জনবল সংকটে গোয়ালন্দ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স
রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স জনবল সংকটের কারণে স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন ওই উপজেলার বাসিন্দারা।
স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্রে জানা যায়, ৩১ শয্যার স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি ২০০৭ সালে ৫০ শয্যার প্রশাসনিক অনুমোদন হলেও ২০১৩ সালের মে মাস থেকে ৫০ শয্যার কার্যক্রম শুরু হয়। একটি পৌরসভা ও ৪ ইউনিয়নবাসীর সর্বোচ্চ স্বাস্থ্যসেবার মাধ্যম গোয়ালন্দ উপজেলার এ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। ২১ জন চিকিৎসকের পদ থাকলেও কর্মরত রয়েছে মাত্র ৫ জন।
কমপ্লেক্সটিতে কর্মরত রয়েছে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা একজন, জুনিয়র কনসালটেন্ট গাইনী একজন, জুনিয়র কনসালটেন্ট শিশু একজন, মেডিকেল অফিসার দুইজন, আইএমও একজন, নাসিং সুপারভাইজার একজন, সিনিয়র স্টাফ নার্স ১৩ জন, প্রধান সহকারী কাম-হিসাব রক্ষক ১জন, ক্যাশিয়ার ৩ জন, পরিসংখ্যানবিদ ১ জন, অফিস সহকারী কাম-কম্পিউটার অপারেটর ৩ জন।
এছাড়া এসএসিএমও ২ জন, মেডিকেল টেকনোলজিস্ট (রেডিও) একজন, কার্ডিও গ্রাফার একজন, মেডিকেল টেকনোলজিস্ট (ল্যাব) একজন, মেডিকেল টেকনোলজিস্ট (ডেন্টাল) একজন, মেডিকেল টেকনোলজিস্ট (ইপিআই) একজন, জুনিয়র মেকানিক একজন, ড্রাইভার একজন, সহকারী সেবক একজন।
স্যানিটারী ইন্সপেক্টর একজন, স্বাস্থ্য পরিদর্শক একজন, সহকারী স্বাস্থ্য পরিদর্শক ৪জন, স্বাস্থ্য সহকারী ১৪ জন, যক্ষা ও কুষ্ঠ নিয়ন্ত্রণ সহকারী একজন, হারবাল অ্যাসিসট্র্যান্ট একজন, এমএলএসএস তিনজন, ওয়ার্ড বয় একজন, আয়া দুইজন, মালী একজন, কুক/মশালচী দুইজন, সুইপার ৫ জন।
শুন্য পদ রয়েছে আবাসিক মেডিকেল অফিসার একজন, জুনিয়র কনসালটেন্ট (কার্ডিওলজি) একজন, জুনিয়র কনসালটেন্ট চক্ষু একজন, জুনিয়র কনসালটেন্ট এন্সেথেসিয়া একজন, জুনিয়র কনসালটেন্ট মেডিসিন একজন, জুনিয়র কনসালটেন্ট ইএনটি একজন, জুনিয়র কনসালটেন্ট সার্জারী একজন, জুনিয়র কনসালটেন্ট অর্থোপেথিক্স একজন, জুনিয়র কনসালটেন্ট চর্ম ও যৌন রোগ একজন।
এছাড়া মেডিকেল অফিসার একজন, এ্যানসথেটিস্ট একজন, প্যাথলজিস্ট একজন, ইএমও একজন, ডেন্টাল সার্জন একজন, এমও (হোমিওপ্যাথিক) একজন, সিনিয়র স্টাফ নার্স একজন, প্রধান সহকারী একজন, একাউনটেন্ট একজন, ফার্মসিস্ট দুইজন, মেডিকেল টেকনোলজিস্ট (ল্যাব) দুইজন, মেডিকেল টেকনোলজিস্ট (ফিজিওথেরাপি) একজন, স্বাস্থ্য সহকারী ৬জন, এমএলএসএস একজন, ওয়ার্ড বয় ২জন।
এছাড়া প্রয়োজনীয় জনবলের অভাবে জনগণের স্বাস্থ্যসেবা ব্যাহত হচ্ছে। অপারেশন থিয়েটারে প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি থাকলেও চিকিৎসক সংকটে হচ্ছে না কোনো অপারেশন। ডিজিটাল যুগে এনালগ এক্সরে দিয়ে চলছে কাজ। তবে নতুন এক্সরে মেশিন আনার চেষ্টা চলছে।
একটি অ্যাম্বুলেন্স থাকলে তা রোগীদের কাজে আসে খুব কম। কারণ তেলের টাকা বাকী পড়ায় কয়েক মাস বন্ধের পর কোনো রকম চলার উপায় বের হলেও মেরামতের জন্য রয়েছে গ্যারেজে। সব মিলিয়ে প্রতিদিন আউটডোরে ৩ থেকে সাড়ে ৩০০ মতো রোগী আসেন সেবা নিতে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, প্রশাসনিক কাজে বেশির ভাগ সময় ব্যস্ত থাকতে হয় উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তাকে। সময় পেলে রোগীদের স্বাস্থ্যসেবা দেন। কমপ্লেক্সটির পরিষ্কার পরিছন্নতা, খাবার মান ও রোগীর ভর্তির বিষয়ে তেমন কোনো অভিযোগ পাওয়া যায়নি। তবে ভর্তি বেশির ভাগ রোগীই জটিল ও কঠিন রোগের নয়।
