কুরবানির দিন মাংসের জন্য বসে ছিলাম, কিন্তু পাঠায়নি
ছেলে মুক্তিযোদ্ধা। চাকরি করতো পুলিশে। এসআই (উপ-পরিদর্শক) ছিল। কিছুদিন হলো অবসরে গেছে। এখন বাড়িতে স্ত্রী সন্তান নিয়ে বেশ ভালোভাবেই সময় কাটাচ্ছে। অথচ দশ বছর হলো একদিনও মায়ের খোঁজ নেয়নি।
কুরবানি ঈদে লাখ টাকা দিয়ে গরু কিনেছিল ছেলে। সেটি শুনে খুব খুশী হয়েছিলেন মা। অপেক্ষা করছিলেন ছেলে বাড়ি থেকে কুরবানির মাংস পাঠাবে। কিন্তু পাঠায়নি। তাই এবারের ঈদে গরুর মাংস খাওয়া হয়নি মা মজিরন বেওয়ার।
ছেলেকে নিয়ে এমন অভিমানের কথাগুলো জাগো নিউজের এই প্রতিবেদককে বলছিলেন ১০৬ বছর বয়সী বৃদ্ধা মজিরন বেওয়া
টাঙ্গাইলের ভূঞাপুর উপজেলার ভরুয়া গ্রামের সাবেক পুলিশ কর্মকর্তা ও মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল মজিদ আহম্মেদের গর্ভধারিণী মা তিনি। বর্তমানে অবহেলা ও অনাহারে দিন কাটাচ্ছেন তিনি। অথচ মুক্তিযোদ্ধা সেই ছেলে এখন বৃদ্ধা মায়ের কোনো খোঁজ খবর রাখেন না।
জানা যায়, উপজেলার ভরুয়া গ্রামের মৃত হযরত আলী সরকারের স্ত্রী মজিরন বেওয়া ৫ সন্তানের জননী। পাঁচজনের মধ্যে তিনজন মারা গেছেন। বেঁচে আছেন মুক্তিযোদ্ধা মজিদ ও মজনু মিয়া।
মজনু চাকরির সুবাধে ঢাকায় থাকেন। সেখানে ছোটখাটো চাকরি করে কোনো চলছেন তিনি। আর আব্দুল মজিদ আহম্মেদ পুলিশের উপ-পরিদর্শক (এসআই) হিসেবে কর্মরত অবস্থায় বছর খানেক আগে অবসরে গেছেন।
গত পাঁচ বছর আগে ঘর থেকে বের হতেই মেঝেতে পড়ে কোমর ভেঙে গেছে তার। সেই থেকে তিনি আর উঠে দাঁড়াতে পারেন না।
সম্প্রতি ১০৬ বছর বয়সী বৃদ্ধা মজিরন বেওয়ার খোঁজে তার গ্রামে গেলে দেখা মেলে ভোগান্তির এক অসহনীয় দৃশ্য। স্বামীর ভিটে বাড়িতে একাই থাকেন তিনি।
প্রতিবেশীদের সহযোগিতা নিয়ে চলাফেরা করছেন তিনি। কেমন আছেন চাচী, জানতে চাওয়া মাত্রই মুখে অন্ধকার নেমে আসে তার।
ছেলে-মেয়ে কয়জন জানতে চাওয়া মাত্রই রেগে গিয়ে বললেন, তিন ছেলে আগেই মরে (মারা) গেছে। দুই ছেলে জীবিত থাকতেও আমার কাছে মরে গেছে। ছেলে মুক্তিযোদ্ধা। পুলিশে চাকরি করতো। দশ বছর পার হয়ে গেছে সে আমার খোঁজ নেয় না।
স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধারা এই প্রসঙ্গে জানান, এটা খুবই দুঃখজনক ঘটনা। দেশ মায়ের জন্য আমরা মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলাম। আজ সেই মুক্তিযোদ্ধার মা এভাবে অবহেলায় পড়ে থাকবে সেটা কল্পনাও করা যায় না।
এ প্রসঙ্গে ভরুয়া গ্রামের আকরাম আলী, মতিয়ার রহমান, আবুল কালাম ও ধলু সামাদ অভিযোগ করে বলেন, মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল মজিদ তার গর্ভধারিণী মাকে দশ বছর হলো খোঁজ নেয় না। এলাকার দুষ্ট লোকদের নিয়ে তার বাড়িতে মাদক সেবন আর আনন্দ ফূর্তি করে। পুলিশের সাবেক কর্মকর্তা হওয়ায় তাকে সবাই ভয় পায়। তাই তার এই অপরাধের বিষয়টি নিয়ে কেউ কিছু বলতে চায় না।
এ ব্যাপারে কথা বলতে মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল মজিদ আহম্মেদের বাড়িতে গেলে তাকে পাওয়া যায়নি। পরে তার ব্যবহৃত ফোন নম্বরে ০১৭১৬৩৬৫৪৫৫ কল করলে সেটিও বন্ধ পাওয়া যায়।
এমএএস/এমএস