ক্রসফায়ারের ভয় দেখিয়ে মাদরাসা শিক্ষকদের হয়রানি


প্রকাশিত: ০২:২৬ পিএম, ১২ আগস্ট ২০১৬

বাগেরহাটে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পরিচয়ে উড়োফোনে কথিত জঙ্গি তালিকায় নাম ও ক্রসফায়ারের ভয় দেখিয়ে মাদরাসা শিক্ষকদের সঙ্গে প্রতারণার করছে একটি চক্র। এ চাঁদাবাজ চক্রটি উড়োফোনে শিক্ষকদের কাছ থেকে চাঁদা দাবি করছে। এমন উড়ো ফোনে জেলার মাদরাসা শিক্ষকদের মধ্যে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে।    

জানা যায়, প্রতারক চক্রটি পুলিশের গোয়ন্দা বিভাগের পরিচয় দিয়ে মাদরাসা সুপার ও শিক্ষকদের বিভিন্ন নম্বর থেকে দফায় দফায় ফোন করে ভয় দেখিয়ে ফাঁদে ফেলার চেষ্টা করছে। ফোন পেয়ে শিক্ষকদের কেউ কেউ ছুটে গেছেন জেলা ডিবি পুলিশের কার্যালয়, আবার কেউ কেউ গেছেন স্থানীয় থানা পুলিশের কাছে। কিন্তু এতেও আতঙ্ক কাটছে না শিক্ষকদের।

বিভিন্ন মাদরাসা প্রধান ও জেলা গোয়েন্দা পুলিশ সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, জেলার ফকিরহাট, মোল্লাহাট ও মংলা উপজেলার মাদরাসা শিক্ষকদের কাছে এমন উড়োফোন আসছে। বিষয়টি তারা গোয়েন্দা পুলিশকে জানিয়েছেন।   

পুলিশ জানায়, বাগেরহাটের মংলা পৌর শহরতলীর আরাজী মাকোডোন দাখিল মাদরাসা সুপার মো. মনিরুজ্জামানকে গত সোমবার বিকাল ৩টায় পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের এসআই আলতাফ পরিচয় দিয়ে ০১৮৫৯১৬৬৪৩০ এ নাম্বার থেকে ফোন করা হয়।

এ সময় ওই মাদরাসা সুপারকে বলা হয় জেলা পুলিশের গোয়েন্দা শাখার জঙ্গি তালিকায় আপনার নাম রয়েছে, ইচ্ছে করলে আপনি এ তালিকা থেকে নিজের নাম কাটাতে পারেন। কিছুক্ষণ পর আমার স্যার আপনাকে ফোন করবে তাকে রাজি খুশি করাতে পারলে আপনার নাম কাটানো সম্ভব হবে বলেও ফোনে জানানো হয়।

এরপর জেলা গোয়েন্দা পুলিশের তদন্ত কর্মকর্তা দাবি করে জনৈক মিজানুর রহমান সন্ধ্যা ৭টা ২৫মিনিটে ০১৬১১১০৯৭৪২ নাম্বার থেকে মাদরাসা সুপার মো. মনিরুজ্জামানকে ফোন করেন। এ সময় গোয়ন্দা পুলিশের কর্মকর্তা পরিচয় দিয়ে বলেন, বিকালে আমার অফিস থেকে আপনাকে ফোন করা হয়েছিল এবং আপনি নিশ্চয়ই সবকিছু শুনে নিয়েছেন!

এখন জঙ্গি তালিকার লিস্ট আমার টেবিলে। এ তালিকা ধরেই ক্রসফায়ার দেয়া হবে। আর আপনি যদি এ তালিকা থেকে নাম কাটাতে চান তা হলে কিছু ‘খরচা’ আছে। আর এ জন্য আপনাকে জেলা সদরে এসে আমার সঙ্গে সরাসরি কথা বলতে হবে। এ কথা বলেই ফোন কেটে দেয়া হয়।
 
একইভাবে মংলার কোরবান আলী মাদরাসার অধ্যক্ষ মো. গোলাম মোস্তফা, চাঁদপাই পীর মোছের শাহ দাখিল মাদরাসার সুপার মাওলানা মো. হুমায়ূন কবির, দক্ষিণ চিলা মাদরাসা সুপার মাওলানা নওশের আলী, কচুবুনিয়ার দারুস সুন্নাত দাখিল মাদরাসার সুপার মাওলানা কবির হোসেনসহ আরো অনেক মাদরাসা শিক্ষককে একই নম্বর থেকে ফোন করেন পুলিশের গোয়েন্দা শাখার কর্মকর্তা পরিচয়দানকারী ওই দুই প্রতারক। এ ঘটনায় মঙ্গলবার সন্ধ্যায় মাদরাসা শিক্ষকরা থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন।

এ বিষয়ে বাগেরহাট পুলিশ সুপার পংকজ চন্দ্র রায় বলেন, এই প্রতারক চক্রের কললিস্ট সংগ্রহ চলছে। পাশাপাশি গোয়েন্দা পুলিশ তাদের গতিবিধির ওপর নজরদারি করছে। এছাড়া প্রতারক চক্রের কাছ থেকে ফোন পেলে সংশ্লিষ্ট থানা অথবা সরাসরি পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে যোগাযোগ করার জন্য মাদরাসা শিক্ষকদের পরামর্শ দেয়া হয়।

শওকত আলী বাবু/এএম/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।