শার্শার ১৮৩৬টি খামারের গরু-ছাগল কুরবানির জন্য প্রস্তুত
ভারতীয় গরু এবার না আসায় কুরবানির ঈদ সামনে রেখে যশোরের বেনাপোল ও শার্শা উপজেলায় অন্তত এক হাজার ৮৩৬টি খামারে আদর-যত্নে লালিত হচ্ছে শত শত গরু ও ছাগল।
ঈদের বাজার ধরতে পশুর পরিচর্যায় এখন খামারিরা ব্যস্ত সময় পার করছেন। তবে অনেক খামারি তাদের গরু মোটাতাজাকরণে ইনজেকশন ও ট্যাবলেট ব্যবহার করছে অধিক মুনাফা লাভের আশায়। সেই সঙ্গে ভারত থেকে পুটখালীসহ অন্যান্য সীমান্ত দিয়ে সতর্কতার সঙ্গে চোরাইপথে বাংলাদেশে গরু প্রবেশ করানো হচ্ছে। যার পরিমাণ খুবই কম।
খামার মালিকদের দাবি, তাদের খামারে পালিত প্রতিটি গরুর দাম ১ লাখ থেকে ৫ লাখ টাকা পর্যন্ত। প্রতিটি গরু থেকে পাওয়া যাবে ৮ থেকে ২২ মণ মাংস। কুরবানির ঈদ বাজারে সরবরাহের জন্য বাইরের ব্যবসায়ীরা শার্শার খামারিদের কাছ থেকে গরু নিতে শুরু করেছেন।
যশোর-সাতক্ষীরা মহাসড়কের ধারে শার্শার উলাশি বাজারের পাশে তুহিনা বেগমের গরুর খামার। সেখানে রয়েছে ৩৮টি গরু।
তুহিনা বলেন, ১২ বছর আগে মাত্র ১২ হাজার টাকা দিয়ে একটি গরু কিনে এই ব্যবসায় আসি। ভারত থেকে গরু আসার কারণে প্রতি বছর লোকসানে পড়ছিলাম। এ বছর গরু আসা কমে যাওয়ায় ভালো লাভের আশা করছি। ঈদের আগেই ১০ লাখ টাকার গরু বিক্রি করেছি। গরু খামার ব্যবসায় সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা পেলে অনেকেই এ পেশায় আসতে উৎসাহী হবেন। পশুর উপযুক্ত দাম পাওয়া গেলে ভারত থেকে গরু আনার দরকার হবে না। স্থানীয় খামারিরাই দেশের মাংসের জোগান দিতে পারবেন বলে মনে করেন তুহিনা বেগম।
শার্শা-বেনাপোলের সবচেয়ে বড় গরুর খামার বেনাপোলের পুটখালীতে নাসির উদ্দিন ও জসিম উদ্দিনের। এদের উভয়ের খামারে দেশি গরু নেই বললেই চলে।
খামারের কর্মচারী আলী হোসেন জানান, এগুলো উন্নতজাতের গরু। এগুলো নেপাল ও ভুটান থেকে আনা। তবে হরিয়ানা জাতের গরু দেখতে সবচেয়ে বড়।
তিনি জানান, ইতোমধ্যে খামার থেকে ২০টি গরু সাড়ে ৩ লাখ টাকায় বিক্রি হয়ে গেছে। বাকি গরু বিক্রি হবে আরো কয়েক দিন পর। খামারে বর্তমানে যেসব গরু রয়েছে, তার প্রতিটি গরু কুরবানির ঈদকে সামনে রেখে ৪ থেকে ৫ লাখ টাকায় বিক্রি করা হবে।
গরুকে কি খাবার দিয়ে মোটাতাজা করা হচ্ছে এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ভাত, গমের ভুসি, পালিস ধানের কোড়া বিছালি খাবার খাওয়ানো হয়।
বেনাপোল সদর থেকে ৫ কিলোমিটার দক্ষিণে ভারত সীমান্তঘেঁষা গ্রাম পুটখালীর পশ্চিমপাড়ায় ৮ বছর আগে এই গরুর খামার গড়ে তোলেন নাসির উদ্দিন। শুরুর দিকে খামারে অল্পসংখ্যক গরু থাকলেও এখন এর সংখ্যা ১৭০টি। অপরদিকে জসিমের খামারে শতাধিক গরু আছে।
