দ্বিগুণ দামে সীমান্ত দিয়ে আনা হচ্ছে ভারতীয় গরু


প্রকাশিত: ১০:৩০ এএম, ৩১ আগস্ট ২০১৬

ঈদুল আজহা সামনে রেখে উত্তরের জেলা লালমনিরহাট সীমান্ত দিয়ে বেড়েছে ভারতীয় গবাদিপশু আমদানি। ভারতীয় গরু প্রবেশ করায় হাটগুলোতে কমে গেছে দেশি গরুর চাহিদা। গরুর দাম বেড়েছে দ্বিগুণ। সীমান্ত দিয়ে অবৈধ পথে গরু পারাপারের ফলে রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার।

হাটগুলোতে দেশি গরুর পাশাপাশি ভারতীয় গরুও উঠছে। কিন্তু ভারত থেকে কম দামে আসা গরুগুলো সীমান্ত টপকাতেই দাম বেড়ে দ্বিগুণ হচ্ছে।

এদিকে ভারতীয় এসব গরু হাটে তুলতে গিয়ে সীমান্ত এলাকার গ্রাম পুলিশ, জনপ্রতিনিধি থেকে শুরু করে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কতিপয় অসৎ সদস্যকেও চাঁদা দিতে হয় বলে একাধিক সূত্র জানায়। তবে এসব গরু কিনে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে নিয়ে যেতে পরিবহন খরচসহ বিভিন্ন স্থানে চাঁদা দিতে দাম দ্বিগুণ হচ্ছে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।

অন্যদিকে হাটগুলোতে গরুর স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য প্রাণিসম্পদ বিভাগের লোকজনের দেখা মিলছে না। ফলে অনেকেই স্বাস্থ্য পরীক্ষার সনদ ছাড়াই দেশি-বিদেশি গরু কিনছে কোরবানির জন্য। এতে ঝুঁকি থেকে যাচ্ছে বলে মনে করছেন অনেকেই।

Lalmonirhat

বেশি দামে ওই সব গরু কিনছে সাধারণ ক্রেতারা। তবে বিজিবি বলছে, সরকারের রাজস্ব বাড়াতে ভারত থেকে আসা গরুর শতভাগ করিডোর করতে সহায়তা দেয়া হচ্ছে।

উত্তর অঞ্চলের অন্যতম গরু কেনা-বেচার স্থান বলে পরিচিত জেলার পাটগ্রাম রসুলগঞ্জ হাটে গিয়ে সরেজমিনে দেখা যায়, প্রচুর গরুর আমদানি হয়েছে। দেশি গরুর পাশাপাশি ভারতীয় ওই গরু কিনতে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে গরু ব্যবসায়ীরাও এসেছেন। তারা চাহিদামত গরু কিনে তা ট্রাকযোগে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে নিয়ে যাচ্ছেন।

জানা গেছে, ভারত থেকে যে পরিমাণ গরু আসে তার একটা বড় অংশ আসে লালমনিরহাট সীমান্ত দিয়ে। জেলার অন্যান্য উপজেলার মধ্যে সবচেয়ে বেশি গরু আসে পাটগ্রামের সীমান্ত দিয়ে। জেলা সদর উপজেলার মোঘলহাট ও আদিমারীর দুর্গাপুর-দুরাকুটি সীমান্ত পথেও প্রচুর ভারতীয় গরু ঢুকছে। এছাড়া জেলার কালীগঞ্জ উপজেলার চাপারহাট ও চামটা, হাতীবান্ধার দইখাওয়া ও বড়খাতা এলাকা দিয়েও ভারতীয় গরু আসে বলে জানা গেছে। এসব সীমান্ত লাগোয়া হাটেই মূলত ভারতীয় গরু বেচাকেনা হয় বেশি।

কাস্টমস কর্তৃপক্ষ তাদের নির্ধারিত ফরম পূরণের পর প্রতিটির গরুর জন্য ৫০০ টাকা হারে জমা নিয়ে ‘করিডোর’ ছাড়পত্র দেবে। এরপরই তা বৈধ বলে বিবেচিত হবে। আর ওই ছাড়পত্র দেখিয়ে বিজিবির কাছ থেকে সেই গরু বিক্রির জন্য দেশের যে কোনো হাটে নিয়ে যাওয়া যাবে। আবার টোকেন না নিয়ে সীমান্তের ওপারে গরু আনার পর কারবারিরা বিজিবির মাধ্যমে কাস্টমস ছাড়পত্র নিতেও পারেন। ফলে আমদানি না হলেও সীমান্ত পেরিয়ে এই প্রক্রিয়াতেই দেশে ভারতীয় গরু আসছে বলে একাধিক সূত্রে জানা গেছে।

Lalmonirhat

ভারত থেকে গরু আনায় নিয়োজিত রাখালরা জানান, স্থানীয় গ্রাম পুলিশ থেকে শুরু করে জনপ্রতিনিধি ও সরকারের বিভিন্ন সংস্থাসহ অনেককেই চাঁদা দিতে হয়। ভারতে থেকে আসা অপেক্ষাকৃত কম দামের গরু বাংলাদেশিদের অনেক বেশি দামে কিনতে হয় বলে দাবি করেন তিনি।

সিরাজগঞ্জ থেকে পাটগ্রামের রসুলগঞ্জ হাটে আসা গরু ব্যবসায়ী ইয়াকুব আলী জানান, গরু ট্রাকযোগে ঢাকা, রাজশাহী নিয়ে যেতে পথে মোটর শ্রমিক, ট্রাক শাখা থেকে শুরু করে পুলিশকেও চাঁদা দিতে হয় বলেও জানান তিনি।

পাটগ্রাম কাস্টমস অফিস সূত্রে জানা গেছে, গত বছরের তুলনায় এ বছর অনেক বেশি গরু এসেছে। ওই অফিসে লালমনিরহাট জেলাসহ নীলফামারীর (একাংশ) সীমান্ত পথে আসা ভারতীয় গরুর করিডোর করে সরকারি রাজস্ব আদায় করে। এতে ২০১৫ সালে মোট ১৯ হাজার ৭১৩টি গরু করিডোর করা হলেও ২০১৬ সালে কয়েকগুণ বেড়েছে।

চলতি বছরের আগস্ট পর্যন্ত পাটগ্রামের ইসলামপুরের ওই কাস্টমস অফিসে ৩৪ হাজার ৫৪০টি গরু করিডোর হয়েছে বলে সংশ্লিস্ট সূত্রে জানা গেছে। অবৈধ পথে ভারতীয় গরুর শতভাগ করিডোর হয় না বলেও অভিযোগ রয়েছে।

লালমনিরহাট ১৫ বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) অধিনায়ক লে. কর্নেল বজলুর রহমান হায়াতী বলেন, গত বছরের তুলনায় এ বছর প্রচুর সংখ্যক ভারতীয় গরু আসছে বাংলাদেশে। আমরা ওই সব গরু শতভাগ করিডোর করে সরকারের রাজস্ব বাড়াতে সহায়তা করছি।

এআরএ/এবিএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।