পদ্মায় মাছ-বালু লুট ও চাঁদাবাজিকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষ, গুলিবিদ্ধ ৯

জেলা প্রতিনিধি
জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি কুষ্টিয়া
প্রকাশিত: ০৭:০৬ পিএম, ০৯ অক্টোবর ২০২৫
সংঘর্ষের সময় ভাঙচুর করা হয় স্থানীয় বিএনপির অফিস। খালেদা জিয়ার ছবি সম্বলিত ব্যানারও ছিঁড়ে ফেলা হয়। ইনসেটে গুলির খোসা। ছবি-সংগৃহীত

কুষ্টিয়ার কুমারখালীর পদ্মা নদীতে অবৈধভাবে মাছ ধরা, বালু উত্তোলন ও জেলেদের কাছ থেকে চাঁদা উত্তোলন নিয়ে স্থানীয় দুই পক্ষের দফায় দফায় গোলাগুলির ঘটনা ঘটেছে। এতে উভয় পক্ষের অন্তত ৯ জন গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। এসময় বেশকিছু বাড়িতে ভাঙচুর ও লুটপাট করা হয়।

বৃহস্পতিবার (৯ অক্টোবর) ভোরের দিকে উপজেলার কয়া ইউনিয়নের বেড় কালোয়া জেলেপাড়া থেকে কালোয়া বাজার পর্যন্ত প্রায় এক কিলোমিটার এলাকায় অন্তত দেড় ঘণ্টাব্যাপী গোলাগুলির ঘটনা ঘটে।

পদ্মায় মাছ-বালু লুট ও চাঁদাবাজিকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষ, গুলিবিদ্ধ ৯

আহতরা হলেন বের কালোয়া গ্রামের আনারুলের ছেলে আকরাম হোসেন (৩১), দুলাল শেখের ছেলে রাজিব শেখ (৩২), আলম মন্ডলের ছেলে আলামিন মন্ডল (৩৩), বজলু শেখের ছেলে রুহুল আমীন (৫২), কুদ্দুস শেখের ছেলে আশিকুর রহমান (৩২) ও কেরায় শেখের ছেলে তাজিম শেখ (৫০)। বর্তমানে তারা কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।

আহত অন্যরা হলেন একই গ্রামের জেহের শেখের ছেলে কুদ্দুস শেখ (৬৫), মৃত মোশারফের ছেলে দুলাল হোসেন (৪২) ও মহির শেখের ছেলে খুতে শেখ (৩৫)।

পদ্মায় মাছ-বালু লুট ও চাঁদাবাজিকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষ, গুলিবিদ্ধ ৯

স্থানীয়রা জানান, ইলিশের প্রজনন মৌসুমে পদ্মায় ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা চলছে। তবুও নদীতে অবৈধভাবে মাছ ধরা, বালু উত্তোলন ও জেলেদের কাছ চাঁদা উত্তোলন নিয়ে কয়া ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি ও ইউপি সদস্য রাশিদুল ইসলাম, তার ভাগনে সালমান এফ রহমান বকুল গ্রুপের সঙ্গে ৯ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সদস্য ও সাবেক ইউপি সদস্য বকুল বিশ্বাস এবং জেলেপাড়ার সরদার ইয়ারুল ইসলাম গ্রুপের আধিপত্য বিস্তার নিয়ে গোলাগুলির ঘটনা ঘটেছে। এসময় বাড়িঘর ও স্থানীয় বিএনপির অফিস ভাঙচুর করা হয়। খালেদা জিয়ার ছবি সম্বলিত ব্যানারও ছিঁড়ে ফেলা হয়। তবে এ নিয়ে উভয়পক্ষের নেতাকর্মীরা পাল্টাপাল্টি অভিযোগ তুলেছেন।

বিএনপি নেতা বকুল বিশ্বাস ও জেলে নেতা ইয়ারুল গ্রুপের অভিযোগ, কয়া ৮ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি রাশিদুল ইসলাম ও তার ভাগনে বকুল ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সহসভাপতি আব্দুল খালেকের ছেলে রিপন, শিপন, লিটনসহ তাদের সন্ত্রাসী বাহিনী নিয়ে অতর্কিত গুলিবর্ষণ করেছেন। এতে অন্তত ছয়জন গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। বেশকিছু বাড়িতে ভাঙচুর ও লুটপাটও চালিয়েছেন তারা।

