মুক্তিযোদ্ধা ছেলের বিরুদ্ধে মামলা করতে চাইলেন বৃদ্ধা মা


প্রকাশিত: ১১:০৮ এএম, ১৬ নভেম্বর ২০১৬

এখনো ছেলের জন্য পথ চেয়ে আছেন ১০৬ বছর বয়সী বৃদ্ধা মজিরন বেওয়া। কিন্তু মুক্তিযোদ্ধা ও সাবেক পুলিশ কর্মকর্তা ছেলে আব্দুল মজিদ আহম্মেদ মায়ের কাছে ফিরেননি।

গত ১০ বছর আগে মায়ের কাছ থেকে চলে গেছেন ঢাকায়। স্ত্রী-সন্তান নিয়ে এখন সেখানেই থাকেন তিনি। এরপর আর একবারের জন্যও তিনি মায়ের মুখটি দেখার জন্য আসেননি। অথচ এলাকায় তিনি প্রতিনিয়ত আসচ্ছেন আবার ঢাকায় ফিরে যাচ্ছেন।

ঘটনাটি টাঙ্গাইলের ভূঞাপুর উপজেলার অর্জুনা ইউনিয়নের ভরুয়া গ্রামে। বৃদ্ধা মজিরন বেওয়া ওই গ্রামের মৃত হযরত আলী সরকারের স্ত্রী।

এর আগে গত ১২ নভেম্বর অনলাইন নিউজপোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কম কুরবানির দিন মাংসের জন্য বসে ছিলাম, কিন্তু পাঠায়নি শিরোনামে এই অসহায় বৃদ্ধা মাকে নিয়ে একটি সংবাদ প্রকাশ হয়। সংবাদটি দেশ-বিদেশে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করে।

এই সংবাদ প্রকাশ হওয়ার পর বৃদ্ধা মজিরন বেওয়ার ছেলে মুক্তিযোদ্ধা ও সাবেক পুলিশ কর্মকর্তা আব্দুল মজিদ আহম্মেদ জাগো নিউজের ওপর ক্ষিপ্ত হন। একপর্যায়ে জাগো নিউজের অফিসে ফোন করে তিনি মামলারও হুমকি দেন।

Mojiron

এ নিউজ প্রকাশের পর ছেলে মায়ের কাছে গেল কিনা বিষয়টি জানার আগ্রহ প্রকাশ করেন অনেক পাঠক। এ নিয়ে জাগো নিউজের অফিসে ফোন করেন অনেকেই। বিষয়টির ফলোআপ জানতে চান তারা।

এ ঘটনায় সর্বশেষ কি হলো সেটিও প্রকাশ করার অনুরোধ করেন অনেক পাঠক। পাঠকের সেই অনুরোধে জাগো নিউজের এ প্রতিবেদক আবারো ছুটে যান টাঙ্গাইলের ভূঞাপুর উপজেলার অর্জুনা ইউনিয়নের ভরুয়া গ্রামে। সেখানে গিয়ে কথা হয় বৃদ্ধা মজিরন বেওয়ার সঙ্গে। কথা হয় বৃদ্ধার নাতিসহ প্রতিবেশীদের সঙ্গেও।

এলাকাবাসী জানায়, আব্দুল মজিদ আহম্মেদ বীর মুক্তিযোদ্ধা। চাকরি করেছেন পুলিশে। উপ-পরিদর্শক (এসআই) ছিলেন।
চাকরি আর পৈতৃক অংশীদার সূত্রে তিনি সচ্ছল। পৈতৃক সূত্রে গ্রামে পাওয়া ৪০ শতাংশ আর নিজস্ব প্রায় ৪ একর জমির মালিক তিনি। ২০ শতাংশ জমির ওপর একটি বাড়ি করেছেন। আবাদি জমিতে সারা বছরই হচ্ছে ধানসহ নানা কৃষিপণ্য।

রয়েছে ৪০ শতাংশ জমি ওপর একটি পুকুর। সেখানে মাছ চাষ হচ্ছে। এরপরও রয়েছে মুক্তিযোদ্ধা ভাতাসহ সব সুযোগ সুবিধা। বৃদ্ধার ছোট ছেলে মজনুও ঢাকায় থাকেন। সেখানে চাকরি করে কোনো রকমে দিনাতিপাত করছেন। তিনিও বাড়ি আসেন না তেমন।



