এখন কী হবে মালেকা বানুর


প্রকাশিত: ০২:০৮ পিএম, ২৬ নভেম্বর ২০১৬

স্বামী মারা গেছেন সেই যুদ্ধের সময়। এরপর একে একে পাঁচ ছেলে মারা গেছেন মালেকা বানুর। এক ছেলে থাকলেও কাছে নেই দীর্ঘদিন ধরে। তাই ঠাঁই হয় গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার বরমী ইউনিয়নের কাশিজুলি গ্রামের ইদ্রিস মুন্সীর জমিতে।

৪০ বছর ধরে ইদ্রিস মুন্সীর জমিতে একটি খুপড়ি ঘর করে একাই থাকেন তিনি। জমি পাহারা দেয়ার জন্যই মূলত ইদ্রিস মুন্সী তাকে এখানে নিয়ে এসেছিলেন। কথা দিয়েছিলেন মালেকা বানুকে সেখান থেকে সামান্য জমি দেবেন। কিন্তু মুন্সী কথা রাখেননি।

সম্প্রতি মালেকা বানুর সেই খুপড়ি ঘরসহ জমি বিক্রি করে দিয়েছেন ইদ্রিস মুন্সী। এরপর থেকে মহাবিপদে পড়েছেন এই বৃদ্ধা। এখন কোথায় থাকবেন এই ভেবে সারাদিন কান্না করছেন তিনি। এতদিন সেখানে থেকে ভিক্ষা করে সংসার চালিয়েছেন তিনি। কখনো খেয়ে, কখনো আবার না খেয়ে থেকেছেন তিনি। অথচ পাননি বিধবা বা বয়স্ক ভাতার কোনো কার্ড।

Maleka

স্বামী গোলাপ জব্বারের বাড়ি ময়মনসিংহের নান্দাইল উপজেলার ধদার গ্রামে। স্বামী মারা যাওয়ার পরই মালেকা বানু চলে আসেন গাজীপুরে। তখন তার বয়স ছিল ৫০ বছর। এখন তিনি ৯০ বছরের বৃদ্ধা।

মালেকা বানু জানান, যুদ্ধের সময় সন্তানদের নিয়ে যখন আতঙ্কে দিন রাত কাটছিল ওই সময় অসুখে পড়েন স্বামী গোলাপ জব্বার। এই যুদ্ধের ফাঁকে ফাঁকেই সহায় সম্বল বেঁচে স্বামীকে চিকিৎসা করা হয়। শেষমেশ স্বামী সম্পদ দু-ই শেষ হয়ে যায়। নিরুপায় হয়ে সন্তানদের নিয়ে পাড়ি জমান শ্রীপুরের কাওরাইদে।

তিনি জানান, ছোটবেলায় দুই সন্তান আর বড় হয়ে আরো তিনজন মারা গেছে। এক ছেলে আছে। থাকে অনেক দূরে। ছেলের সংসারেও অভাব অনটন।

মালেকা বানু আরো বলেন, ইদ্রিস মুন্সী কইছিল জমি দিবে। ৪০ বছর ধরে তার সব জমি পাহারা দিছি। অহন এই খুপড়ি ঘরটাও ছাড়তে কইছে মুন্সী। এহন কই থাকবো?

মোড়ল পাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সভাপতি মো. হেলিম জানান, আমরা ছোট থাকাকালে এ অঞ্চলের ইদ্রিস মওলানা এই বুড়িকে তার সহায় সম্পত্তি পাহারা দিতে রায়েত আনেন। ৪০ বছর ধরে জমিজমা ফর (পাহারা) দিয়ে রাখছে মালেকা বানু। উল্টো যে ঘরে থাকতো সেই ঘর ছাড়ার জন্য চাপ দিচ্ছে মুন্সী। এরি মধ্যে ওই ঘরসহ জমি অন্যের কাছে বিক্রি করেছে ইদ্রিস মুন্সী।

Maleka
 
প্রতিবেশী বোরহান উদ্দিন জানান, গত বছর ওই বৃদ্ধার ঘরসহ ৭ শতাংশ জমি আমার কাছে ইদ্রিস মওলানা বিক্রি করেছে। মানবিক কারণেই অসহায় বৃদ্ধাকে বাড়ি থেকে তাড়াতে পারিনি। ওই ঘরেই থাকতে বলেছি তাকে।

বরমী ইউপি সদস্য জাকির হোসেন জানান, স্বপনের মাকে এলাকার সবাই চিনে। প্রায় ৪০ বছর ধরে এলাকায় থাকছে সে রায়েত হিসেবে। অন্যের জমিতে ঘর বেধে থাকে আর ভিক্ষা করে চলেন। এখন নব্বইয়ের বেশি বয়স হয়ে গেছে। নতুন তালিকায় তাকে একটি বয়স্ক ভাতার কার্ড করে দেওয়ার ব্যবস্থা করবেন বলেও তিনি জানান।  

বরমী ইউপি চেয়ারম্যান বাদল সরকার বলেন, খুবই অসহায় বৃদ্ধা মালেকা বানু। এমন বয়সে মানুষ শিশুর মতো হয়ে যায়। তার সেবা যত্ন দরকার হয়ে পড়ে। স্বজনহীন এ বৃদ্ধার সাহায্য প্রয়োজন।

শ্রীপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার আবদুল আউয়াল জানান, অসহায় বয়স্কদের সুবিধার জন্যই সরকার বয়স্ক ভাতা চালু করেছে। এমন অসহায় বৃদ্ধাই বয়স্ক ভাতা পাবে। ওই বৃদ্ধার খোঁজ নিয়ে সাহায্যের ব্যবস্থা করবো।

এমএএস/আরআইপি

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।