বাড়ির উঠানে লেবু চাষ করে খোকা মিয়ার সাফল্য
বাড়ির উঠানে লেবু চাষ করে স্বাবলম্বী হয়েছেন নওগাঁর বদলগাছীর কৃষক আব্দুল মজিদ খোকা মিয়া। গত ২০ বছর থেকে লেবু চাষ করে পরিবারের চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি বাজারে বিক্রি করে সংসারের খরচ চালাতে সক্ষম হয়েছেন। এতে সংসারের স্বচ্ছলতা ফিরে এসেছে।
উপজেলার আধাইপুর ইউনিয়নের বৈকুন্ঠপুর গ্রামের দিনমজুর আব্দুল মজিদ খোকা মিয়া এক সময় পরের বাড়িতে কামলা দিতেন। শখের বসে প্রতিবেশীর বাগান থেকে একটি লেবুর চারা এনে বাড়ির উঠানে লাগান। বছর যেতেই গাছে ফুল এসে ভরে যায়। মাস খানেকের মধ্যেই গাছে লেবু ধরা শুরু হয়। বাড়িতে নিজেদের খাবারের পাশাপাশি তিনি বাজারে কিছু লেবু বিক্রি করে কিছু টাকা পান। এরপর লেবু চাষে আগ্রহ তৈরি হয়।
বসতভিটা ছাড়া নিজের কোনো ফসলি জমি না থাকায় বাড়ির উঠানে দশকাঠা পরিমাণ জায়গায় শরবতী ও কাগজী লেবুর প্রায় দেড়শটি চারা রোপণ করেন। এক বছর পর গাছগুলোতে লেবু আসা শুরু হয়। লেবু চাষের মাধ্যমে ভাগ্যের চাকা খুলে যায় খোকা মিয়ার।
দিনমজুরের অভিশাপ থেকে মুক্ত হন তিনি। সংসারে এসেছে স্বচ্ছলতা। লেবুর বিক্রির আয় থেকে সংসারের বিভিন্ন কাজে খরচের পাশাপাশি তিন মেয়েকে বিয়ে দিয়েছেন তিনি।
আব্দুল মজিদ খোকা মিয়া বলেন, ২০ বছর আগে এই এলাকায় লেবুর বাগান তেমন ছিল না। এলাকা জুড়ে কালু চাচার একটি লেবুর বাগান ছিল। শখের বসে কালু চাচার বাগান থেকে একটি লেবুর চারা এনে রোপণ করেছিলাম। গাছে লেবুর পরিমাণ ভাল হওয়ায় পরে বাড়ির সামনের উঠানে দশকাঠা জমিতে প্রায় দেড় শতাধিক শরবতি ও কাগজী লেবুর চারা রোপণ করে বাগান তৈরি করি। এখন লেবুর বাগান থেকে ভাল লাভ আসছে।
তিনি আরো বলেন, বছরের আষাঢ় ও শ্রাবণ মাস লেবুর মৌসুম। ফলে এ দু`মাসে প্রায় ১৫/২০ হাজার টাকার মতো বিক্রি হয়। এছাড়া সারা বছরই কমবেশি লেবু বিক্রি হয়। আল্লাহর রহমতে এখন অন্যের বাড়িতে আর কাজ করতে যেতে হয় না।
খোকা মিয়ার স্ত্রী হাজেরা বেগম জানান, আগে আমাদের সংসারে খুবই অভাব ছিল। লেবুর বাগান থেকে আয় হওয়ার পর সংসারে স্বচ্ছলতা এসেছে। লেবু চাষের পাশাপাশি হাস, মুরগি ও ছাগল পালন করি। এছাড়াও লেবুর বাগানের ভেতরে ও বাইরের বিভিন্ন প্রকারের সবজি চাষ করা যায়। ফলে সংসার চালাতে তেমন কষ্ট হয় না।
খোকা মিয়ার দেখাদেখি বাগান করেছেন একই গ্রামের বিদ্যুৎ হোসেন। তিনি বলেন, লেবু চাষ এখন শুধু এই গ্রামে নয়, এখন এই ইউনিয়নের প্রায় সর্বত্রই লেবুর চাষ করছেন অনেকে। তবে লেবু কেনার জন্য বাইরে থেকে পাইকার না আসায় ভাল দাম পাওয়া যাচ্ছে না। পাইকারের মাধ্যমে বিভিন্ন জেলায় লেবু পাঠানো গেলে ভাল দাম পাওয়া যেত।
বদলগাছী কৃষি কর্মকর্তা হাসান আলী জানান, এ উপজেলায় প্রায় ১০ হেক্টরের মতো জমিতে বিভিন্ন জাতের লেবুর বাগান রয়েছে। তবে আধাইপুর ইউনিয়নে সাত হেক্টর জমিতে লেবুর বাগান রয়েছে। কৃষকদের সার্বিক পরামর্শ দেয়া হয়ে থাকে। এছাড়া আগামীতে লেবু চাষের পরিমাণ বৃদ্ধি পাবে।
এসএস/আরআইপি