দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী সেই মাসুদের পাশে প্রশাসন


প্রকাশিত: ০৪:৫০ এএম, ২২ সেপ্টেম্বর ২০১৬

দেশের জনপ্রিয় নিউজ পোর্টাল জাগো নিজউ টোয়েন্টিফোর ডটকমসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমে দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী মাসুদের স্বাবলম্বী হওয়ার গল্প প্রকাশ হওয়ার পর সরকারি সহযোগিতার বার্তা নিয়ে পাশে দাঁড়িয়েছে উপজেলা প্রশাসন।

বুধবার দেলদুয়ার উপজেলা প্রশাসনের একটি দল উপজেলার পাথরাইল ইউনিয়নের মঙ্গলহোড় গ্রামে মাসুদের খামারটি পরিদর্শন করেন। খামার পরিদর্শনের পর দলটি প্রতিবন্ধী মাসুদের প্রশংসা করেন। মাসুদ স্বাভাবিক মানুষের জন্য একটি দৃষ্টান্ত বলেও মনে করেন তারা। পরে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে মাসুদকে সরকারি সহযোগিতা দেওয়ার আশ্বাস দেন।

এসময় দেলদুয়ার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. শাহাদত হোসেন কবির, উপজেলা চেয়ারম্যান এসএম ফেরদৌস আহমেদ, উপজেলা প্রকৌশলী খ.ম.ফরহাদ হোসাইন ও পাথরাইল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হানিফুজ্জামান লিটন উপস্থিত ছিলেন।

দেলদুয়ার উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এসএম ফেরদৌস আহমেদ বলেন, মাসুদের খামার আমরা পরিদর্শন করে তার বাস্তব চিত্র দেখলাম। সরকারিভাবে তাকে যতটুকু সহযোগিতা করা যায় তার চেষ্টা করা হবে।

tangail

এদিকে, খামারের পাশেই রয়েছে মঙ্গলহোড় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। বিদ্যালয়ে শিক্ষক শিক্ষিকারা সরকারি বা বেসরকারি সহযোগিতার মাধ্যমে মাসুদের খামারটি স্থানান্তরের জোর দাবি জানান।

জেলার দেলদুয়ার উপজেলার পাথরাইল ইউনিয়নের মঙ্গলহোড় গ্রামে ১৯৮৪ সালে মাসুদের জন্ম। সামাদ মিয়া ও মাসুমা বেগমের চার সন্তানের মধ্যে মাসুদ প্রথম। তিন বছর বয়সে টাইফয়েডে মাসুদের দুই চোখ অন্ধ হয়ে যায়। পরিবারের পক্ষ থেকে সেই সময় শত চেষ্টা করেও ফেরাতে পারেনি তার চোখের আলো।

তবে অন্ধ বলে থেমে থাকেননি মাসুদ। ১৯৯৫ সালে ১১ বছর বয়সে তিনি টাঙ্গাইল জেলা শহরে বিবেকানন্দ স্কুলে প্রথম শ্রেণিতে ভর্তি হন। ব্রেইল পদ্ধতিতে ১৯৯৯ সালে পঞ্চম শ্রেণি পাশ করে বাড়ি ফিরে আসার পর নিজেকে পরিবারের বোঝা মনে করতে শুরু করেন। পরে ওই বছরই বাড়ির পাশে মঙ্গলহোড় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনে মুদি দোকান দেন।

২০০১ সালের শেষের দিকে টোঙ্গি প্রতিবন্ধী ইনস্টিটিউটে বাঁশ বেতের কাজ শিখতে যান মাসুদ। কিছুদিন কাজ শেখার পর বাড়ি এসে পূণরায় কর্ম জীবন শুরু করেন। এরপর থেকেই জমি চাষ থেকে শুরু করে গরু পালন পর্যন্ত বাবাকে সব কাজে সাহায্য করতে থাকেন তিনি। দু-জনের উপার্জনে ছোট তিন ভাই বোন রাসেল, সোহেল ও সালমাকে পড়া লেখা করান।

প্রতিবন্ধী হিসেবে দাদা হামিদ মিয়ার কাছ থেকে পাওয়া ১৩ শতাংশ জমির উপর ২০১১ সালে তৈরি করেন লেয়ার মুরগি খামার। মাসুদের খামারে প্রায় ২৩শ লেয়ার মুরগি রয়েছে। স্থানীয় বাজারের ডিমের চাহিদা পূরণ করছে মাসুদের খামার। প্রথম পর্যায়ে খামারে লোকসান হলেও বর্তমানে তার মাসিক উপার্জন প্রায় দেড় লাখ টাকা।

tangail

ভোর থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত টানা কাজ করেও তার আত্মতৃপ্তি একটাই, তিনি নিজে উপার্জন করছেন। তার উপার্জনেই সংসার চলছে। এমনকি তার ভগ্নিপতি ( সালমার স্বামী) মো. সেলিম মিয়া গত চার বছর আগে হৃদরোগে মার যাওয়ার পর থেকে সালমার সংসার খরচ বাবত মাসে ১০ হাজার দিয়ে আসছেন তিনি।

২০০৫ সালে রেখা আক্তারকে বিয়ে করার পর থেকে দাম্পত্য জীবন শুরু হয় মাসুদের। তার ঘরে জন্ম হয়েছে অর্পা নামের এক মেয়ে সন্তানের। অর্পার বয়স এখন ৯ বছর। মঙ্গলহোড় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে চতুর্থ শ্রেণিতে পড়ালেখা করছে অর্পা।

মাসুদের বাবা সামাদ মিয়া ও মা মাসুমা বেগম বলেন, মাসুদকে কখনই তারা প্রতিবন্ধী মনে করেননি। এ অবস্থায় সরকারি লোকজন যে মাসুদের খামার পরিদর্শন করেছে এতে আমরা সরকারের প্রতি কৃতজ্ঞ। মাসুদ কিছু পাক আর না পাক তাতে কিছু আসে যায় না। মাসুদের প্রতি সরকার যে সহানুভুতি দেখিয়েছে এতেই খুশি।

দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী মাসুদ বলেন, প্রতিবন্ধীদের অনেকেই সমাজের বোঝা মনে করেন। কিন্তু সরকারি লোকজন আমার খামার পর্যন্ত এসেছে এতেই আমি খুশি।

তিনি আরো বলেন, প্রতিবন্ধী হিসেবে সমাজের বোঝা মনে না করে কর্মমূখী শিক্ষা গ্রহণ করে শ্রম ও মেধা খাটিয়ে নিজেকে সমাজের বোঝা থেকে সম্পদে পরিণত করা সম্ভব।

এফএ/এবিএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।