প্রাণে বাঁচলেও মৃত্যু আতঙ্ক পিছু ছাড়ছে না তাদের
প্রাণে বাঁচছেন জরিনা (২৬), কিন্তু মৃত্যু আতঙ্ক এখনো পিছু ছাড়েনি তার। চার বছর আগে এই দিনে আগুনের হাত থেকে বাঁচতে পাঁচতলা থেকে মাটিতে লাফ দিয়েছিলেন তিনি। দুই বছর ধরে স্থানীয় আরেক কারখানায় কাজ করছেন জরিনা। কিন্তু সেই দুর্বিষহ স্মৃতি কিছুতেই ভুলতে পারছেন না জরিনা বেগম।
আশুলিয়ার নিশ্চিন্তপুরে ভয়াবহ তাজরীন ফ্যাশনস অগ্নিকাণ্ডের চার বছর আজ। ২০১২ সালের ২৪ নভেম্বর সেই ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে কেড়ে নিয়েছে ১১২ জন শ্রমিকের প্রাণ। পঙ্গু হয়ে সংসারের বোঝা হয়েছেন আরো কয়েক শত শ্রমিক। যারা এখনো ভুলতে পারেননি দুর্বিষহ সেই স্মৃতি।
তাজরীন ফ্যাশনস নামের সেই আট তলা পোশাক কারখানাটি চার বছর ধরে নিশ্চিন্তপুরবাসীর কাছে এক বধ্যভূমি। আগুনে আট তলা ভবনটির প্রায় সব মালামাল পুড়ে ভস্মীভূত হয়েছে। যার চিহৃ এখনো রয়েছে ভবনটির গায়ে। ভবনের মালামালের সঙ্গে ভস্মীভূত হয়েছে সেখানে কর্মরত অধিকাংশ শ্রমিক ও তাদের স্বজনদের স্বপ্ন।
সংসারে স্বচ্ছলতা আনতে গিয়ে ওই পোশাক কারখানায় যারা কাজ করছিলেন তারা উল্টো সংসারের জন্য বোঝায় পরিণত হয়েছেন। সব হারিয়ে গত চার বছরে নিশ্চিন্তপুর ছেড়ে চলে গেছেন প্রায় সব শ্রমিক ও তাদের পরিবারের সদস্যরা। কেউবা সেখানে থেকেই আশপাশের অন্য পোশাক কারখানায় কাজ জুটে নিয়েছেন। কিন্তু অন্য শ্রমিকদের মতো স্বাভাবিক কাজের মানসিকতা আজো ফিরে পায়নি তারা। এক অজানা আতঙ্ক এখনো তাদের পিছু তাড়া করে।
ঘটনার পর বিভিন্ন তদন্ত কমিটির অনুসন্ধানেও প্রাণহানির জন্য কারখানাটির মালিকপক্ষকে দায়ী করা হয়। ইন্সুরেন্সের টাকা আদায়ের জন্য মালিকের নির্দেশনায় ইচ্ছাকৃতভাবে আগুন লাগিয়ে দেয়া হয় বলেও অভিযোগ তোলেন বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠন। এ ঘটনায় সে সময় দুইটি মামলা দায়ের করা হয়। যাতে তাজরীন ফ্যাশনসের মালিক দেলোয়ার হোসেন গ্রেফতার হন। তবে বর্তমানে তিনি জামিনে রয়েছেন। মামলা দুইটির তদন্ত এবং বিচারের ধীরগতি কারণে দোষীদের শাস্তি নিশ্চিত করা যাবে কি সে বিষয়টিও নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে বর্তমানে।
সে দিনের স্মৃতিচারণ করে জরিনা বেগম বলেন, ‘দগ দগ কইরা আগুন জ্বলছিল। সিঁড়ি দিয়ে নামতে যাইয়্যা দেখি তালা দেয়া। উপায় না পাইয়ে পাঁচতলা থেইকা লাইফা পড়ি। তারপর আর কইতে পারি না।’
ক্ষোভ প্রকাশ করে জরিনা বলেন, প্রথমবার আগুনের বিষয়টি বুঝতে পেরে শ্রমিকরা বের হতে চাইলে মালিকপক্ষের লোকজন একে গুজব বলে কাজ করতে বলে। এমনকি শ্রমিকরা যেন বের হতে না পারে সেজন্য কারখানার সিঁড়ির প্রধান ফটকেও তালা ঝুলিয়ে দেয়া হয়। এর ফলেই এতো প্রাণহানির ঘটনা ঘটে।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ গার্মেন্টস শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের সাভার উপজেলা শাখার সভাপতি সুজন বলেন, ন্যায় বিচার হয়তো পাওয়া যাবে না। চার বছরে এমন কোন আমরা দেখতে পাইনি। তাজরীন ফ্যাশনসের মালিক এখন দিব্যি ঘুরে বেড়াচ্ছেন। অথচ হতাহত শ্রমিকদের জীবনে এখনো ঘোর অন্ধকারে। পৃথিবীর প্রথম থেকেই সব ত্যাগ শ্রমিকদের স্বীকার করতে হয়। আর মালিকপক্ষ শুধু মুনাফার হিসেব কষে।
এআরএ/এআরএ/আরআইপি