তবে বিএনপি নেতা রাশিদুল ইসলাম গ্রুপের অভিযোগ, বিএনপি নেতা বকুল বিশ্বাস কয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর হাজীর ভাই সোহেল রানা, আওয়ামী লীগের সমর্থক ও জেলেদের নেতা ইয়ারুল ইসলামের সঙ্গে মিলেমিশে পদ্মায় মাছ, বালু লুট ও চাঁদাবাজি করার জন্য গুলি চালিয়েছেন। এতে তিনজন গুলিবিদ্ধ হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।

এদিকে, বেলা ১১টার দিকে সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, কালোয়া বাজার, বেড় কালোয়া মোড়সহ বিভিন্ন স্থানে পুলিশের টহল রয়েছে। কালোবাজারের বিএনপির কার্যালয় এবং জেলেপাড়ার কয়েকটি বাড়িতে ভাঙচুর করা হয়েছে।

পদ্মায় মাছ-বালু লুট ও চাঁদাবাজিকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষ, গুলিবিদ্ধ ৯

এসময় জেলেপাড়ার সাইদুলের স্ত্রী দৃষ্টি খাতুন বলেন, ‌‘বিএনপি নেতা বকুল ও সাইদুল মেম্বারের নেতৃত্বে খালেক মেম্বারের ছেলে রিপন, শিপন, লিটনসহ আরও অনেকে ফজরের আজানের পর গুলি করতে করতে আসে। তারা বাড়ি ভাঙচুর করে নগদ টাকা ও স্বর্ণালংকার লুট করেছে। আমি থানায় মামলা করবো।’

মৃত জিয়ারুলের স্ত্রী রিনা খাতুন বলেন, ‘চাঁদার জন্য নদীতে নামতে দিচ্ছেন না রাশিদুল মেম্বাররা। চাঁদা না পেয়ে ভোরে বাড়িতে হামলা করে রিপন, লিটন এসে দুটি মোবাইলফোন ও সোনার চেইন নিয়ে গেছেন।’

আহত বিএনপিকর্মী কুদ্দুস শেখ বলেন, ‘ফজরের নামাজ পড়তে যাচ্ছিলাম। তখন রাশিদুল ও বকুল আওয়ামী লীগের লোকজনকে সঙ্গে নিয়ে বৃষ্টির মতো গুলি করতে থাকে। দৌড়ে পালালেও আমার ডান হাতে এসে একটি গুলি লেগেছে।’

কালোয়া মোড়ের ভাঙারি ব্যবসায়ী দুলাল হোসেন বলেন, ‘ফরিদপুর থেকে রাতে বাড়ি এসেছে। আর ভোরবেলায় ওরা হামলা করেছে। আমার হাতে-মুখে-বুকে ছররা গুলি ঢুকে আছে।’

jagonews24

তবে অভিযোগ অস্বীকার করে প্রতিপক্ষের আহত রাজিব শেখ বলেন, ‘গুলির শব্দে ভোরে ঘুম ভেঙে যায়। বাইরে আসতেই দেখি প্রতিপক্ষের ইয়ারুল, সোহেল, রুহুলসহ অনেকেই গুলি করতে করতে এগিয়ে আসছে। তখন দৌড়ে পালানোর চেষ্টা করলেও হাতে- পায়ে মুখে গুলি লেগেছে। আমরা তিনজন আহত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি আছি।’

এ বিষয়ে ৮ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি রাশিদুল ইসলাম বলেন, ‘কিছুদিন আগে আমার ওপর হামলা করেছিল প্রতিপক্ষের লোকজন। নদীতে চাঁদাবাজি ও লুটপাটের জন্য ইয়ারুল তার লোকজন নিয়ে গুলি করেছে। এতে আমার তিন সমর্থক গুলিবিদ্ধ হয়েছে। থানায় মামলা করা হবে।’

গোলাগুলির ঘটনা নিশ্চিত করে কুমারখালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) খন্দকার জিয়াউর রহমান বলেন, খবর পেয়ে এসে দেখি হামলাকারীরা কেউ নেই। তবে এখন পর্যন্ত ৬-৭ জন গুলিবিদ্ধ হওয়া এবং কিছু বাড়িতে ভাঙচুরের খবর পাওয়া গেছে। বর্তমানে এলাকার পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে।

আল-মামুন সাগর/এসআর/জিকেএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।