ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে ভয়ঙ্কর এনা পরিবহন

জেলা প্রতিনিধি
জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি
প্রকাশিত: ০১:২৬ পিএম, ০২ অক্টোবর ২০১৬

ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে ক্রমেই ভয়ঙ্কর হয়ে উঠছে ঢাকা-সিলেট-সুনামগঞ্জ-ঢাকা রুটে চলাচলকারী এনা পরিবহনের বাস। এনার চালকদের অদক্ষতা আর বেপরোয়া গতিতে বাস চালানোর কারণে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার ৩৬ কিলোমিটার অংশে প্রায়ই ঘটছে ছোট-বড় দুর্ঘটনা। এসব দুর্ঘটনায় মরছে সাধারণ মানুষ। আহত হয়ে পঙ্গুত্ব বরণ করছেন অনেকেই।

২০১৫ সালের ১৫ জুলাই থেকে চলতি বছরের ১৬ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার অংশে এনা পরিবহনের বাসের নিচে চাপা পড়ে অন্তত ১৪ জন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন অনেকে।

সর্বশেষ গত ১৬ সেপ্টেম্বর ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিজয়নগরের শশই নামক স্থানে এনা বাসের সঙ্গে মাইক্রোবাসের মুখোমুখি সংঘর্ষে ৮ জন নিহত হওয়ার ঘটনায় ব্যাপক সমালোচিত হয়েছে এনা পরিবহন। এ ঘটনায় অনেকেই এনা পরিবহন নিষিদ্ধেরও দাবি তুলেছেন।

হাইওয়ে পুলিশ সূত্রে জানা যায়, ২০১৫ সালের ১৫ জুলাই বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিজয়নগর উপজেলার আমতলী নামক স্থানে এনা পরিবহনের একটি যাত্রীবাহী বাস নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে খাদে পড়ে অন্তত ২০ যাত্রী আহত হন। সিলেট থেকে ছেড়ে আসা এনা পরিবহনের ওই যাত্রীবাহী বাসটি আমতলী এলাকায় অপর একটি পিকআপ ভ্যানকে ওভারটেক করতে গিয়ে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে পার্শ্ববর্তী খাদে পড়ে যায়।

৩০ জুলাই বিকেলে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের সরাইল উপজেলার বাড়িউরা বাজার এলাকায় এনা পরিবহনের একটি যাত্রীবাহী বাসের চাপায় জাহিদ মিয়া (৮) নামে এক শিশু নিহত হয়। নিহত জাহিদ বাড়িউরা গ্রামের হামিদুল হকের ছেলে।

Ena

৩ সেপ্টেম্বর দুপুরে জেলার সরাইল উপজেলার ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের শাহবাজপুর বাজারের সামনে এনা পরিবহনের একটি যাত্রীবাহী বাসচাপায় ফেরদৌস (৮) নামে এক শিশু নিহত হয়। নিহত ফেরদৌস শাহবাজপুর আদিল্লামোড়া এলাকার লিয়াকত মিয়ার ছেলে। এ ঘটনার পরপরই উত্তেজিত জনতা ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ শুরু করলে প্রায় আধা ঘণ্টা ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে যান চলাচল বন্ধ থাকে।

২৩ সেপ্টেম্বর দুপুরে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের সরাইল উপজেলার গোগদ নামক স্থানে এনা পরিবহনের একটি যাত্রীবাহী বাসের চাপায় শামছুন্নাহার বেগম (৪২), আজিজা বেগম (৪৫) ও আছিয়া বেগম (৪৫) নামে তিন নারী নিহত হন। তারা তিনজন ভিজিএফ কার্ডের চাল আনতে স্থানীয় নোয়াগাঁও ইউনিয়ন পরিষদ কমপ্লেক্সে যাচ্ছিলেন। এ ঘটনায় বাসে থাকা অন্তত ১০ যাত্রী আহত হন।

১৩ অক্টোবর বিকেলে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিজয়নগরে এনা বাসের চাপায় হাকিম (১২) নামে এক শিশু নিহত হয়। নিহত হাকিম পার্শ্ববর্তী হবিগঞ্জ জেলার মাধবপুর উপজেলার বানেশ্বর গ্রামের মো. সাঈদ মিয়ার ছেলে।

সর্বশেষ গত ১৬ সেপ্টেম্বর সকালে বিজয়নগর উপজেলার ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের শশই নামক স্থানে এনা পরিবহনের একটি বাসের সঙ্গে অপর একটি যাত্রীবাহী মাইক্রোবাসের চাপায় ৮ জন নিহত ও ১ জন আহত হন। হতাহতরা সবাই মাইক্রোবাসের যাত্রী ছিলেন। নিহতরা হলেন- মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার রুপসপুর গ্রামের হাদিউর রহমান ছয়ফুর (৫৫) ও তাঁর ছেলে আবু ছুফিয়ান (৩৫), মুর্শিদুর রহমান (৪০) ও তাঁর ছেলে আলী হোসেন (১২), আবদুল মুকিত (৭০), সাঈদুর রহমান (৪০), দরুদ মিয়া (৪৫) এবং আবদুল হান্নান (৫৫)।