অপারেশন থিয়েটারের গেটটি বন্ধ রয়েছে অনেকদিন ধরে। এতে ধুলা-বালুর স্তর দেখেই বোঝা যায়। বহিঃবিভাগে রোগীদের আনাগোনা ছিল বেশ। পুুরুষ ওয়ার্ডে যেতেই বারান্দায় দেখা মিললো দূর্বলতার কারণে ভর্তি হওয়া আহম্মদ শেখ (৬০) এর সঙ্গে। তাকে স্যালাইন দেওয়া হয়েছে কিন্তু জালা-পোড়ার কারণে স্যালাইনসহ বাইরে বেরিয়ে এসেছেন নার্সের খোঁজে। তখন স্যালাইনর পাইপ দিয়ে শরীরের স্যালাইন যাওয়ার পরিবর্ততে রক্ত আসছে।
এমন অবস্থা দেখে পরিষ্কারের কাজে নিয়োজিত আয়া বাধ্য হয়েই রোগীকে নিয়ে বেডে শুয়ে দিয়ে স্যালাইন শরীরের যেতে সহায়তা করেন। পরিছন্ন কর্মীকে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন কি করবো এ পুরো পুরুষ ওয়ার্ডে একজন মাত্র নার্স। তিনি ওই পাশে বেডের বিছানা ঠিক করছেন।
এখন এ অবস্থায় তাকে ডাকতে গেলে তো বড় সমস্যা হতে পারে। তাই মাঝে মাঝে এ রকম কাজ করতে হয়। প্রায় ১০/১২ বছর ধরে আয়ার কাজ করছি তো কিছু তো বুঝি।
হাসপাতাল থেকে বের হতেই চোখে পড়লো স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মূল ফটকে যেখানে ময়রী বেগম (৫০) কোমড়ে ব্যথার রোগী ও তার স্বজনদের হইচই। জিজ্ঞাসা করতেই ময়রীর বেগমের মেয়ে জিয়াসমিন বলেন, সকালে তার মাকে কোমড়ে সমস্যার কারণে হাসপাতালে এনে ভর্তি করলে এক্সরে করার প্রয়োজন হয়। কিন্তু এখানে তো ডিজিটাল এক্সরে নেই, তারাপরও ডাক্তাররা তাদের ছাড়তে রাজি হন না, বলেন এখানে থাকেন আমরা দেখছি।
কিন্তু তারা না থেকে রোগীকে নিয়ে বের হন ফরিদপুর অথবা রাজবাড়ী সদর হাসপাতালে নেবার জন্য। তবে বের হয়ে পড়েছেন আরেক বিপদে। নেই কোনো অ্যাম্বুলেন্স, তাই কমপ্লেক্সের ফটকের সিঁড়িতেই শুয়ে রেখেছেন তার মাকে। চেষ্টা করছেন বিকল্পভাবে এখান থেকে তার মাকে নিয়ে যেতে।
গোয়ালন্দ উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. শেখ মোহাম্মদ আব্দুল হান্নান জানান, চলতি বছরের ১৯ মে তিনি উপজেলা কমপ্লেক্সটিতে যোগদান করেছেন। যোগদানের পর তিনি ডক্টর পেয়েছিলেন তার মধ্যে থেকে ৬/৭ জন ডক্টর অন্যত্র বদলি হয়ে গেছে। অবকাঠামোগত দিক দিয়ে কোনো সমস্যা না থাকলেও জনবল সংকট রয়েছে।
এ সংকটের কারণে আউটডোর ও ইনডোর সার্ভিস সমস্যাসহ অপারেশন করতে পারছেন না। সাধারণ অপারেশনের মতো অপারেশন এখানে করা হয় না কিন্তু অপারেশনের প্রয়োজনীয় সকল যন্ত্রপাতি রয়েছে। একটি অ্যাম্বুলেন্স রয়েছে যেটি তেলের অভাবে কিছুদিন বন্ধ থাকার পর এখন ত্রুটির কারণে মেরামত করতে দেওয়া হয়েছে। ১/২ দিনের মধ্যে সেটি নিয়ে আসা হবে।
৩১ শয্যার হাসপাতালটি ৫০ শয্যা করা হলেও ওষুধ-পথ্য পেলেও ৫০ শয্যার জনবল নেই। জনবল থাকার কথা ছিল কমপক্ষে ২৫ জন অথচ ৮/১০ জন আছে। তার মধ্যে থেকে ৪/৫ জন ডেপুটিশনে রয়েছে বিভিন্ন হাসপাতালে। বাকী কয়েকজন দিয়ে জরুরি বিভাগসহ আউটডোরে সার্ভিস সঠিকভাবে দেয়া সম্ভব হচ্ছে না। এজন্য তারা প্রতি মাসে বিভিন্নভাবে স্থানীয় সাংসদকে জানানোসহ ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে একটি করে প্রতিবেদন দিয়ে আসছেন।
রুবেলুর রহমান/এসএস/আরআইপি