দিনাজপুরসহ ৪ জেলার চামড়া পঁচনের আশঙ্কায় ব্যবসায়ীরা
টানা হরতাল-অবরোধের ফলে লোকসানের মুখে পড়েছে বৃহত্তর দিনাজপুরসহ উত্তরাঞ্চলের ৪টি জেলার চামড়া ব্যবসায়ীরা। ট্যানারি মালিকরা বিদেশে চামড়া পাঠাতে না পারায় এই অঞ্চলের চামড়ার দাম কমে গেছে। পাশাপাশি টানা অবরোধ-হরতাল আর কিছুদিন স্থায়ী হলে ব্যবসায়ীদের গোডাউনে রাখা সব চামড়ার পঁচন শুরু হবে এই আশঙ্কায় রয়েছেন তারা। তাই ব্যবসায়ীদের কথা বিবেচনা করে এই ধরনের রাজনৈতিক কর্মসূচি প্রত্যাহারের জন্য সরকার ও বিএনপিকে আহ্বান জানিয়েছে ব্যবসায়ীরা।
এক সময়কার উত্তরাঞ্চলের সর্ববৃহৎ চামড়া বাজার হিসেবে পরিচিত ছিল দিনাজপুরের রামনগর চামড়া বাজার। এখন তেমনটি না থাকলেও বৃহত্তর দিনাজপুর জেলার দিনাজপুর, পঞ্চগড়, ঠাকুরগাঁও ও পার্শ্ববর্তী নীলফামারী জেলার চামড়া বিক্রি হয় এই বাজারে। আর এখান থেকে সরাসরি পাঠানো হয় ট্যানারি মালিকদের কাছে। কিন্তু, গত এক মাসেরও অধিক সময় ধরে টানা হরতাল-অবরোধ চলার ফলে এই বাজারের ৬৫টি গোডাউনে গরু ও ছাগল মিলে প্রায় ২০ হাজার চামড়া আটকা পড়েছে। ট্যানারি মালিকরা বিদেশে চামড়া পাঠাতে না পারায় কমে গেছে চামড়ার বাজার। হরতাল-অবরোধ শুরুর আগে প্রতি ২০-২২ ফুটের ১নং গরুর চামড়ার মূল্য ছিল ২৪০০ থেকে ২৮০০ টাকা পর্যন্ত এখন মূল্য কমে সেই চামড়ার দাম হয়েছে ২ হাজার থেকে ২৫০০ টাকা। ২নং গরুর চামড়া ১৮০০ থেকে ২২০০ টাকার স্থলে ১৪০০ থেকে ১৬৫০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। আর ছাগলের চামড়া ১৪০-১৯২ টাকার স্থলে ১২০-১৭০ টাকা এবং বকরীর চামড়া ১০৫-১৪৫ টাকার স্থলে ৮৫-১১৫ টাকায় বিক্রি করতে হচ্ছে।
জেলার ছোট-বড় মিলে প্রায় আড়াই শতাধিক ব্যবসায়ী চামড়া ব্যবসার সাথে জড়িত ও ঢাকায় চামড়া পাঠানোর জন্য রয়েছেন প্রায় ৩০-৪০ জন ব্যবসায়ী। আর কাঁচা চামড়া লবন দিয়ে প্রক্রিয়াজাতকরণসহ বিভিন্ন কাজের সাথে জড়িত প্রায় দেড় শতাধিক শ্রমিক।
ব্যবসায়ীরা জানালেন, যে দরে চামড়া কিনেছেন এখন সেই চামড়ার দাম কম। প্রতিটি চামড়ায় দাম কমে গেছে ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা পর্যন্ত। আর হরতাল-অবরোধে পাঠাতে না পারায় চামড়াগুলো নষ্ট হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। এভাবে চলতে থাকলে তারা শেষ হয়ে যাবেন। পথে বসতে হবে তাদেরকে।
চামড়া ব্যবসায়ী ইয়াকুব আলী জানান, অবরোধের শুরুতেই প্রতিটি চামড়া কিনেছেন ২ হাজার ৪০০ টাকা থেকে ২ হাজার ৮০০ টাকা দিয়ে। এখন সেই চামড়ার মূল্য ২ হাজার থেকে ২ হাজার ৫০০ টাকা। তাই লোকসানের কারণে এখনও চামড়া বিক্রি করেননি তিনি। কিন্তু, তারা যে প্রক্রিয়ায় চামড়া সংরক্ষণ করেন এভাবে চামড়া আড়াই মাস পর্যন্ত সংরক্ষণ করা যাবে। এর বেশি সময় হলে চামড়ায় পঁচন ধরবে। এর আগেই কম মূল্যে চামড়া বিক্রয় করতে হবে তাদেরকে। এতে করে তাদেরকে লোকসান গুনতে হবে।
দিনাজপুর চামড়া ব্যবসায়ী মালিক গ্রুপের সাধারণ সম্পাদক আখতার আজিজ জানান, পরিবহনের কারণে ঢাকায় চামড়া পাঠানো যাচ্ছে না, কমে গেছে চামড়ার মূল্য। এভাবে চলতে থাকলে ব্যবসায়ীদের লোকসান গুনতে হবে। স্থানীয় পর্যায়ে চামড়া রাখা হয় লবণজাত করে। এভাবে চামড়া রাখা সম্ভব ২ থেকে আড়াই মাস পর্যন্ত। কিন্তু এভাবে টানা অবরোধ-হরতালে চামড়া পাঠাতে না পারলে এসব চামড়ায় পঁচন ধরবে এই আশঙ্কায় রয়েছেন তারা। ইতিমধ্যেই প্রায় দেড় থেকে ২ কোটি টাকা মূল্যের চামড়া গোডাউনে পড়ে রয়েছে বলে তিনি জানান।
এমএএস/পিআর