ভাসানী সেতুতে মরণফাঁদ হয়ে দাঁড়িয়েছে রেলিংয়ের ফাঁকা স্থান

আনোয়ার আল শামীম আনোয়ার আল শামীম , জেলা প্রতিনিধি গাইবান্ধা
প্রকাশিত: ১১:৩৪ এএম, ১৮ অক্টোবর ২০২৫
ভাসানী সেতুর রেলিংয়ের মাঝের ফাঁকা স্থান নিয়ে আতঙ্কে থাকতে হয় পথচারী-দর্শনার্থীদের/ছবি: জাগো নিউজ

গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জের মাওলানা ভাসানী সেতু এখন কেবল যাতায়াতের পথ নয়, পরিণত হয়েছে দর্শনীয় স্থানে। প্রতিদিন সেতুতে হাজার হাজার মানুষ পরিবার পরিজন নিয়ে বেড়াতে আসছেন। কিন্তু দুর্ঘটনা প্রতিরোধে দেওয়া সেতুর রেলিং যেন মরণফাঁদে পরিণত হয়েছে। এতে দুর্ঘটনার আশঙ্কা করছেন সেতুতে আসা দর্শনার্থীরা।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, সেতুর দুই পাশে রয়েছে প্রায় সাড়ে ৩ ফুট প্রস্থের পায়ে চলা পথ। দুর্ঘটনা প্রতিরোধে দেওয়া হয়েছে রেলিং। এই রেলিংয়ের দুই গাডারের ৬৪টি সংযোগস্থল রয়েছে। সেগুলো বেশি ফাঁকা হওয়ায় যেকোনো বয়সের দর্শনার্থী নদীতে পড়ে যেতে পারে যেকোনো সময়। ফাঁকা স্থানগুলো ১৫-১৮ ইঞ্চি প্রশস্ত। দিনের বেলায় সেগুলো দেখা গেলেও রাতে বেলায় বোঝার উপায় নেই। এখনো সবগুলো বাতি জ্বলছে না। বিদ্যুৎ চলে গেলে আরও অন্ধকার নেমে আসে সেতুজুড়ে। তখন মনে হয় সেতুর ৬৪টি সংযোগস্থলই যেন এক একটি মরণফাঁদ। এমনটাই বলছেন সেতুতে আসা দর্শনার্থীরা।

বগুড়া জেলা থেকে সেতু দেখতে এসেছেন মো. আলমগীর হোসাইন, স্ত্রী ও ২ সন্তান। আনন্দ করতে এসে হাত ছেড়ে দিতে পারছেন না ৫ বছর বয়সের মেয়ে আয়াতের। যদি কোনো কারণে ওই ফাঁকা জায়গা দিয়ে নদীতে পড়ে যায় তাহলে! বলতেই আঁতকে ওঠেন তিনি। সে কারণে স্বামী স্ত্রী দুজন ২ বাচ্চার হাত ধরে ঘুরছেন সেতুতে।

ভাসানী সেতুতে মরণফাঁদ হয়ে দাঁড়িয়েছে রেলিংয়ের ফাঁকা স্থান

নদীতে পড়ে মারা যাওয়ার ভয় কেবল তার পরিবারের নয়, বরং ভাসানী সেতুতে আনন্দ করতে আসা হাজারো দর্শনার্থীর।

কথা হয় আরেক দর্শনার্থী মোছা. নার্গিস বেগমের সঙ্গে। তার বাড়ি কুড়িগ্রাম জেলার চিলমারীতে। তিনিও এসেছেন তার স্বামী ও সন্তানদের নিয়ে। এ বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আরও কয়েকবার এসেছি এ সেতুতে ঘুরতে। এখানে আসার কথা মনে হলেই এ ফাঁকা স্থানগুলোর কথা মনে হয়। তখন গা শিউরে ওঠে। খুবই ভয় লাগে। সে কারণে মন খুলে আনন্দ করতে পারি না সেতুতে এসে।

দুই মেয়ে জারা ও জুহির হাত ধরে মা শিরিন রেলিং ঘেঁষে হাঁটছিলেন। তার বাড়ি সুন্দরগঞ্জ উপজেলার পৌরসভায়। ক্ষোভ জানিয়ে তিনি বলেন, ‘রেলিং ধরে সবাই হাঁটে। বিশেষ করে ছোটো বাচ্চারা। আর সেই রেলিংয়ের মাঝে ফাঁকা জায়গা। বাচ্চাদের একা ছেড়ে দিতে পারি না। এরপরও সবসময় থাকতে হয় আতঙ্কে। দুর্ঘটনা এড়াতে ফাঁকা স্থানগুলো দ্রুত বন্ধ করার জোর দাবি জানান তিনি।

এ নিয়ে কথা হলে দর্শনার্থীদের নদীতে পড়ে যাওয়ার আশঙ্কাকে হেসে উড়িয়ে দেন উপজেলা ইঞ্জিনিয়ার তপন চন্দ্র চক্রবর্তী। তিনি বলেন, এখানে আমি কোনো ঝুঁকি দেখছি না। কারণ আপনি রাস্তা দিয়ে হাঁটবেন, সেটা আপনি দেখে চলবেন না? তাছাড়া এটা কোনো খেলা বা আনন্দের জায়গা নয় বলেও মন্তব্য করেন এ প্রকৌশলী।

সেতুতে কতটি এ ধরনের ফাঁকা স্থান আছে এবং ফাঁকা স্থানগুলোর প্রস্থ কত ইঞ্চি পর্যন্ত হতে পারে সে বিষয়েও কোনো ধারণা দিতে পারেননি তিনি।

ভাসানী সেতুতে মরণফাঁদ হয়ে দাঁড়িয়েছে রেলিংয়ের ফাঁকা স্থান

এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রাজ কুমার বিশ্বাস বলেন, বিষয়টি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কোনো ব্যবস্থা করা যায় কিনা বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখছি।

গাইবান্ধা এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী উজ্জ্বল চৌধুরীর এ ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরাও এটি নিয়ে ভাবছি। সেতুর সৌন্দর্য ঠিক রাখতে গিয়ে দেরি হচ্ছে। তবে আর দেরি নয়। কারণ সৌন্দর্যের আগে মানুষের জীবন।

গত ২০ আগস্ট উদ্বোধন হয় সেতুটি। আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন স্থানীয় সরকার, পল্লি উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া। এটি দেশের ইতিহাসে এলজিইডির সর্ববৃহৎ সেতু। এতে ব্যয় ধরা ছিল ৯২৫ কোটি টাকা। এ সেতুর দৈর্ঘ্য ৪৯০ মিটার ও প্রস্থ ৯ দশমিক ৬ মিটার। অর্থায়ন করেছে বাংলাদেশ সরকার (জিওবি), সৌদি ফান্ড ফর ডেভেলপমেন্ট (এসএফডি) এবং ওপেক ফান্ড ফর ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট (ওফিড)। সুন্দরগঞ্জ উপজেলার হরিপুর-চিলমারী সংযোগ সড়কে তিস্তা নদীর উপর নির্মিত হয়েছে মাওলানা ভাসানী সেতুটি।

এমএন/এএসএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।