বদরুলের শাস্তির দাবিতে আজও উত্তাল সিলেট


প্রকাশিত: ০৯:০৯ এএম, ০৬ অক্টোবর ২০১৬

সিলেট এমসি ক্যাম্পাসে কলেজছাত্রী খাদিজা আক্তার নার্গিসের ওপর হামলাকারী ছাত্রলীগ নেতা বদরুলের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবিতে বৃহস্পতিবার বিক্ষোভ মিছিল, মানববন্ধন ও সমাবেশে উত্তাল সিলেট।

পৃথক আন্দোলন কর্মসূচি থেকে খাদিজার ওপর হামলার মামলাটি দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে স্থানান্তরের দাবি জানানো হয়েছে। এদিকে হামলার ঘটনাস্থল এমসি কলেজ ক্যাম্পাসেও বিক্ষোভ পালন করেন সেখানকার শিক্ষার্থীরা। খাদিজার নিজ এলাকা সদর উপজেলার মোগলগাঁও ইউনিয়নের হাউসা গ্রাম এলাকাবাসী মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল করেন।

বৃহস্পতিবার বেলা সাড়ে ১১টায় সিলেট সরকারি মহিলা কলেজের সহস্রাধিক শিক্ষার্থী নগরের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে জেলা প্রশাসকের কার্যালয় চত্বরে জমায়েত হন। পরে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা) সৈয়দ মোহাম্মদ আমিনুর রহমানের মাধ্যমে তারা চার দফা দাবিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বরাবর স্মারকলিপি প্রদান করেন। এর অনুলিপি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও শিক্ষামন্ত্রী বরাবর দেওয়া হয়েছে।

স্মারকলিপিতে করা দাবিগুলো হলো- অপরাধীর সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করতে মামলাটি দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে ন্যস্ত করা, খাদিজার সুচিকিৎসা নিশ্চিত করা, খাদিজার পরিবারকে আর্থিক সহায়তা করা ও ছাত্রীদের নিরাপত্তার জন্য বাস্তবসম্মত পদক্ষেপ দ্রুত গ্রহণ করা।

Sylhet

স্মারকলিপি প্রদান শেষে শিক্ষার্থীরা ফের বিক্ষোভ মিছিল সহকারে বন্দরবাজার, সিটি পয়েন্ট, জিন্দাবাজার হয়ে মহিলা কলেজের সামনে গিয়ে চৌহাট্টা-জিন্দাবাজার সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ দেখান ও মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেন।

মহিলা কলেজের আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের সংগঠন ‘খাদিজা ও নারী নির্যাতন প্রতিরোধ মঞ্চের’ মুখপাত্র ফজিলাতুন্নেছা বলেন, মানুষের অসুবিধার কথা চিন্তা করে রাজপথের আন্দোলন আজ থেকে স্থগিত করা হল। তবে আমাদের কলেজ ক্যাম্পাসে প্রতিদিনই বিক্ষোভ চালিয়ে যাব, আমরা দ্রুত বিচার দেখতে চাই, নিরাপত্তা চাই নারীদের।

সিলেট কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের সামনে বিক্ষোভ মিছিল ও মানববন্ধন পালন করেছেন সিলেট সরকারি মহিলা কলেজ অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের নেত্রীরা। সাবেক শিক্ষার্থীদের পক্ষে জাতীয় মহিলা আইনজীবী সমিতি সিলেটের সমন্বয়কারী অ্যাডভোকেট সৈয়দা শিরিন আক্তার বলেন, ‘পাশবিক এই ঘটনার দ্রুত বিচার করে দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে হবে’।

এছাড়াও মহিলা কলেজের সামনে এশিয়া ছিন্নমূল মানবাধিকার বাস্তবায়ন ফাউন্ডেশন জেলা ও মহানগর শাখা, ন্যাশনালিস্ট অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট ফোরাম সিলেট, জাতীয় মহিলা আইনজীবী সমিতি সিলেট, বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড অ্যান্ড সার্ভিসেস ট্রাস্ট (ব্লাস্ট), আমরাই পারি পারিবারিক নির্যাতন প্রতিরোধ কমিটি, জৈন্তিয়া ছিন্নমূল সংস্থা, এশিয়া ছিন্নমূল মানবাধিকার বাস্তবায়ন ফাউন্ডেশন ও সিলেট ফ্রেন্ডস ক্লাবসহ বিভিন্ন সংগঠন পৃথকভাবে মানববন্ধন, বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করে।

এশিয়া ছিন্নমূল মানবাধিকার বাস্তবায়ন ফাউন্ডেশন জেলা ও মহানগর শাখা বিক্ষোভ সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন সংগঠনের জেলা শাখার নেত্রী শিরিন আক্তার ও সংগঠনের মহানগর শাখার সভানেত্রী ও সিটি কাউন্সিলর শামীমা স্বাধীনের পরিচালনায় এতে বক্তব্য রাখেন মহানগর মহিলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি শামসুন নাহার, বিএনপি নেত্রী জাহানারা বেগম, মানবাধিকার কর্মী দোলোয়ার খান ও পুতুল মিয়া।

Sylhet

একই দাবিতে খাদিজার নিজ এলাকা সদর উপজেলার মোগলগাঁও ইউনিয়নের হাউসা গ্রামে এলাকাবাসী মানববন্ধন ও বিক্ষোভ করে। এতে সভাপতিত্ব করেন সিলেট সদর উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি শাহজামাল নুরুল হুদা। বক্তব্য রাখেন জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক অধ্যক্ষ সৈয়দ সুজাত আলী রফিক, মহানগর বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক মিফতাহ সিদ্দিকী ও কান্দিরগাঁও ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান শামসুল ইসলাম।

উল্লেখ্য, গত ৩ অক্টোবর বিকেলে সিলেট এমসি কলেজের পরীক্ষা হল থেকে বের হওয়ার পথে চাপাতি দিয়ে খাদিজাকে কুপিয়ে আহত করেন ছাত্রলীগ নেতা ও শাবি ছাত্র বদরুল আলম। খাদিজার সহপাঠীসহ স্থানীয় জনতা ধাওয়া করে বদরুলকে ধরে গণধোলাই দিয়ে পুলিশে দেন। তার বাড়ি সুনামগঞ্জের ছাতকের মনিজ্ঞাতি গ্রামে।

বদরুল শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের চতুর্থ বর্ষের দ্বিতীয় সেমিস্টারের শিক্ষার্থী ও বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সহ-সম্পাদক। খাদিজাকে প্রথমে সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হলে এক দফা অস্ত্রোপচার শেষে ঢাকায় পাঠানো হয়। রাজধানীর স্কয়ার হাসপাতালের আইসিইউতে রেখে তার চিকিৎসা চলছে। খাদিজার অবস্থা এখনো সংকটাপন্ন।

এদিকে, গত বুধবার ছাত্রলীগ নেতা বদরুল খাদিজাকে কোপানোর কথা স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন। জবানবন্দি শেষে বদরুলকে কারাগারে পাঠানো হয়।

ছামির মাহমুদ/এসএস/এবিএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।