বাড়িতে বাবার মরদেহ রেখে এসএসসি পরীক্ষায় মেয়ে

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক নিজস্ব প্রতিবেদক রংপুর
প্রকাশিত: ১০:৩২ এএম, ১১ এপ্রিল ২০২৫

একদিকে বাবার মরদেহ অপরদিকে এসএসসি পরীক্ষা। কিন্তু জীবনের লক্ষ্য পূরণের স্বপ্নকে সত্যি করতে ব্যথা বুকে নিয়েই পরীক্ষায় অংশ নিয়েছেন রিমা আক্তার। কারণ, বাবার স্বপ্ন ছিল মেয়ে বড় সরকারি কর্মকর্তা হবে।

হৃদয়বিদারক এ ঘটনা ঘটে রংপুরের মিঠাপুকুর উপজেলার চেংমারী ইউনিয়নের পশ্চিম তিলকপাড়া গ্রামে।

বিজ্ঞাপন

বৃহস্পতিবার (১০ এপ্রিল) শুরু হওয়া এসএসসি পরীক্ষার প্রথমদিন বাবার মরদেহ বাড়িতে রেখেই পরীক্ষায় অংশ নেন এই শিক্ষার্থী।

রিমা উপজেলার তালিমগঞ্জ উচ্চ বিদ্যালয়ের মানবিক শাখার ছাত্রী। শুকুরেরহাট উচ্চ বিদ্যালয় পরীক্ষা কেন্দ্রের ২২ নম্বর কক্ষে পরীক্ষায় অংশ নেন তিনি।

বিজ্ঞাপন

বিজ্ঞাপন

সরেজমিনে জানা গেছে, উপজেলার ৮ নম্বর চেংমারী ইউনিয়নের পশ্চিম তিলকপাড়া গ্রামের কৃষক মতলেব মিয়া বুধবার রাত ১১টার দিকে হঠাৎ বুকে ব্যথা ও শ্বাসকষ্ট অনুভব করেন। দ্রুতই তার শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে পরিবারের লোকজন তাকে হাসপাতালে নেওয়ার পথেই তিনি মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন। মাঝপথ থেকেই বাড়িতে নিয়ে আসা হয় তার মরদেহ। মুহূর্তেই পরিবারে শোকের ছায়া নেমে আসে।

নিহত মতলেব মিয়ার তিন কন্যা সন্তান রয়েছে। এরমধ্যে বড় মেয়ে মিতা ও মেঝ মেয়ে রেশমা বেগমের বিয়ে দিয়েছেন। আর সবার ছোট মেয়ে রিমা আক্তার এবার এসএসসি পরীক্ষার্থী। হঠাৎ বাবার মৃত্যুতে এখন অভিভাবক শূন্য হয়ে পড়েছেন রিমা। বৃহস্পতিবার বেলা ১১টার দিকে পারিবারিক কবরস্থানে নিহতের দাফন সম্পন্ন হয়।

এসএসসি পরীক্ষার্থী রিমা আক্তার বলেন, আমার বাবার স্বপ্ন ছিল আমি সরকারি বড় অফিসার হবো। কিন্তু হঠাৎ করেই বাবা আমাদের ছেড়ে চলে গেলেন। পরীক্ষা দেওয়ার মানসিকতা ছিল না। কিন্তু বাবার স্বপ্নের কথা মনে হলে অনেক কষ্ট করে পরীক্ষার অংশগ্রহণ করেছি। আল্লাহর রহমতে পরীক্ষা ভালো হয়েছে। সবাই বাবা এবং আমার জন্য দোয়া করবেন।

বিজ্ঞাপন

বিজ্ঞাপন

স্থানীয় গ্রামের বাসিন্দা আরিফুল ইসলামসহ অনেকে বলেন, রিমা ছোট মেয়ে সবার আদরের। বিশেষ করে তার বাবার অনেক স্বপ্ন ছিল রিমাকে নিয়ে। কিন্তু হঠাৎ তার মৃত্যু হলো। এখন মেয়েটার যে কি হবে? অভিভাবক শূন্য হয়ে পড়লো সে।

তালিমগঞ্জ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক তসলিম উদ্দিন বলেন, বিষয়টি অত্যন্ত দুঃখজনক। খবর পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে রাতেই তার বাড়ি গিয়েছিলাম। শিক্ষার্থী রিমাকে মানসিকভাবে সাপোর্ট দিয়েছি। সকালে পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করার বিষয়ে সার্বিকভাবে সহযোগিতায় ছিলাম।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শিক্ষা কমিটির সভাপতি বিকাশ চন্দ্র বর্মণ বলেন, বিষয়টি খুবই দুঃখজনক, ওই শিক্ষার্থী যাতে সবগুলো পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে ভালো ফলাফল করতে পারে, আমরা খোঁজখবর রাখছি।

বিজ্ঞাপন

জিতু কবীর/জেডএইচ/জিকেএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন jagofeature@gmail.com ঠিকানায়।