এক যুগ পর খুলনা কারাগারে ফাঁসি
২০০৪ সালের ১০ মে খুলনার শীর্ষ খুনি এরশাদ শিকদারের আলোচিত ফাঁসির এক যুগ পর খুলনা কারাগারে আবারো একজনের ফাঁসি হতে চলেছে। রোববার নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন জামাআতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশ (জেএমবি) নেতা আসাদুল ইসলাম আরিফের ফাঁসি কার্যকর হবে।
ঝালকাঠিতে দুই জ্যেষ্ঠ বিচারক জগন্নাথ পাঁড়ে ও সোহেল আহমেদ হত্যা মামলায় আরিফসহ সাতজনকে মৃত্যুদণ্ড প্রদান করেন আদালত। ইতোমধ্যে ছয়জনের ফাঁসি কার্যকর হয়েছে।
যাদের ফাঁসি কার্যকর হয়েছে তারা হলেন- জেএমবির শীর্ষ নেতা শায়খ আবদুর রহমান, সিদ্দিকুল ইসলাম ওরফে বাংলাভাই, শায়খ আব্দুর রহমানের ভাই আতাউর রহমান সানি, জামাতা আবদুল আউয়াল, ইফতেখার হোসেন মামুন, খালেদ সাইফুল্লাহ ওরফে ফারুক। ২০০৭ সালের ২৯ মার্চ শীর্ষ এ ছয় জঙ্গির মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হয়।
অবশিষ্ট দণ্ডপ্রাপ্ত জঙ্গি আসাদুল ইসলাম আরিফের মৃত্যুদণ্ড রোববার রাত সাড়ে ১০টার দিকে কার্যকর হবে বলে নিশ্চিত করেছে একটি বিশ্বস্ত সূত্র। ইতোমধ্যে সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে খুলনা কারাগার কর্তৃপক্ষ।
এ ব্যাপারে একটি সূত্র জানায়, জঙ্গি নেতা আসাদুল ইসলাম আরিফ ২০০৮ সাল থেকে খুলনা জেলা কারাগারে। ২০০৬ সালের ২৯ মে দুই বিচারক হত্যা মামলার রায়ে ঝালকাঠির অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ রেজা তারিক আহম্মেদ জেএমবির শীর্ষ নেতা শায়খ আবদুর রহমান, সিদ্দিকুল ইসলাম ওরফে বাংলাভাই, শায়খ আব্দুর রহমানের ভাই আতাউর রহমান সানি, জামাতা আবদুল আউয়াল, ইফতেখার হোসেন মামুন, খালেদ সাইফুল্লাহ ওরফে ফারুক ও আসাদুল ইসলাম আরিফের বিরুদ্ধে মৃত্যুদণ্ড ঘোষণা করেন।
খুলনা কারাগারে আরিফের মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের লক্ষ্যে ফাঁসির মঞ্চ প্রস্তুত করা হয়েছে। রোববার রাত সাড়ে ১০টায় ফাঁসি কার্যকরের সময় উপস্থিত থাকবেন খুলনা জেলা প্রশাসকের প্রতিনিধি হিসেবে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট নুরুল আলম, খুলনা সিভিল সার্জন আব্দুর রাজ্জাক, খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, জেল সুপার কামরুল ইসলাম প্রমুখ।
এ ব্যাপারে খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ-কমিশনার (সিটিএসবি) রাশিদা বেগম বলেন, রোববার জঙ্গি আরিফের ফাঁসির নির্ধারিত দিন রয়েছে বলে তিনি জানেন। তবে ছুটিতে থাকায় কারাগার ও আশপাশের এলাকায় কি ধরনের নিরাপত্তার পরিকল্পনা রয়েছে তা তিনি জানেন না।
খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ-কমিশনার (দক্ষিণ) মোল্লা জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, জঙ্গি আরিফের ফাঁসি কার্যকরের বিষয়টি তিনি জানেন। তবে ঢাকায় থাকায় এ সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য তার জানা নেই।
এ ব্যাপারে খুলনা জেলা কারাগারের সুপার কামরুল ইসলামের সঙ্গে জঙ্গি আসাদুল ইসলাম আরিফের বিষয়ে জানতে শুক্রবার রাতে তার ব্যবহৃত দুটি মোবাইল ফোনে কল করলেও তিনি তা রিসিভ করেননি।
এদিকে ঝালকাঠিতে দুই বিচারক হত্যা মামলায় জেএমবির জঙ্গি আসাদুল ইসলামের মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখেন আপিল বিভাগ। চলতি বছরের ২৮ আগস্ট রোববার সকালে প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার (এসকে) সিনহার নেতৃত্বাধীন পাঁচ বিচারপতির আপিল বেঞ্চ এই আদেশ দেন।
মৃত্যুদণ্ডের রায় পুনর্বিবেচনা চেয়ে আরিফের করা আবেদন খারিজ করে তার মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখেন সর্বোচ্চ আদালত। ফলে আরিফের মৃত্যুদণ্ড কার্যকরে কোনো বাধা নেই বলে জানিয়েছেন আইনজীবীরা। আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম। আর আসামি পক্ষে ছিলেন আইনজীবী এন কে সাহা।
প্রসঙ্গত, ২০০৫ সালের ১৪ নভেম্বর সকালে ঝালকাঠি জেলা জজ আদালতে যাওয়ার পথে দুই বিচারককে বহনকারী মাইক্রোবাসে বোমা হামলা করে জ্যেষ্ঠ বিচারক জগন্নাথ পাঁড়ে ও সোহেল আহমেদকে হত্যা করে জঙ্গিরা।
উল্লেখ্য, ২০০৪ সালের ১০ মে খুলনা জেলা কারাগারে কুখ্যাত খুনি এরশাদ শিকদারের ফাঁসি কার্যকরের পর জঙ্গি নেতা আসাদুল ইসলাম ওরফে আরিফের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হতে যাচ্ছে।
আলমগীর হান্নান/এসএস/আরআইপি