এসব গরুর সার্বক্ষণিক পরিচর্যা ও দেখভালে ২৫ জন কর্মচারী। এই খামারের প্রতিটি গরুর মূল্য সর্বনিম্ন ২ লাখ ঊর্ধ্বে ৭ লাখ। একেকটির ওজন ২০ থেকে ২২ মণ।
খামার মালিক নাসির বলেন, ভারতীয় গরু দিয়েই আট বছর আগে প্রথমে গরুর খামারের ব্যবসা শুরু করি। ভারত থেকে আনা গরু এবং স্থানীয় বাজার থেকে কেনা প্রতিটি গরু ৬/৭ মাস খামারে রেখে পরিচর্যা করার পর বিক্রি করলে ভালোই লাভবান হওয়ায় এই ব্যবসার প্রতি আমার আগ্রহ বেড়ে যায়।
২০১৪ সালের শেষ দিকে বিএসএফের বাড়াবাড়িতে ভারতীয় গরু আসা কমে যাওয়ায় খামার ব্যবসায় নজর দেই। বর্তমানে আমার দুটি খামার রয়েছে। সন্তানের মতো খেয়াল রেখে গরু লালন-পালন করে আজ আমরা সফল খামারি বলেন নাসির উদ্দিন ও জসিম।
খামার ব্যবসায়ীরা অভিযোগ করে বলেন, ভারতীয় গরুর চাপে অন্তত পাঁচ বছর তারা এই খাতে কোনো সুফল পাননি। অনেকেই আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছিলেন, তবে এবার সুফল আসতে শুরু করেছে বলেন জানান খামারিরা।
শার্শা উপজেলা প্রাণিসম্পদ অধিদফতরের কর্মকর্তা জয়দেব সিংহ বলেন, শার্শা উপজেলার ১১টি ইউনিয়ন ও বেনাপোল পৌরসভায় মোট ১ হাজার ২০০টি গরুর ছোটবড় খামার রয়েছে। এসব খামারের মধ্যে ৯৫০টি গরু মোটাতাজাকরণ খামার আর ২৫০টি গাভীর দুধের ছোট-বড় খামার। ছাগলের খামার আছে ৬৩৬টি। যেগুলো তিনি প্রতিনিয়ত মনিটরিং করেন। এসব খামার থেকে কয়েক হাজার সুস্থ সবল গরু আগামী কুরবানি ঈদে বাজারজাত করতে পারবেন খামারিরা।
তিনি জানান, তার নিয়ন্ত্রণে খামারগুলোতে সকল গরু সুস্থ ও স্বাস্থ্যবান।
এ ব্যাপারে খুলনা ২১ বিজিবির ব্যাটালিয়নের কমান্ডিং অফিসার লে. কর্নেল আরিফুল হক জানান, আমি দায়িত্ব নেওয়ার পর গত জানুয়ারি থেকে আগস্টের ১৫ তারিখ পর্যন্ত ভারত থেকে গরু এসেছে মাত্র ২ হাজার ৫২৪টি। এর মধ্যে শুধু জানুয়ারি মাসে এসেছিল এক হাজার ৯০০টি। আর বাকি মাসগুলোতে এসেছে ৬২৪টি, যা থেকে সরকারের রাজস্ব এসেছে ১ কোটি ৫ লাখ ২২ হাজার ৬০০ টাকা। গরু আসার পরিমাণ দিন দিন শূন্যের কোটায় চলে আসছে। বর্তমানে সীমান্তের সকল গরু ব্যবসায়ী ও রাখালদের ভারত থেকে গরু আনার ব্যাপারে নিষেধ করে দেওয়া হয়েছে। যদি কেউ জিরোপয়েন্টে গরু নিয়ে আসে, তবে তারা গরু নিতে পারবে। দেশি গরুর খামারের জন্য সবাইকে উদ্ধুদ্ধ করা হচ্ছে। ভারত থেকে গরু আনতে গিয়ে নিরীহ কেউ জীবন হারাক এটা মেনে নেওয়া হবে না।
এমএএস/এবিএস