অনুসন্ধানে জানা যায়, ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের ব্রাহ্মণবাড়িয়া অংশে বেশ কয়েকটি বিপজ্জনক বাঁক রয়েছে। এসব বাঁক অতিক্রমের জন্য নির্দিষ্ট গতিসীমা বেঁধে দেয়া হলেও এনা পরিবহনসহ ঢাকা-সিলেট রুটে চলাচলকারী বেশ কয়েকটি পরিবহন সেই গতিসীমা লঙ্ঘন করে বেপরোয়া গতিতে গাড়ি চালান। এছাড়াও এনা পরিবহন, শ্যামলী পরিবহন, হানিফ পরিবহন, ইউনিক পরিবহনের বাসগুলো যাত্রীদের দ্রুত সময়ের মধ্যে গন্তব্যে পৌঁছে দেয়ার নামে মহাসড়কে ওভারটেকিং করে দ্রুতগতির প্রতিযোগিতায় নামে। ফলে প্রায়ই দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছে এসব পরিবহনের যাত্রীবাহী বাসগুলো।

ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের পার্শ্ববর্তী এলাকার বাসিন্দারা জানান, ঢাকা-সিলেট রুটে চলাচলকারী সব বাসই বেপরোয়া গতিতে চলাচল করে। এতে প্রায়ই ছোট-বড় দুর্ঘটনা ঘটছে। বিশেষ করে এনা পরিবহনের বাসগুলোই সবচেয়ে বেশি দুর্ঘটনার শিকার হয়। এনার বেপরোয়া গতি আর ওভারটেকিংয়ের কারণেই মহাসড়কে প্রাণ হারাচ্ছে সাধারণ মানুষ।

এনা পরিবহনের মহাব্যবস্থাপক মো. আতিকুল আলম মুঠোফোনে জাগো নিউজকে বলেন, ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে হবিগঞ্জের মাধবপুর পর্যন্ত কিছু বিপজ্জনক বাঁক রয়েছে। এসব বাঁকের কারণেই বেশিরভাগ দুর্ঘটনা ঘটে। তবে ১৬ সেপ্টেম্বর ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিজয়নগরে দুর্ঘটনায় ৮ জন নিহত হওয়ার ঘটনায় আমরাও মর্মাহত। মাইক্রোবাসটির গতি বেশি হওয়ায় দুর্ঘটনাটি ঘটে, আমাদের গাড়ির গতিও সেদিন কিছুটা বেশি ছিল। তবে আমরা ইতোমধ্যে আমাদের সব চালককে আরও সতর্ক করে নির্দেশনা দিয়েছি, গাড়ির গতি কোনোভাবেই ৮০ কিলোমিটারের বেশি না হয় এবং চলন্ত অবস্থায় চালক যেন মোবাইল ফোন ব্যবহার থেকে বিরত থাকেন। আমরা চেষ্টা করছি যাতে আমাদের গাড়ির কারণে দুর্ঘটনা কম হয়।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে খাঁটিহাতা হাইওয়ে থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হুমায়ূন কবির জাগো নিউজকে বলেন, প্রতিটি দুর্ঘটনায় সংশ্লিষ্ট পরিবহন কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের হয়, তদন্ত কমিটিও গঠিত হয়। মহাসড়কে যে কোনো বাসের সর্বোচ্চ গতিসীমা ৮০ কি.মি. নির্ধারণ করা থাকলেও এনা পরিবহনের বাস প্রায়ই সেই গতিসীমা লঙ্ঘন করছে। সর্বশেষ এনা বাসের চাপায় ৮ জন নিহত হওয়ার সময়ও বাসের গতিসীমা প্রায় ১০০ কি.মি. ছিল বলে জানা গেছে। গতিসীমা নিয়ন্ত্রণের জন্য চালকদের যেন নির্দেশনা দেয়া হয় সেজন্য এনা কর্তৃপক্ষকে বলা হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, মূলত অদক্ষ চালক, ওভারটেকিং আর অধিক গতির কারণেই গাড়ি বেশি দুর্ঘটনার শিকার হয়। তবে দুর্ঘটনা রোধে চালকদের পাশাপাশি যাত্রীদেরও আরও বেশি সচেতন হতে বলে তিনি।

এমএএস/পিআর

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।