হিমু হত্যা মামলায় ৫ জনের ফাঁসি


প্রকাশিত: ১০:১৮ এএম, ১৪ আগস্ট ২০১৬

কুকুর লেলিয়ে দিয়ে ছাদ থেকে ফেলে চট্টগ্রামের কলেজছাত্র হিমাদ্রি মজুমদার হিমু হত্যা মামলায় পাঁচ আসামির সবাইকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন আদালত। হত্যাকাণ্ডের প্রায় সাড়ে ৪ বছর পর রোববার বিকেল ৪টায় চট্টগ্রামের চতুর্থ অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ নুরুল ইসলাম মানিক এ রায় ঘোষণা করেন।

বাদীপক্ষ ঘটনা সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণ করতে সক্ষম হওয়ায় দণ্ডবিধির ৩০২/৩৪ ধারায় মৃত্যু নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত ফাঁসির রশিতে ঝুলিয়ে আসামিদের মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের আদেশ দেন আদালত।
 
দণ্ডিত আসামিরা হলেন- ব্যবসায়ী শাহ সেলিম টিপু, তার ছেলে জুনায়েদ আহমেদ রিয়াদ, রিয়াদের বন্ধু জাহিদুর রহমান শাওন, শাহাদাত হোসেন সাজু ও মাহবুব আলী ড্যানি।

CTG

রায় ঘোষণার সময় পলাতক আসামি জুনায়েদ আহমেদ রিয়াদ ও জাহিদুর রহমান শাওন ছাড়া বাকি তিনজন আদালতে উপস্থিত ছিলেন। রায় ঘোষণার পর তাদেরকে বিমর্ষ দেখা যায়। তারা গণমাধ্যমের ক্যামেরা থেকে বার বার নিজেদের মুখ আড়াল করছিল।

রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী (পিপি) অনুপম চক্রবর্ত্তী এ খবর নিশ্চিত করেছেন। তিনি রায়ে সন্তোষ প্রকাশ করে বলেন, রায়ে আমরা খুশি। আশা করছি উচ্চ আদালতও এ রায় বহাল রাখবেন। তিনি বলেন, এ রায়ের মাধ্যমে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা হলো।

আদালত সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, প্রথমবার গত ২৮ জুলাই (বৃহস্পতিবার) রায় ঘোষণার কথা থাকলেও বিচারক ছুটিতে থাকায় তা পিছিয়ে ১১ আগস্ট রায় ঘোষণার সময় নির্ধারণ করেছিলেন আদালত।

এরপর ১০ আগস্ট জানা যায় চট্টগ্রাম আদালতের মৃত আইনজীবীদের স্মরণে পরদিন ‘ফুল কোর্ট রেফারেন্স’ থাকবে। এ কারণে ওইদিনও রায় ঘোষণা হয়নি। সর্বশেষ এ মামলায় রায় ঘোষণা করতে রোববার (১৪ আগস্ট) দিন নির্ধারণ করেন আদালত।

Himu

মামলার বিবরণে জানা যায়, মাদক বিক্রিতে বাধা দেয়ায় ২০১২ সালের ২৭ এপ্রিল নগরীর পাঁচলাইশ আবাসিক এলাকার ১ নম্বর সড়কের ‘ফরহাদ ম্যানশন’ নামের (১০১ নম্বর বাড়ি) ব্যবসায়ী শাহ সেলিম টিপুর বাড়ির ছাদ থেকে হিমাদ্রি মজুমদার হিমুকে হিংস্র কুকুর (বিদেশি) লেলিয়ে আক্রমণ ও ধাক্কা দিয়ে ভবনের ছাদ থেকে ফেলে দেয় অভিজাত পরিবারের কয়েকজন বখাটে তরুণ।

গুরুতর আহত হিমুকে প্রথমে চট্টগ্রাম এবং পরে ঢাকার একটি হাসপাতালে উন্নত চিকিৎসার জন্য নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে ২৬ দিন মৃত্যুর সঙ্গে লড়ে ঐ বছরের ২৩ মে মারা যায় সে। তখন হিমু পাঁচলাইশ আবাসিক এলাকার ১ নম্বর সড়কের ইংরেজি মাধ্যমের সামারফিল্ড স্কুল অ্যান্ড কলেজের ‘এ’ লেভেলের শিক্ষার্থী ছিল।

এ ঘটনায় হিমুর মামা শ্রী প্রকাশ দাশ অসিত বাদী হয়ে পাঁচলাইশ থানায় পাঁচজনকে আসামি করে একটি মামলা দায়ের করেন।

