ট্রাক চলাচলে বেহাল সড়কে চলে না অ্যাম্বুলেন্স

জেলা প্রতিনিধি
জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি চাঁদপুর
প্রকাশিত: ১১:১৫ এএম, ২১ জুলাই ২০২৫

দীর্ঘদিন সংস্কারের অভাবে চলাচলের অনুপযোগী হয়ে উঠেছে চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জে সুবিদপুর পূর্ব ইউনিয়নের একটি সড়ক। মুন্সিরহাট থেকে উভারামপুর গ্রামের প্রায় তিন কিলোমিটার সড়কে এ অবস্থা দেখা দিয়েছে। বালুবাহী ট্রাক চলাচলের ফলে সড়কে হওয়া বড় গর্তে যানবাহন চলতে গিয়ে প্রায়ই ঘটছে দুর্ঘটনা। এতে পাঁচ গ্রামের অর্ধলক্ষাধিক মানুষ চরম ভোগান্তি পোহাচ্ছেন।

সরেজমিনে দেখা যায়, সড়কটির মুন্সিরহাট ব্রিজ থেকে উভারামপুর গ্রামের পাটওয়ারী বাড়ি পর্যন্ত স্থানীয়দের চরম দুর্ভোগে চলাচল করতে দেখা গেছে। বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষের সঙ্গে কথা হলে তারাও দুর্ভোগের কথা তুলে ধরেন।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সর্বশেষ এই সড়কটির নির্মাণ কাজ হয় ২০০৯ সালে। এরপর দীর্ঘ ১৬ বছর সংস্কার না হওয়ায় সড়কটি যেন মরণফাঁদে পরিণত হয়েছে। সড়কের পাশে দুটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, একটি উচ্চ বিদ্যালয়, বেশ কয়েকটি কওমি ও হাফিজিয়া মাদরাসা এবং মাজার রয়েছে। এছাড়াও স্থানীয় ঐতিহ্যবাহী মুন্সিরহাট বাজার, ফরিদগঞ্জ উপজেলা সদর, জেলা সদরের যোগাযোগের জন্য এই সড়ক অন্যতম। সড়কটি বহু বছর ধরে স্থানীয় কাইতাড়া, উভারামপুর, সমেশপুর, বাশারা ও সুরঙ্গচাল গ্রামের লোকজন ব্যবহার করে আসছেন।

দীর্ঘদিন সংস্কারের অভাবে চলাচলের অনুপযোগী হয়ে উঠেছে চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জে সুবিদপুর পূর্ব ইউনিয়নের একটি সড়ক

সিএনজিচালিত অটোরিকশার চালক জাহাঙ্গীর বলেন, এই সড়কে যাত্রী নিয়ে চলাচল করতে খুবই কষ্ট হয়। ঝুঁকিপূর্ণ এই সড়কে প্রায়ই দুর্ঘটনা ঘটে। বিশেষ করে কোন রোগী নিয়ে যেতে সমস্যায় পড়তে হয়। সড়কটি দ্রুত পাকা করার দাবি জানাই।

মুন্সিরহাট বাজার এলাকার ব্যবসায়ী মো. কাইয়ুম বলেন, প্রায় ৫০ হাজার মানুষ এই সড়ক দিয়ে চলাচল করেন। গত দেড় দশক এই সড়কের সংস্কার হয়নি। স্কুলকলেজের শিক্ষার্থীরা খুবই কষ্ট করে যাতায়াত করে। এখান দিয়ে কোনো অ্যাম্বুলেন্স চলাচল করতে পারে না। একজন জরুরি রোগী নিয়ে চলতেও কষ্ট হয়। আমরা দ্রুত সময়ের মধ্যে সড়কটি পাকা করার দাবি জানাই।

কাইতাড়া গ্রামের বাসিন্দা মামুন হায়দার বলেন, এই সড়ক নির্মাণের পর সংস্কার হয়নি। কিন্তু চলাচলে যোগ্য ছিল। গত ৮ থেকে ১০ বছর স্থানীয় একাধিক বালু ব্যবসায়ীর ট্রাক চলাচল করতে গিয়ে সড়কে বড় বড় গর্ত তৈরি হয়েছে। যে কারণে সামান্য বৃষ্টি হলেই সড়কে পানি জমে বেহাল হয়ে পড়ে।

