২৩ বছরেও হলো না ফুলদী নদীর ওপর সেতু

জেলা প্রতিনিধি
জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি মুন্সিগঞ্জ
প্রকাশিত: ০৯:০৮ পিএম, ০৫ অক্টোবর ২০২৫
সেতুর অভাবে চরম দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন মুন্সিগঞ্জের উপজেলার মানুষ অর্ধলাখ মানুষ। ছবি-জাগো নিউজ

ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনের ২৩ বছর অতিবাহিত হয়ে গেছে। অথচ আজও নির্মিত হয়নি মুন্সিগঞ্জের গজারিয়ায় মেঘনার শাখা ফুলদী নদীর ওপর একটি সেতু। ফলে চরম দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন উপজেলার মানুষ।

প্রবাহিত হওয়া ফুলদী নদীর পশ্চিম অংশ সরাসরি সড়ক যোগাযোগ না থাকায় পূর্ব প্রান্তের গজারিয়া উপজেলা বৃহৎ অংশ থেকে বিচ্ছিন্ন ছিল। সাম্প্রতিক সময়ে হোসোন্দী ইউনিয়নের ওপর দিয়ে সড়ক নির্মাণ করে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের সঙ্গে যুক্ত করা হয়েছে। সেতু নির্মিত না হওয়ায় ইঞ্জিনচালিত ট্রলারে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছে মানুষ।

বিগত সরকারের আমলে ফুলদী নদীর ওপর ফেরি সার্ভিস চালু করলেও যানবাহন না থাকলে পন্টুনেই নোঙরে থাকে ফেরি। ফলে সাধারণ মানুষের চলাচলের একমাত্র বাহন রসুলপুর খেয়াঘাটের দুটি ইঞ্জিনচালিত ট্রলার।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, দেশ স্বাধীন হওয়ার পর থেকে গজারিয়া উপজেলার গণমানুষের প্রাণের দাবি ছিল ফুলদী নদীতে একটি সেতু। সেই দাবির পরিপ্রেক্ষিতে রসুলপুর এলাকায় ২০০২ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি তৎকালীন চারদলীয় জোট সরকারের যোগাযোগমন্ত্রী নাজমুল হুদা ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। প্রায় ২৩ বছর অতিবাহিত হলেও ফুলদী নদীর ওপর সেতু নির্মাণ করা হয়নি। নদীর রসুলপুর প্রান্তে শুধু ভিত্তিপ্রস্তরের ফলক নির্মাণ পর্যন্তই রয়েছে সেতু নির্মাণকাজ। ফলে প্রতিদিন ভোগান্তির মধ্য দিয়ে ট্রলার পারাপার হচ্ছেন উপজেলার অর্ধলাখ মানুষ।

সরেজমিনে দেখা যায়, নদী পারাপারের জন্য রয়েছে দুটি ইঞ্জিনচালিত ট্রলার। বৃষ্টিতে গাদাগাদি করে ঝুঁকি নিয়ে পার হচ্ছেন বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও সাধারণ মানুষ। এসময় কথা হয় রসুলপুর গ্রামবাসীর সঙ্গে। তারা জানান, ফুলদী নদীর ওপর সেতু নির্মাণ না হওয়ায় রসুলপুর, দৌলতপুর, ইমামপুর, আঁধারমানিক, করিমখাঁ, মাথাভাঙ্গা, গজারিয়া, হোসেন্দী, ইসমানিরচর গ্রামের অর্ধলাখ মানুষ চরম দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন।

গজারিয়া পাইলট মডেল উচ্চ বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থী ইমন হোসেন বলে, ‌‘ঝড়-বৃষ্টির মধ্যে ট্রলারে করে নদী পারাপারে সময় কাপড়, জামা, বইখাতা ভিজে যায়। আমরা ফুলদী নদীতে একটি সেতু চাই।’

গজারিয়া পাইলট গার্লস স্কুলের শিক্ষার্থী মরিয়ম আক্তার বলে, ‘আমার জন্মের আগে থেকেই শুনছি ব্রিজ হবে। আজ পর্যন্ত ব্রিজ হলো না। দেশে কত বড় ব্রিজ হয়ে গেছে। আমাদের প্রতিদিন ট্রলারে করে নদী পার হয়ে স্কুলে যেতে হয়। নদী পারাপার হতে ভয় হয়। কখন যে ডুবে যায় সে আতঙ্কে থাকতে হয় সবসময়।’

২৩ বছরেও হলো না ফুলদী নদীর ওপর সেতু

হোসেন্দি গ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা মাহাবুবুল আলম খান বলেন, ফুলদী নদী দুই ভাগে ভাগ করেছে আমাদের গজারিয়া। একটি সেতু নির্মাণ হলে আমাদের কৃষি অর্থনীতিতে বিপ্লব ঘটবে। নানাভাবে সুবিধা পাবে দুই পাড়ের মানুষ। সহজেই আমরা মালামাল নির্দিষ্ট গন্তব্যে পৌঁছাতে পারবো।

তবে গুরুত্ব বিবেচনায় ফুলদী নদীর ওপর সেতু নির্মাণে সম্ভাব্যতা যাচাইসহ অন্যান্য কারিগরি কার্যক্রম চলমান বলে জানিয়েছেন গজারিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আশরাফুল আলম।

মুন্সিগঞ্জের জেলা প্রশাসক ফাতেমা তুল জান্নাত জাগো নিউজকে বলেন, ফুলদী নদীর ওপর সেতু নির্মাণের বিষয়টি নিয়ে উচ্চ পর্যায়ে কথা বলেছি। জেলা উন্নয়ন কমিটিতে বিষয়টি বারবার আলোচনা হয়েছে। বেশ কয়েকজন উপদেষ্টাও বিষয়টি অবগত আছেন। নিদিষ্ট মন্ত্রণালয়ে নথি পাঠিয়েছি। তবে এখনো পর্যন্ত কোনো আপডেট আসেনি।

এসআর/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।