আশুগঞ্জ-আখাউড়া চার লেন প্রকল্প

বেহাল মহাসড়কে পরিবহন ব্যবসায় ধস, যাত্রী বেড়েছে ট্রেনে

আবুল হাসনাত মো. রাফি আবুল হাসনাত মো. রাফি , ব্রাহ্মণবাড়িয়া
প্রকাশিত: ০৬:৩২ পিএম, ২৩ জুলাই ২০২৫
মহাসড়কে খানাখন্দ ও গর্তে জমে থাকা পানিতে প্রতিনিয়ত ঘটছে দুর্ঘটনা/ ছবি-জাগো নিউজ

কচ্ছপ গতিতে চলছে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জ থেকে আখাউড়া স্থলবন্দর চার লেন প্রকল্পের কাজ। সড়কে খানাখন্দ। এসব কারণে ঢাকা-সিলেট এবং কুমিল্লা-সিলেট মহাসড়কে যাতায়াতকারী যাত্রীদের দুর্ভোগ যেন এখন নিয়মিত ঘটনা। ঘণ্টার পর ঘণ্টা লেগে থাকছে যানজট যানজট।

এ অবস্থায় ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে ঢাকাগামী যাত্রীরা সড়কপথের পরিবর্তে বেছে নিচ্ছেন রেলপথ। এতে যাত্রীর চাপ বাড়ছে ট্রেনে। আর লোকসান গুনছেন পরিবহন ব্যবসায়ীরা।

‘আগে প্রতিদিন টিকিট বিক্রি হতো ৫০ হাজার টাকার মতো। এখন তা নেমে এসেছে ১৫ হাজার টাকায়। তার অন্যতম কারণ হচ্ছে যানজট। ঢাকায় যেতে যেখানে তিন ঘণ্টা সময় লাগার কথা, সেখানে ৬-৮ ঘণ্টা লাগছে। আশুগঞ্জ থেকে বিশ্বরোড পর্যন্ত প্রতিদিন পরিবহন ব্যবসায় এই বিপর্যয় ঘটছে। যাত্রীরাও এসব সহ্য করতে পারছেন না। তারা বিকল্প হিসেবে ট্রেনকে বেছে নিচ্ছেন।’

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জ নদীবন্দর থেকে আখাউড়া স্থলবন্দর পর্যন্ত চার লেন মহাসড়কের নির্মাণকাজে ধীরগতির কারণে জনদুর্ভোগের শেষ নেই। চলতি বছরের ৩০ জুন এই প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হয়ে গেলেও কাজের অগ্রগতি হয়েছে মাত্র ৫৮ শতাংশ। নির্ধারিত সময়ে কাজ শেষ করতে না পারায় নতুন করে দুই বছর মেয়াদ বাড়ানোর আবেদন করেছে নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠান এফকন।

বেহাল মহাসড়কে পরিবহন ব্যবসায় ধস, যাত্রী বেড়েছে ট্রেনে

মহাসড়কে রোদের সময় প্রচণ্ড ধুলা এবং বৃষ্টি হলে বড় বড় গর্ত ও খানাখন্দে বৃষ্টির পানি জমে থাকে। পুনিয়াউট থেকে ঘাটুরা মেডিকেল পর্যন্ত পুরো সড়কেই বড় বড় গর্ত ও খানাখন্দে ভরা। দুর্ভোগের কেন্দ্র হয়ে উঠেছে আশুগঞ্জ গোলচত্বর, বিশ্বরোড গোলচত্বর, সদর উপজেলার রাধিকা থেকে উজানিসার পর্যন্ত সড়কও। সড়কের বেহাল দশার কারণে বিশ্বরোড গোলচত্বর থেকে আশুগঞ্জ গোলচত্বর ১৫ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিতে কোনো সময় লেগে যাচ্ছে ৪-৫ ঘণ্টা।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ঢাকা, চট্টগ্রাম, কুমিল্লা এবং সিলেট যাতায়াতকারী যাত্রীদের সীমাহীন দুর্ভোগ আর জীবনের ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করতে হচ্ছে। মহাসড়কের এমন বেহাল দশায় সঠিক সময়ে গন্তব্যে না যেতে পাড়ায় লোকসানে পড়েছেন পরিবহন ব্যবসায়ীরা। এরইমধ্যে ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে ঢাকা চলাচলকারী কয়েকটি পরিবহন ব্যবসা বন্ধ করে দিয়েছে। বাকি সার্ভিসগুলোও চলছে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে ঢাকাগামী সোহাগ পরিবহনের সহকারী ব্যবস্থাপক ইমরান হোসেন জাগো নিউজকে বলেন, ‌‘আগে প্রতিদিন টিকিট বিক্রি হতো ৫০ হাজার টাকার মতো। এখন তা নেমে এসেছে ১৫ হাজার টাকায়। তার অন্যতম কারণ হচ্ছে যানজট। ঢাকায় যেতে যেখানে তিন ঘণ্টা সময় লাগার কথা, সেখানে ৬-৮ ঘণ্টা লাগছে। আশুগঞ্জ থেকে বিশ্বরোড পর্যন্ত প্রতিদিন পরিবহন ব্যবসায় এই বিপর্যয় ঘটছে। যাত্রীরাও এসব সহ্য করতে পারছেন না। তারা বিকল্প হিসেবে ট্রেনকে বেছে নিচ্ছেন।’