দীর্ঘদিন সংস্কারের অভাবে চলাচলের অনুপযোগী হয়ে উঠেছে চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জে সুবিদপুর পূর্ব ইউনিয়নের একটি সড়ক

একই এলাকার আরেক বাসিন্দা মফিজুল ইসলাম বলেন, সড়কের সংস্কার কাজের টেন্ডার হলে ঠিকাদার এসে দেখেন পাকা সড়কের চিহ্নও নেই। যে কারণে আর কাজ হয়নি। আওয়ামী লীগের সময়ে অনেক জনপ্রতিনিধি এসে কাজ করার ওয়াদা দিলেও পরে আর খোঁজ নেননি।

উভারামপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের একাধিক শিক্ষার্থী বলেন, আগে বালুর ট্রাক চলাচল বন্ধ করতে হবে। কারণ সড়কের বেহাল অবস্থার জন্য তারাই দায়ী। এখন নতুন করে পাকা করা হলে তাদের কারণে সড়ের অবস্থার আগের মত হবে। বর্ষা মৌসুমে এই সড়কে দূরের শিক্ষার্থীরা খুবই কষ্ট করে চলাচল করে।

উটতলী নূরপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শফিকুল ইসলাম বলেন, এই সড়কটি বৃষ্টির মৌসুমে চলাচলের অযোগ্য। শুষ্ক মৌসুমে ধুলাবালির কারণে শিশু শিক্ষার্থীদের চোখে মুখে ময়লা প্রবেশ করে। তারা নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। এছাড়া বিভিন্ন বয়সী লোকজন এই সড়কে চলাচলের কারণে অ্যালার্জি জাতীয় রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন। স্থানীয়দের দুর্ভোগ থেকে মুক্তি দিতে সড়ক নির্মাণ খুবই জরুরি।

দীর্ঘদিন সংস্কারের অভাবে চলাচলের অনুপযোগী হয়ে উঠেছে চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জে সুবিদপুর পূর্ব ইউনিয়নের একটি সড়ক

উভরামপুর গ্রামের বাসিন্দা মিজানুর রহমান বলেন, মুন্সিরহাট বেইলি ব্রিজ থেকে উভারামপুর পর্যন্ত সড়কের এই বেহাল অবস্থার কারণে দুর্ভোগ হয় রোগীদের নিয়ে। আত্মীয় স্বজন করতে রাজি হয় না লোকজন।

একই গ্রামের আরেক বাসিন্দা ইসমাইল তালুকদার খোকন বলেন, আমাদের গ্রামসহ আশপাশের গ্রামের লোকজন বহুবছর অবহেলিত। আমাদের বহু দাবির প্রেক্ষিতে ২০০৯ সালে সড়কের নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হয়। এরপর আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে সড়কটি নির্মাণ কাজে কেউ এগিয়ে আসেনি। স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের উপজেলা ও জেলা পর্যায়ে আমাদের এই করুন অবস্থার কথা জানিয়েছি। আমাদের অঞ্চলের লোকদের দাবি দুর্ভোগ লাগবে সড়কটি দ্রুত পাকাকরণ চাই।

স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর চাঁদপুর জেলা কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আহসান কবির বলেন, অর্থ সংকটের কারণে অনেক সময় সড়ক সংস্কার হয় না। ইউনিয়ন সড়কের পরে গ্রামীণ সড়কের নির্মাণ কাজ হয়। তবে এই সড়কটির গুরুত্ব বিবেচনা করে খুব দ্রুত সময়ের মধ্যে প্রাক্কলন তৈরি করে পাঠাবো। অনুমোদন এলে টেন্ডার প্রক্রিয়ার মাধ্যমে কাজ করা হবে।

শরীফুল ইসলাম/এমএন/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।