মিতু হত্যাকাণ্ড তদন্তে চট্টগ্রামে সিটিইউর তিন কর্মকর্তা


প্রকাশিত: ০১:৩৮ পিএম, ০৭ জুন ২০১৬

পুলিশ সুপার বাবুল আক্তারের স্ত্রী মাহমুদা খাতুন মিতু হত্যাকাণ্ডের ঘটনা অনুসন্ধানে চট্টগ্রামে পৌঁছেছে কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের (সিটিইউ) একটি প্রতিনিধি দল। মঙ্গলবার সকালে দলটি চট্টগ্রামে এসে পৌঁছায়।  

তিন সদস্যবিশিষ্ট এ প্রতিনিধি দলের নেতৃত্বে রয়েছেন ভারপ্রাপ্ত উপ কমিশনার সাইফুল ইসলাম। সদস্য হিসেবে রয়েছেন অতিরিক্ত কমিশনার আব্দুল মান্নান ও আরো একজন সহকারী কমিশনার।

এদিকে, ঘটনার ৪৮ ঘণ্টা পেরিয়ে গেলেও এখনো কোনো ধরনের কুলকিনারা খুঁজে পায়নি পুলিশ। এমনকি মামলা নথিভুক্ত করতেই পার হয়েছে ৩৬ ঘণ্টারও বেশি।
 
এ হত্যাকাণ্ড নিয়ে পুলিশ কখনো জঙ্গিদের আবার কখনো ইঙ্গিত করছে শিবিরের দিকে। হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত মোটরসাইকেলটি নগরীর শিবির অধ্যুষিত এলাকায় পাওয়ায় এ সন্দেহ করছে পুলিশ। ঘাতকদের ব্যবহার করা মোটরসাইকেলের পরে এবার আলোচনায় এসছে একটি কালো রঙয়ের মাইক্রোবাস।

চট্টগ্রামে পৌঁছেই সিএমপি কার্যালেয়ে ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তাদের সঙ্গে একান্ত বৈঠকে করেন সিটিইউর তিন কর্মকর্তা। বৈঠকে হত্যকাণ্ডের বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনা হয়।

ভারপ্রাপ্ত উপ কমিশনার সাইফুল ইসলাম জানান, সিটিইউর ইনচার্জ ডিআইজি মনিরুল ইসলামের নির্দেশে আমাদের তিন সদস্যের একটি দল মিতু হত্যাকাণ্ডের তথ্য অনুসন্ধানে এসেছি। যেহেতু এ হত্যকাণ্ডে জঙ্গি সংশ্লিষ্টতার আলামত পাওয়া গেছে, জঙ্গি সম্পর্কিত বিভিন্ন তথ্য আমাদের কাছে আছে। হত্যকাণ্ডের প্রাপ্ত আলামতের সঙ্গে আমাদের তথ্যগুলো মিলিয়ে দেখা হবে। দুই ধরনের তথ্যের মধ্যে আদান-প্রদান ও সমন্বয় করে কাজ করা হবে।

নাম প্রকাশে না করার শর্তে নগর পুলিশের উপ-কমিশনার পদমর্যাদার এক কর্মকর্তা বলেন, সাধারণত জঙ্গিরা নিরীহ নারী-শিশুদের উপর আঘাত করে না। চোরাচালানি মাফিয়াদের হাত অনেক লম্বা। তারা বাবুল আক্তারের উপর সংক্ষুব্ধ ছিল।  তারাই ভাড়াটিয়া খুনি দিয়ে এ ঘটনা ঘটিয়েছে কি না তদন্ত করে দেখতে হবে।

এ বিষয়ে সিএমপি কমিশনার মো.ইকবাল বাহার সাংবাদিকদের বলেন, প্রথমত জঙ্গি সম্পৃক্ততার একটা বিষয় আমরা বলেছি।  তারপর জামায়াত-শিবির আছে। এর বাইরে আরো যে যে অপশন আছে সেগুলো আমরা খতিয়ে দেখছি। কোনো দৃষ্টিভঙ্গিতে এই গৃহবধূর উপর হামলা হয়েছে সেটাই আগে আমরা বের করার চেষ্টা করছি। সেটা বের করতে পারলে অনেক কিছুই সহজ হয়ে যাবে।

মিতুর মোবাইলে পাঠানো এসএমএস রহস্য থেকে জানা যেতে পারে অনেক তথ্য। খুনের আগে শনিবার রাতে এক ক্ষুদে বার্তায় (এসএমএস) মিতু জানতে পারেন রোববার ৭টা ২০ মিনিটে স্কুলে পৌঁছাতে হবে। ঠিক একই ম্যাসেজ এসেছে ‘ইকুইটি সেন্ট্রিয়াম ভবনে’ অবস্থান করা ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুলে পড়ুয়া শিক্ষার্থীদের সকল অভিভাবকদের কাছে।

কিন্তু ক্যান্টনমেন্ট স্কুল কর্তৃপক্ষ সেদিনই জানিয়েছিল এমন কোনো ‘এসএমএস’ তারা পাঠাননি। তাই প্রশ্ন উঠছে, কোথা থেকে এসেছিল সেই এসএমএস? আর কারাই বা পাঠিয়েছিল এসএমএস ? এ ছাড়া এসএমএস প্রেরণকারীরা সুনির্দিষ্ট করে এই ভবনের বাসিন্দাদের নম্বার কিভাবে সংগ্রহ করল।
 
সব মিলিয়ে কখনও মোবাইলের এসএমএস, কখনও কালো রংয়ের মাইক্রোবাস, কখনও বাবুল আক্তারের স্ত্রীর আগেভাগে বাসা থেকে বের হওয়া আবার কখনও স্বর্ণ চোরাচালানকারী মাফিয়াদের নিয়ে ধারণার উপর ভিত্তি করে অন্ধকারে হাতড়ে বেড়াচ্ছে মামলার তদন্তকারী সংস্থা নগর গোয়েন্দা পুলিশ।

সিএমপি কমিশনার মো. ইকবাল বাহার সোমবার (০৬ জুন) জানিয়েছিলেন একদিন পর অর্থাৎ মঙ্গলবার হত্যাকাণ্ডের কারণ অনুসন্ধানে দৃশ্যমান অগ্রগতির কথা জানাতে পারবেন।

কিন্তু একদিন পর মঙ্গলবার এ ব্যাপারে সিএমপি কমিশনার সাংবাদিকদের বলেন, আমরা মূল জায়গায় পৌঁছাতে পারিনি, এটাই বাস্তবতা। তবে তথ্যগত এবং বস্তুগত কিছু অগ্রগতি আছে। আমরা আরো পর্যবেক্ষণ, বিচার-বিশ্লেষণ করে একটা জায়গায় পৌঁছাতে চাই।
 
জীবন মুছা/এসকেডি/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।