বিরল রোগে আক্রান্ত ঠাকুরগাঁওয়ের রিপন


প্রকাশিত: ০৬:৪৭ এএম, ১৩ আগস্ট ২০১৬

‘মা-বাবা আর দুই বইন ছাড়া আমাক কেউ পছন্দ করে না। স্কুলে কেউ আমার কাছে আসতে চায় না। ঠিকমতো খাইতে পারি না। চামুচ দিয়া ভাত খাই। অন্য বন্ধুদের মতো খেলতে পারি না। কোনো কাজ করতে পারি না।’

এক বুক হাহাকার নিয়ে খুব নিচু স্বরে কথাগুলো বলছিল আট বছর বয়সী শিশু রিপন। জন্মের চার মাসের মাথায় অজ্ঞাত ও জটিল এক রোগে আক্রান্ত হয় সে। গুটি গুটি শুকনো ঘায়ে ভরে গেছে তার হাত-পায়ের তালু। অজ্ঞাত রোগে বন্দি হয়ে পড়েছে তার শৈশব।

ঠাকুরগাঁওয়ের পীরগঞ্জ উপজেলার দৌলতপুর ইউনিয়নের কেউটগাঁও গ্রামের মহেন্দ্র রামের একমাত্র ছেলে রিপন। কেউটগাঁও সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে দ্বিতীয় শ্রেণিতে পড়ে সে।

শনিবার সকালে মহেন্দ্র রামের বাড়ি গিয়ে দেখা যায়, রিপনের হাত-পায়ের তালুর ঘাগুলো গোলাকার ও কোনাকৃতি। কোনো কোনোটি লম্বাকৃতি বিস্কুটের মতো দেখতে। নখগুলো বড় হয়ে সামনের দিকে কুঁকড়ে গেছে। তার মাথায় কালো শুকনো ঘা। ঠোঁটেও ছোট ছোট ঘা।

Ripon

রিপনের মা গোলাপী রানী রায় জানান, ২০০৮ সালে জন্মের চার মাসের মাথায় রিপনের মাথা, হাত ও পায়ের তালুতে ঘামাচির মতো দেখা দেয়। তবে ঘামাচিতে কোনো রস দেখা যায়নি। চার-পাঁচ মাস পর ঘামাচিগুলো বড় আকার ধারণ করে। তিন-চার মাস পর সেগুলো কালো হয়ে যায়। ধীরে ধীরে হাত-পায়ের তালুগুলো জালের মতো ফাটতে থাকে।

এরপর থেকে আস্তে আস্তে ঘা বড় হতে থাকে। তিনি বলেন, ‘হাত-পায়ের গুটিগুলোর দু-একটার মাঝে মাঝে খসে পড়ে। ওইগুলো পাথরের মতো শক্ত। নখ কাটলেই রক্ত বের হয়। তাই কাটি না।’

ঠাকুরগাঁও আধুনিক সদর হাসপাতালের শিশু রোগ চিকিৎসক ডা.শাহাজাহান নেওয়াজ বলেন, ‘এটি ফাঙ্গাল ইনফেকশন হতে পারে। তবে আর্সেনিকোসিসের বিষয়টিও মাথায় রাখা দরকার। উন্নত চিকিৎসা পেলে শিশুটি সুস্থ হয়ে উঠতে পারে।’

ঠাকুরগাঁও জেলা প্রশাসক মূকেশ চন্দ্র বিশ্বাস জানান, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে শিশু রিপনের ছবি দেখতে পাই। পরে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার মাধ্যমে এই পরিবারের খোঁজখবর নিয়ে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার কথা বলা হয়েছে। ঠাকুরগাঁও সিভিল সার্জন রিপনের পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য ঢাকায় যোগাযোগ করছেন।

রবিউল এহসান রিপন/এসএস/এবিএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।