খাদিজাদের বাড়িতে লজিং থাকতো বদরুল
সিলেট শহরতলির হাউসা গ্রামের সৌদি প্রবাসী মাসুক মিয়ার মেয়ে কলেজছাত্রী খাদিজা আক্তার নার্গিসকে ৫ বছর ধরে উত্ত্যক্ত করে আসছে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ও বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সহ-সাধারণ সম্পাদক বদরুল আলম।
ছাত্রলীগ নেতা বদরুলের হামলায় কলেজছাত্রী গুরুতর আহত হওয়ার পর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রতিবাদ জানিয়ে আসছে এমসি কলেজ ও সিলেট সরকারি মহিলা কলেজের শিক্ষার্থীরা।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এই ঘটনার আগে ২০১২ সালের ১৩ জানুয়ারি মহানগর পুলিশের জালালাবাদ থানার ‘জাঙ্গাইল সফির উদ্দিন স্কুল অ্যান্ড কলেজে’ গিয়ে খাদিজাকে উত্ত্যক্ত করে বখাটে বদরুল। এ কারণে খাদিজার স্বজনরা তাকে ধরে গণপিটুনিও দিয়েছিলেন।
তখন বদরুল বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিরে খাদিজার পরিবারের লোকজনসহ এলাকার বেশ কয়েকজন ছাত্রের বিরুদ্ধে মামলা করে।
খাদিজার চাচা আবদুল কুদ্দুস জানান, ৭ থেকে ৮ বছর আগে খাদিজাদের বাড়ি লজিংমাস্টার হিসেবে থাকতো বদরুল। এরপর থেকে সে খাদিজাকে বিভিন্ন সময় উত্ত্যক্ত করে আসছিল। তার আচরণের কারণে তাকে লজিংমাস্টার থেকে বের করে দেয়া হয়। এরপরও মেয়েটির পিছু ছাড়েনি বখাটে বদরুল। সর্বশেষ তার প্রেমে সাড়া না দেয়ায় এমসি কলেজ ক্যাম্পাসে পৈশাচিক কায়দায় কুপিয়ে আহত করে।
সিলেট সরকারি মহিলা কলেজে ভর্তির পর বিভিন্ন সময় খাদিজাকে উত্ত্যক্ত করে আসছিল বদরুল। খাদিজা গত সোমবার এমসি কলেজ কেন্দ্রে বিএ দ্বিতীয় বর্ষের ফাইনাল পরীক্ষা দিয়ে বের হওয়ার পর কলেজের পুকুর পাড়ে বদরুল তাকে চাপাতি দিয়ে এলোপাতাড়ি কোপাতে থাকে।
বদরুলের সহপাঠীরা জানান, ২০০৮-০৯ শিক্ষাবর্ষে সে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়। তার সহপাঠীদের বিশ্ববিদ্যালয়ের কোর্স বেশ আগেই শেষ হয়েছে। তবে সে এখনো কোর্স শেষ করতে পারেনি। বদরুলের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের অভিযোগ রয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সহ-সম্পাদকের দায়িত্ব পাওয়ার পর সে আরো বেপরোয়া হয়ে ওঠে।
মহানগর পুলিশের শাহপরান থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাহজালাল মুন্সি জানান, হামলা চালানোর কথা স্বীকার করেছেন আটক বদরুল। খাদিজার সঙ্গে প্রেমের সম্পর্কে টানাপড়েন থেকে ক্ষিপ্ত হয়ে তিনি হামলা করেছেন বলে পুলিশকে জানিয়েছেন।
প্রসঙ্গত, গত সোমবার বিকেলে দ্বিতীয় বর্ষের পরীক্ষা দিতে এমসি কলেজ ক্যাম্পাসে গিয়েছিলেন সিলেট সরকারি মহিলা কলেজের ডিগ্রি পাসের ছাত্রী খাদিজা। পরীক্ষা দিয়ে বেরিয়ে আসার সময় ধারালো অস্ত্র দিয়ে তাকে কুপিয়ে গুরুতর আহত করেন শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র ও বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সহ-সম্পাদক বদরুল আলম (২৭)।
তার গ্রামের বাড়ি সুনামগঞ্জের ছাতক উপজেলার সুনাইঘাতি গ্রামে। তিনি ওই গ্রামের সাইদুর রহমানের ছেলে। বদরুল বর্তমানে শাবির শাহপরান হলে থেকে লেখাপড়া করতেন। ঘটনার পরপরই স্থানীয় জনতা তাকে ধরে গণপিটুনি দিয়ে পুলিশে সোর্পদ করেন। তাকেও ওসমানী হাসপাতালে পুলিশি প্রহরায় চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।
ছামির মাহমুদ/এমএএস/এবিএস