ক্ষতিকর উপকরণ দিয়ে তৈরি হচ্ছে ভেজাল ও নিম্নমানের সেমাই
ঠাকুরগাঁওয়ে ঈদকে সামনে রেখে ভেজাল লাচ্ছা সেমাই তৈরির ধুম পড়েছে। স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর ও ঝুঁকিপূর্ণ উপকরণ দিয়ে নোংরা ও অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে তৈরি এসব লাচ্ছা সেমাই নামক বিষ আবার বাজারজাত করা হচ্ছে দেদারছে।
এদিকে, ভেজাল বিরোধী অভিযান শিথিল হয়ে পড়ায় বিএসটিআইয়ের অনুমোদন ছাড়াই এসব লাচ্ছা সেমাই বিক্রি করা হচ্ছে খোলা ও ক্ষতিকর পলি প্যাকেটে।
জানা গেছে, অধিকাংশ লাচ্ছা তৈরির কারখানা বিএসটিআই এর অনুমোদন ছাড়া প্রতিষ্ঠিত। এছাড়া যে সকল কারখানা গড়ে উঠেছে সেগুলোতে মানা হচ্ছে না কোনো হাইজিন নিয়মনীতি। নামি-দামি অনেক কোম্পানির লেভেল লাগিয়ে স্থানীয়ভাবে তৈরি এসব লাচ্ছা বাজারজাত করে আসছে মালিকরা। বিশেষ করে ভেজাল বিরোধী অভিযান শিথিল হয়ে পড়ায় লাচ্ছা সেমাই তৈরির ধুম পড়েছে।
শহরের অলি-গলিতে অস্থায়ী কারখানায় দিনরাত চলছে সেমাই তৈরির কাজ। আর অধিক মুনাফার আশায় এসব লাচ্ছায় ব্যবহার করা হচ্ছে নিম্নমানের ময়দা, পামওয়েলসহ পুড়ে যাওয়া তেল। শহরে হাতেগোনা কয়েকটি সেমাই ও লাচ্ছা তৈরির বৈধ কারখানা থাকলেও তারা বিপাকে পড়েছেন মৌসুমী ব্যবসায়ীদের দাপটে।
ঠাকুরগাঁও শহরের রোড, বিসিক শিল্প নগরী, সত্যপীর ব্রিজ, চৌদ্দহাত কালীসহ বিভিন্ন এলাকার আনাচে-কানাচে মৌসুমী লাচ্ছা তৈরির কারখানা চালু করা হয়েছে।
সরেজমিনে ঠাকুরগাঁও চৌদ্দহাত কালী এলাকার ভাই ভাই লাচ্ছা তৈরির কারখানা ঘুরে দেখা যায়, অতি নিম্নমানের পামওয়েল, ডালডা দিয়ে তৈরি হচ্ছে লাচ্ছা সেমাই। অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে, হাতে গ্লোবস ছাড়া, স্যাঁতসেতে পরিবেশে তৈরি হচ্ছে এসব লাচ্ছা নামক বিষ।
কারখানায় মানা হচ্ছে না কোনো হাইজিন নিয়ম কানুন। কিন্তু মালিক জোর গলায় বলছে, আমাকে সব ধরনের অনুমতি দেয়া হয়েছে।
এ সম্পর্কে কারখানা মালিকের সঙ্গে কথা হলে তিনি জানান, আমি ঈদে লাচ্ছা তৈরি করে বিক্রি করি। লাইসেন্স ও বিএসটিআইয়ের অনুমতি নেয়া আছে। শুধু ঈদের জন্যই আমার এখানে লাচ্ছা তৈরি করা হয়।
উৎপাদনে যাওয়া এসব অস্থায়ী কারখানায় গড়ে দৈনিক ২৫ থেকে ৮০ খাঁচি (প্রতি খাঁচিতে ১৮ কেজি) লাচ্ছা উৎপাদন হচ্ছে। স্থায়ী কারখানাগুলোতে উৎপাদিত হচ্ছে গড়ে প্রায় ১০০ থেকে ১৫০ খাঁচি। এসব কারখানায় উৎপাদিত লাচ্ছা রাতের আধারে চলে যাচ্ছে ঠাকুরগাঁওসহ বিভিন্ন বাজারের খুচরা ও পাইকারি দোকানগুলোতে। সেখানে প্রতি খাঁচি লাচ্ছা বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ৪০০ টাকা থেকে দেড় হাজার টাকায়। পরে তা সেখান থেকে বিভিন্ন এলাকার ছোট ছোট দোকানে চলে যাচ্ছে।
ঠাকুরগাঁও বেকারি মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক শহিদুল ইসলাম সাঈদের সঙ্গে এ বিষয়ে কথা হলে তিনি জানান, আমাদের সংগঠনের সদস্য হলে আর কোনো সমস্যা থাকে না। আর সেমাই হাত দিয়ে ছাড়া তৈরি করা সম্ভব না। আর এখন ঠাকুরগাঁওয়ে আগের মতো ভেজাল লাচ্ছা তৈরি হয় না।
ঠাকুরগাঁও জেলা স্যানেটারি ইন্সপেক্টর ফারুক হোসেন জানান, জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ দিয়ে এসব ভেজাল কারখানায় নিয়মিত অভিযান চালানো হবে এবং কোনো প্রকার অনিয়ম পেলে জরিমানা করা হবে।
রবিউল এহসান রিপন/এসএস/এবিএস