মামলায় আসামি করা হয়- ব্যবসায়ী শাহ সেলিম টিপু, তার ছেলে জুনায়েদ আহমেদ রিয়াদ এবং রিয়াদের তিন বন্ধু শাহাদাৎ হোসাইন সাজু, মাহাবুব আলী খান ড্যানি এবং জাহিদুল ইসলাম শাওনকে।

মামলা হওয়ার এক মাস পর শাহাদাত হোসেন সাজু এবং পরে ব্যবসায়ী শাহ সেলিম টিপু ও জুনায়েদ আহমেদ রিয়াদ আদালতে আত্মসমর্পণ করেন। পরে তিনজনই জামিনে মুক্তি পেয়ে বেরিয়ে যান।

২০১২ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর পাঁচলাইশ থানা পুলিশ ওই মামলায় এজাহারভুক্ত পাঁচজনকে আসামি অন্তর্ভুক্ত করে আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন। ১৮ অক্টোবর পালাতক আসামিদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন আদালত।

চার্জশিট দেয়ার প্রায় দেড় বছর পর ২০১৪ সালের ৩ ফেব্রুয়ারি পাঁচ আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন চট্টগ্রাম মহানগর দায়রা জজ আদালত।

একই বছরের ১৮ ফেব্রুয়ারি মামলায় সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়। ২০১৫ সালের বছরের ১০ সেপ্টেম্বর শুরু হয় যুক্তি উপস্থাপন।

এদিকে ২০১৪ সালের ১৫ জুলাই হিমু হত্যা মামলা চট্টগ্রামের বিভাগীয় দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে স্থানান্তর করা হয়। এর আগে মামলাটি চট্টগ্রামের চতুর্থ অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ শহীদুল ইসলামের আদালতে বিচারাধীন ছিল।

দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে গত ৫ আগস্ট প্রথমবারের মতো শুনানির দিন ধার্য থাকলেও ২১ জুলাই হাইকোর্টের বিচারপতি নাইমা হায়দার ও জাফর আহমদের বেঞ্চ মামলার বিচার কাজ ৬ মাসের জন্য স্থগিত করেন। যার আদেশ চট্টগ্রাম আদালতে পৌঁছে ৪ আগস্ট। এ কারণে পরে আর এ মামলার শুনানি হয়নি।

এরপর ৭ আগস্ট বাদীপক্ষের আবেদনের প্রেক্ষিতে হাইকোর্টের একই বেঞ্চ স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার করে নেয়। প্রত্যাহার সংক্রান্ত আদেশটি বিচারিক আদালত চট্টগ্রামের চতুর্থ অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ শহীদুল ইসলামের আদালতে এসে পৌঁছালে ফের এ চাঞ্চল্যকর মামলার বিচার কার্যক্রম শুরু হয় বলে জানায় আদালত সূত্র।

৬ জন সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণ শেষে ২০১৫ সালের ১০ সেপ্টেম্বর আদালতে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শুরু হয়। যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষে প্রায় সাড়ে ১০ মাস পর চলতি বছরের ১৬ জুলাই আদালত জানায় ২৮ জুলাই রায় ঘোষণা করবেন।

উল্লেখ্য, হিমু হত্যা মামলায় জামিনে থাকা দুই আসামি শাহ সেলিম টিপু ও শাহাদাত হোসাইন সাজু ইতোমধ্যে আদালতে আত্মসমর্পণ করলে আদালত তাদের কারাগারে পাঠান। মামলার আরেক আসামি মাহাবুব আলী খান ড্যানি আগে থেকেই কারাগারে আছেন। বাকি দুই আসামি জুনায়েদ আহমেদ রিয়াদ ও জাহিদুল ইসলাম শাওন পলাতক রয়েছেন।

এদের মধ্যে রিয়াদ শুরুতে কারাগারে থাকলেও পরে পলাতক হন। আর শাওন শুরু থেকেই পলাতক রয়েছে।

রায়ে সন্তুষ্টি প্রকাশ করে নিহত হিমুর বাবা প্রবীর মজুমদার বলেন, এ মামলার শুরু থেকে অনেক প্রভাবশালী সক্রিয় থাকায় মামলাটি নানাভাবে বাধাগ্রস্ত করার চেষ্টা হয়েছে। তিনি ও তার পরিবার প্রত্যাশিত ন্যায়বিচার পেয়েছেন বলেও জানান তিনি।

মামলার বাদী ও নিহতের মামা শ্রী প্রকাশ দাশ অসিত বলেন, রায়ে আমরা খুশি। আমরা ন্যায়বিচার পেয়েছি। আশা রাখি উচ্চ আদালতে আপিল হলেও এ রায় বহাল থাকবে।

জীবন মুছা/এসএইচএস/আরআইপি

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।