পশু-পাখি শূন্য কামারুজ্জামান কেন্দ্রীয় উদ্যান ও চিড়িয়াখানা


প্রকাশিত: ০৫:৪৯ এএম, ২৭ জুলাই ২০১৬

অযত্ন, অবহেলা ও নানা ধরনের অনিয়মের কারণে আজ ধ্বংসের মুখে রাজশাহীর শহীদ এএইচএম কামারুজ্জামান কেন্দ্রীয় উদ্যান ও চিড়িয়াখানা। একটি চিড়িয়াখানায় যে ধরনের পশু-পাখি থাকা প্রয়োজন তার একাংশও নেই এখানে।

অপরিচ্ছন্ন পরিবেশ ও সঠিক ব্যবস্থাপনার অভাবে দিন দিন কমে যাচ্ছে দর্শনার্থীদের সংখ্যা। আর বেশিরভাগ খাঁচায় নেই পশুপাখির পরিচিতিমূলক নামফলক।

উদ্যানের ভেতরে যত্রতত্র বেড়ে উঠেছে গাছপালা। ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে রয়েছে ময়লা-আর্বজনা। এখনই যুগান্তকারী পদক্ষেপ গ্রহণ না করলে, ভবিষ্যতে এটিকে আর চিড়িয়াখানা বলা সম্ভব হবে না বলে মনে করছেন নগরবাসী।

Rajshahi-Zoo

সরেজমিনে রাজশাহী এএইচএম কামারুজ্জামান কেন্দ্রীয় উদ্যান ও চিড়িয়াখানা ঘুরে দেখা গেছে, চিড়িয়াখানার বেশিরভাগ খাঁচা পশুপাখি শূন্য। যা আছে তা যৎ সামান্য। অধিকাংশ খাঁচায় পশুপাখির পরিচিতিমূলক কোনো নামফলক নেই।

খরগোশের খাঁচায় গিয়ে দেখা যায়, খরগোশগুলো নোংরা ও জরাজীর্ণ অবস্থায় রয়েছে। খাঁচার মেঝে পরিষ্কার করা হয় নি বহুদিন। অজগরের সামনে নেই কোনো খাবার। মেছো বাঘগুলো দুর্বল ও জরাজীর্ণ। ঘোড়া ও গাধাগুলো পর্যাপ্ত খাবার না পেয়ে রুগ্ন ও দুর্বল অবস্থায় রয়েছে। এছাড়া উদ্যানের ভেতরে যত্রতত্র বেড়ে উঠেছে ঘাস-আগাছা।

চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষের দেয়া তথ্যানুযায়ী, ২০০৩ সালে রাজশাহীর কেন্দ্রীয় উদ্যান ও চিড়িয়াখানায় ছিল দুটি সিংহ, একটি রয়েল বেঙ্গল টাইগার, ১৯৪টি চিত্রা হরিণ, দুটি মায়া হরিণ, ২৬টি বানর, ৯টি বেবুন, চারটি গাধা, দুটি ভালুক, একটি ঘোড়া, দুটি সাদা ময়ূর, তিনটি দেশি ময়ূর, ৮৫টি তিলা ঘুঘু, ৬৮টি দেশি কবুতর, চারটি সজারু, ২৮টি বালিহাঁস, দুটি ওয়াকপাখি, একটি পেলিকেন, ছয়টি টিয়া, চারটি ভুবন চিল, চারটি বাজপাখি, একটি হাড়গিল, তিনটি হুতোম পেঁচা, ৯টি শকুন, দুটি উদবিড়াল, তিনটি ঘড়িয়াল ও একটি অজগর।

বর্তমানে কেন্দ্রীয় উদ্যান ও চিড়িয়াখানায় রয়েছে সাতটি গাধা, ২০টি বানর, বেবুন দুইটি, হনুমান ২টি, মায়া হরিণ একটি, চিত্রা হরিণ ৪৪টি, মেছো বাঘ দুইটি, বনবিড়াল ২টি, গন্ধ গোকুল চারটি, ভালুক ১টি, খরগোশ আটটি, হুতোম পেঁচা দুইটি, হাড়গিলা একটি, রাজহাঁস ৪৮টি, বালিহাঁস ৬টি, তিলা ঘুঘু ১২টি, সাদা ময়ূর একটি, কাকাতুয়া একটি, পাতিহাঁস একটি, হাইব্রিড কবুতর ১১০টি, দেশি কবুতর ২০টি, কালিম পাখি একটি, চখা সাতটি, ঘড়িয়াল দুইটি, অজগর একটি, কচ্ছপ তিনটি, বক ৬টি, বড় বক সাদা দুইটি, ওয়াক পাখি একটি, পেলিকেন একটি, চিল পাখি একটি, মাছ মুরাল একটি ও তিলা ঘুঘু ৯০টি।

Rajshahi-Zoo

তবে বর্তমানে চিড়িয়াখার এ রুগ্ন ও করুণ অবস্থার জন্য কর্তৃপক্ষকেই দায়ী করছেন চিড়িয়াখানায় বেড়াতে আসা দর্শনার্থীরা।