তাই বৃদ্ধা মজিরন বেওয়ার আশ্রয় হয়েছে বড় ছেলের একমাত্র ছেলের বাসায়। সেখানে গিয়ে কথা হয় শ্রবণ শক্তিহীন বৃদ্ধা মজিরনের সঙ্গে।

সংবাদ প্রকাশ হওয়ার পরে আপনার ছেলে আব্দুল মজিদ আহম্মেদ খোঁজ নিয়েছে কিনা এমন প্রশ্নে তিনি জানান, না। কেউ আসেনি। তবে তার (মুক্তিযোদ্ধা) মেয়ে আমার মেয়েকে (ফুপিকে) ফোন করে বলেছে আমাকে থালা নিয়ে সড়কে বসতে।

মজিরন বেওয়ার দাবি, মা ছাড়া আব্দুল মজিদ মুক্তিযোদ্ধা আর পুলিশ কর্মকর্তা হলো কীভাবে। সন্তানের গ্রামের জমিতে মণকে মণ চাল হয়। সেই চাল থেকে আমার ভাগ্যে এক ছটাক চালও জোটে না। এক মুঠ খুঁদিও দেয় না। এ কথা বলার পরই কান্নায় ভেঙে পরেন তিনি। একপর্যায়ে রেগে গিয়ে ছেলের বিরুদ্ধে মামলা করার কথা বলেন তিনি।

এ সময় কথা হয় বৃদ্ধার আশ্রয়দাতা নাতি মালেক মিয়ার সঙ্গে। তিনি মজিরন বেওয়ার বড় ছেলের ঘরের একমাত্র সন্তান। দুই সন্তানের জনক তিনি। গত ১০ বছর ধরে তিনিই তার দাদির দেখাশোনা করছেন। অর্থনৈতিক অবস্থা খারাপ হওয়া সত্ত্বেও বৃদ্ধা দাদির এ অসহায় জীবনযাপনের সঙ্গী হয়েছেন তিনি।

Mojiron

এ প্রসঙ্গে কথা হয় বৃদ্ধার প্রতিবেশী ফাতেমা বেগমের সঙ্গে। তিনি জানান, মুক্তিযোদ্ধা ও অবসর পুলিশ কর্মকর্তা আব্দুল মজিদ আহম্মেদ তাকে জানিয়েছেন মায়ের দাবি শেষ। আগে যা করছে তাই ছিল মায়ের দাবি। এখন আর কিছু দাবি না করার কথা জানিয়েছেন বলেও জানান তিনি।

স্থানীয় ইউপি সদস্য জিন্নাহ বিষয়টির সতত্যা স্বীকার করে বলেন, একজন মুক্তিযোদ্ধা ও অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ কর্মকতা হওয়াসহ কোটি টাকার মালিক আব্দুল মজিদ আহম্মেদ। তিনি মাকে ভাত-কাপড় দেন না। তার মা থাকেন অন্যের বাড়িতে। ঘটনাটি লজ্জার, দুঃখজনক। এটা তার জন্য লজ্জা বা দুঃখের কোনো কারণ না হলেও এটি প্রতিটি মুক্তিযোদ্ধা ও জাতির জন্য লজ্জাজনক।

এ ব্যাপারে মুক্তিযোদ্ধা ও অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ কর্মকর্তা আব্দুল মজিদ আহম্মেদ বলেন, গত ১০ বছর ধরে আমার মাকে ভাতিজারা বিভিন্ন ধরনের ওষুধ সেবন করিয়ে মাথা নষ্ট করেছে। তাই তার মা মজিরন বেওয়া তাদের কথামতো তার বিরুদ্ধে সম্মানহানীকর এসব বক্তব্য দিচ্ছেন। আর এসবের মূলে রয়েছে তার কাছে জমি বিক্রি বাবদ বায়নার টাকা নেয়া প্রতিবেশীরা। জমির দলিল না করে দেয়ার ষড়যন্ত্রে তারা এগুলো করছেন বলেও জানান তিনি।

এমএএস/আরআইপি

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।