‘গত পাঁচ বছর ধরেই পরিবহন মালিকরা সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন। কিন্তু এখন আর সহ্য করা যাচ্ছে না। যানজট আর খানাখন্দের কারণে পরিবহন ব্যবসায় ধস নেমেছে। উত্তরা, রয়েল ও মিয়ামি পরিবহন ব্যবসা আপাতত বন্ধ। আমরা জেলা প্রশাসনের মিটিংয়ে সমস্যাগুলো তুলে ধরলে রাস্তায় ইট-সুরকি ফেলে কিছুটা ঠিক করে, কিন্তু কয়েকদিন পরই শেষ।’

কাজি পরিবহনের কাউন্টার ম্যানেজার রুক্কু মিয়া জানান, যানজটের কারণে ব্যবসার অবস্থা খুবই খারাপ। রাস্তার খানাখন্দের কারণে প্রতিদিনই বাস নষ্ট হচ্ছে। সময়মতো গাড়ি কাউন্টারে আসতে পারছে না। যাত্রীরাও রাগ দেখান।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা বাস মিনিমাস মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক হানিফ মিয়া জাগো নিউজকে বলেন, ‘গত পাঁচ বছর ধরেই পরিবহন মালিকরা সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন। কিন্তু এখন আর সহ্য করা যাচ্ছে না। যানজট আর খানাখন্দের কারণে পরিবহন ব্যবসায় ধস নেমেছে। উত্তরা, রয়েল ও মিয়ামি পরিবহন ব্যবসা আপাতত বন্ধ। আমরা জেলা প্রশাসনের মিটিংয়ে সমস্যাগুলো তুলে ধরলে রাস্তায় ইট-সুরকি ফেলে কিছুটা ঠিক করে, কিন্তু কয়েকদিন পরই শেষ।’

বেহাল মহাসড়কে পরিবহন ব্যবসায় ধস, যাত্রী বেড়েছে ট্রেনে

কথা হয় ঢাকার কমলাপুরগামী যাত্রী আরিফুল ইসলামের সঙ্গে। তিনি জাগো নিউজকে বলেন, ‘সকাল থেকে কাউন্টারে বসে আছি। সঙ্গে পরিবারের তিনজন নারী সদস্য আছে। দুই ঘণ্টা বাস ছাড়ার সময় চলে গেছে। এখনো বাস আসার খবর নেই। রেলস্টেশন গিয়ে ট্রেনের টিকেটও পাবো না। একা হলে ট্রেনে স্ট্যান্ডিং টিকিটে দাঁড়িয়ে ঢাকায় যেতাম।’

সড়কপথ এড়িয়ে রেলপথে যাত্রীর চাপ আরও বেড়েছে। এমনিতে ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে ঢাকা যাতায়াতকারী জনপ্রিয় মাধ্যম ট্রেন হলেও মহাসড়কে দুর্ভোগের কারণে এখন রেলপথে যাত্রী সংখ্যা বেড়ে পাঁচগুণে দাঁড়িয়েছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

সরেজমিনে দেখা গেছে, ট্রেনের কাউন্টারে টিকিটের জন্য দীর্ঘলাইন। আসনযুক্ত টিকিট না পেলেও স্ট্যান্ডিং টিকিটে যাত্রা করছেন যাত্রীরা।

বেহাল মহাসড়কে পরিবহন ব্যবসায় ধস, যাত্রী বেড়েছে ট্রেনে

ব্রাহ্মণবাড়িয়া রেলওয়ে স্টেশনে কথা হয় শরিফুল ইসলাম নামের এক যাত্রীর সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘বাস থেকে ট্রেনের যাত্রা আরামদায়ক। বাসে আগে আমরা তিন ঘণ্টায় ঢাকায় পৌঁছাতে পেরেছি। যানজটের কারণে এখন লাগে ৬-৭ ঘণ্টা। অথচ ট্রেনে লাগে মাত্র দুই ঘণ্টা। কিন্তু ট্রেনে আসন পাওয়া কষ্টকর।’

জাহাঙ্গীর আলম নামের আরেক যাত্রী বলেন, ‘বাসের টিকিট কেউ ফ্রিতে দিলেও যাবো না। ট্রেনের যাত্রা আরামদায়ক, সময়ও লাগে কম। কিন্তু ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে ট্রেনের টিকিট পাওয়া যায় না।’

বেহাল মহাসড়কে পরিবহন ব্যবসায় ধস, যাত্রী বেড়েছে ট্রেনে

ব্রাহ্মণবাড়িয়া রেলওয়ে স্টেশনের স্টেশন মাস্টার সাকির জাহান জানান, ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে আন্তঃনগর ট্রেনের আসনযুক্ত টিকিট বরাদ্দ মাত্র ৯৭৯টি। কিন্তু ট্রেনে যাত্রী হয় এর পাঁচগুণ। ফলে অনেক ভিড় হয়।

আশুগঞ্জ-আখাউড়া চার লেন প্রকল্পের প্রকল্প ব্যবস্থাপক শামীম আহমেদ বলেন, নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে নানা জটিলতার কারণে প্রকল্পের কাজ বিলম্বিত হচ্ছে। প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ানো হলে কাজের গতি বাড়তে পারে। তবে যানচলাচল স্বাভাবিক রাখতে খানাখন্দগুলো জরুরি ভিত্তিতে সংস্কার করা হচ্ছে।

এসআর/জিকেএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।