মহানগরীর চন্ডীপুর এলাকা থেকে সপরিবারে বেড়াতে আসা রফিকুল ইসলাম নামের এক ব্যবসায়ী জানান, আগে চিড়িয়াখানায় পর্যাপ্ত পশু-পাখি ছিল। দিন দিন এদের সংখ্যা কমতে কমতে প্রায় পশু-পাখি শূন্য হয়ে যাচ্ছে চিড়িয়াখানাটি।

বর্তমানে এই চিড়িয়াখানায় সিংহ ও বাঘ নেই। বানরের সংখ্য কমতে শুরু করেছে। চিড়িয়াখানাটি রক্ষায় কর্তৃপক্ষ এখনই ব্যবস্থা না নিলে এটিকে আর চিড়িয়াখানা হিসেবে পরিচয় দেয়া যাবে না বলে মন্তব্য করেন তিনি।

পরিবারের সবাইকে নিয়ে অবসর কাটাতে আসা মহানগরীর সিঅ্যান্ডবি মোড় কাজিহাটা এলাকার গৃহবধূ মৌসুমী খাতুন জানান, বাচ্চাদের নিয়ে তিনি অনেক আগে থেকেই এই চিড়িয়াখানায় বেড়াতে আসতেন। আগে এই চিড়িয়াখানায় পশু-পাখিও ছিল পর্যাপ্ত। বাচ্চারা এখানে এসে অনেক মজা করতো। কিন্তু এখন পশু-পাখি নেই বললেই চলে।

Rajshahi-Zoo

 চারঘাট থেকে বেড়াতে আসা স্থানীয় কলেজের ছাত্র আলমগীর হোসেন জানান, বর্তমানে চিড়িয়াখানার ভেতরের বিভিন্ন স্থানে আবর্জনা ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে থাকে। ফাঁকা জায়গাগুলো বড় বড় ঘাস ও জঙ্গলে ভরে গেছে। পশু-পাখির সংখ্যাও কম। তাই আগের মতো তিনি আর ঘন ঘন বেড়াতে আসেন না।   

এ ব্যাপারে রাজশাহী এএইচএম কামারুজ্জামান কেন্দ্রীয় উদ্যান ও চিড়িয়াখানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ডা. ফরহাদ উদ্দীন জানান, চিড়িয়াখানার খাঁচাগুলো আসলে ছোট। চিড়িয়াখানার অবকাঠামোগত উন্নয়ন হলেও খাঁচাগুলোর ঠিক সেইভাবে বড় করা যায় নি। একটি পশুপাখির মুভমেন্টের জন্য যে পরিমাণ জায়গা দরকার তাও এই চিড়িয়াখানায় নেই। ফলে পশুগুলোকে রুগ্ন ও দুর্বল দেখায়। তবে দ্রুত খাঁচাগুলো বড় পরিসরে করার কাজ শুরু হবে।

পশুপাখির পরিচিতিমূলক কোনো ফলক নেই কেন জিজ্ঞেস করলে তিনি জানান, গত তিনদিন আগে নামফলকগুলো খুলে নিয়ে আসা হয়েছে। সূর্যের আলো পড়ে লেখাগুলো বিবর্ণ হয়ে যাওয়ায় সেগুলো খুলে এনে নতুনভাবে লেখা হচ্ছে। কয়েকদিনের মধ্যে এগুলো আবার লাগানো সম্ভব হবে। এছাড়াও নতুন পশুপাখি আনার বিষয়ে কথা চলছে বলে জানান তিনি।

Rajshahi-Zoo

এ ব্যাপারে রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের দায়িত্বপ্রাপ্ত মেয়র নিযাম-উল-আযীম জানান, চিড়িয়াখানায় বিভিন্ন অনিয়মের খবর শুনে গত মে মাসে সেখানে তিনি অভিযান চালিয়েছিলেন। এ সময় চিড়িয়াখানার পশু-পাখিদের ভেজাল ও পঁচা-বাসি খাবার জব্দ করেন তিনি। এ ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে দায়িত্বে অবহলোর জন্য এ সময় তিনি চিড়িয়াখানার ফার্মাসিস্টকে বরখাস্ত এবং পশু খাদ্য সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান ‘সাকিব এন্টারপ্রাইজের’ কার্যাদেশ বাতিলের নির্দেশ দেন। এছাড়াও ওই প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্স বাতিল ও জামানত বাজেয়াপ্তেরও নির্দেশ দেন তিনি।

এরপর থেকে চিড়িয়াখানার খাদ্য ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের ৪ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর রুহুল আমিন টুনু ও ৬ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর নুরুজ্জামান টুকুকে। চিড়িয়াখানায় নতুন নতুন পশু-পাখি নিয়ে আসার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে চিঠির মাধ্যমে অবহিত করেছেন বলেও জানান তিনি।

শাহরিয়ার অনতু/এসএস/পিআর

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।