দোহাজারী-গুনদুম রেল লাইন : বাংলাদেশের অর্থনীতির নতুন দ্বার
৭০ বছরের জটিলতার অবসান ঘটিয়ে অবশেষে শুরু হচ্ছে চট্টগ্রামের সাথে মিয়ানমার সীমান্তবর্তী কক্সবাজারের রেল লাইন স্থাপনের কাজ। প্রকল্পের জন্য দেড়শো কোটি ডলার দেয়ার সম্মতি দিয়েছে এশিয়ান উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি)।
প্রকল্পের সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ট্রান্স এশিয়ান রেলওয়ের অংশ হিসেবে এ প্রকল্প বাস্তবায়নের মাধ্যমে পরবর্তীতে মিয়ানমার এবং চীনের সঙ্গে সংযুক্ত হলে বাংলাদেশের অর্থনীতির নতুন দ্বার উন্মোচিত হবে।
দুটি প্যাকেজে শুরু হবে এ প্রকল্পের কাজ। প্রথমে দোহাজারি থেকে কক্সবাজার এবং পরে কক্সবাজার থেকে গুনদুম পর্যন্ত রেললাইন স্থাপন করা হবে।
রেলওয়ের পুরাতন নথিপত্র পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের আগেই চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজারের রামু হয়ে তৎকালীন বার্মা পর্যন্ত আসাম বেঙ্গল রেলওয়ে লাইন সম্প্রসারণের পরিকল্পনা নেয়া হয়। ৪৭ সালে দেশ বিভক্তির পর পাকিস্তান সরকার এর জরিপও শেষ করে। কিন্তু বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর পরিকল্পনাটা অনেকটা চাপা পড়ে যায়। তবে বর্তমান সরকার এ প্রকল্পকে অগ্রাধিকার হিসেবে চিহ্নিত করে কাজ শুরুর নির্দেশ দেয়।
চলতি মাসে টেন্ডার প্রক্রিয়া শেষ হলে আগামী বছরের মার্চে আনুষ্ঠানিকভাবে আলোর মুখ দেখবে ২৮ হাজার কোটি টাকার বিশাল এ প্রকল্প। ইতোমধ্যে বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে পাঁচ হাজার কোটি টাকা অনুমোদন দেয়া হয়েছে।
দোহাজারী-কক্সবাজার রেল লাইন অতিরিক্ত প্রকল্প পরিচালক মো. মফিজুর রহমান বলেন, দোহাজারী থেকে রামু পর্যন্ত ১০১ কিলোমিটার। রামু থেকে ঘুমধুম পর্যন্ত ডুয়েল গেজ রেলপথ তৈরি করবে। পরে এই লাইন দিয়ে চিনের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করা হবে বলে জানান তিনি।
গত ২৬ সেপ্টেম্বর এ প্রকল্পের টেন্ডার আহ্বান করে রেলপথ মন্ত্রণালয়। গত ২৮ নভেম্বর টেন্ডার জমা দেয়ার শেষ দিন ছিল। ২৮ হাজার ৩৪ কোটি টাকার এ প্রকল্পের মধ্যে বাংলাদেশ সরকার জমি অধিগ্রহণ হিসেবে খরচ করবে ৪ হাজার ৯১৯ কোটি টাকা। দোহাজারী থেকে কক্সবাজার এবং কক্সবাজারের রামু হয়ে ঘুমধুম পর্যন্ত নতুন লাইন স্থাপনের জন্য বাকি টাকা খরচ করবে বিভিন্ন উন্নয়ন সংস্থা। এরমধ্যে এশিয়া উন্নয়ন ব্যাংক-এডিবি দেড়শো কোটি ডলার দেয়ার ব্যাপারে সম্মত হয়েছে।
রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের মহাব্যবস্থাপক মোহাম্মদ আবদুল হাই বলেন, এর ফেসভেলু আঠারো হাজার কোটি টাকা। এখানে জমি অধিগ্রহণ করা হবে। এতে অর্থায়ন করবে এডিবি ও বাংলাদেশ সরকার।
এ প্রকল্পের নির্মাণকালীন সময় নির্ধারণ করা হয়েছে তিন বছর। রেলওয়ে কর্মকর্তারা আশা করছেন, ২০২০ সালের শুরুতেই সম্পূর্ণভাবে চালু হবে বহুল আলোচিত এ রেলযোগাযোগ ।
জীবন মুছা/আরএআর/এমএস