপ্ত জ্ঞান অর্জন করতে হবে।

বাউল ফিরোজ ফকির জানান, প্রতি বছর বাবার টানে আখড়ায় আসি। এখানে না গাইলে নিজের শিল্পীমনের তৃপ্তি মেটে না। এদিকে, ছেঁউড়িয়ায় লালন আখড়াবাড়িতে বুধবার দিবাগত রাতে এক অনুষ্ঠানের মধ্যে দিয়ে শুরু হয় পাঁচ দিনব্যাপী লালন স্মরণোৎসবের। অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন খুলনা বিভাগীয় কমিশনার আবদুস সামাদ। এতে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন যশোর বিজিবির রিজিওনাল কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল দেওয়ান মো. শহীদুল ইসলাম।



কুষ্টিয়ার জেলা প্রশাসক সৈয়দ বেলাল হোসেনের সভাপতিত্বে আরো বক্তব্য রাখেন কুষ্টিয়ার পুলিশ সুপার প্রলয় চিসিম, কুমারখালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সাহেলা আক্তার, লালন একাডেমির ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক সেলিম হক। অনুষ্ঠানে মুখ্য আলোচক হিসেবে লালনের জাতহীন মানবধর্ম, তার জীবন-কর্ম, ধর্ম-দর্শন, মরমিসংগীত ও চিন্তা-চেতনা নিয়ে আলোচনা করেন লালনগবেষক অধ্যাপক রবীন্দ্রনাথ বিশ্বাস। আরো আলোচনা করেন লালন মাজারের প্রধান খাদেম মহম্মদ আলী। আলোচনা শেষে মূল মঞ্চে লালন একাডেমির শিল্পীদের দলীয় সংগীতের মাধ্যমে শুরু হয় সংগীতানুষ্ঠানের। রাতভর চলে এই সংগীতানুষ্ঠান। আগামী ৮ মার্চ লালন স্মরণোৎসব শেষ হবে।

এমএএস/আরআই

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।