সবজি-মুরগিতে স্বস্তি, মাছের বাজারে উত্তাপ

ময়মনসিংহের বাজারে বেশিরভাগ সবজির দাম কমেছে। একইসঙ্গে কমেছে মুরগির দামও। তবে উত্তাপ ছড়াচ্ছে মাছের বাজার। সবজি ও মুরগিতে ক্রেতারা স্বস্তিতে থাকলেও মাছের দামে ক্ষুব্ধ তারা। ক্রেতারা বলছেন, বাজারে মাছের প্রচুর সরবরাহ রয়েছে। তবুও সরবরাহ কমের অজুহাতে বিক্রেতারা বাড়তি দাম নিচ্ছেন।
মঙ্গলবার (৮ এপ্রিল) সকালে সরেজমিনে শহরের ঐতিহ্যবাহী মেছুয়া বাজার ঘুরে জানা যায়, গত এক সপ্তাহের ব্যবধানে সবজির দাম কেজিতে কমেছে ১০ থেকে ২০ টাকা। সবচেয়ে বেশি কমেছে সজনের দাম। সজনে গত সপ্তাহ ২৬০ টাকা কেজিতে বিক্রি হলেও এখন বিক্রি হচ্ছে মাত্র ৮০ টাকায়। এছাড়া গত সপ্তাহে শসা ৪০ টাকা কেজিতে বিক্রি হলেও এখন ৩০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া খিরা ১০ টাকা কমে ৪০ টাকায়, চিচিঙ্গা ১০ টাকা কমে ৪০ টাকায়, লতা ২০ টাকা কমে ৬০ টাকায়, করলা ২০ টাকা কমে ৫০, আমঝুরি বেগুন (ছোট বেগুন) ১০ টাকা টাকা কমে ৩০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। গত সপ্তাহে আকার ভেদে লেবু ৪০-৫০ টাকা হালিতে বিক্রি হলেও এখন ৩০-৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া অপরিবর্তিত অবস্থায় টমেটো ২০, কাঁচামরিচ ৫০, পটল ৪০, কাঁচা পেঁপে ৩০, মিষ্টি লাউ ২০, গাজর ৩০, মটরশুঁটি ৬০, বরবটি ৬০, বেগুন ৬০ টাকা কেজিতে ও পাতা কপি ২০ টাকা পিস হিসেবে বিক্রি হচ্ছে। পোল্ট্রি মুরগির ডিম অপরিবর্তিত অবস্থায় ৪০ টাকা হালিতে বিক্রি হলেও হাঁসের ডিমের দাম হালিতে ১০ টাকা বেড়েছে। এখন হাঁসের প্রতি হালি ডিম ৭০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
সবজির দামে স্বস্তি প্রকাশ করে মুরশেদ আলী নামে একজন ক্রেতা জাগো নিউজকে বলেন, বর্তমানে সবজির দাম সহনীয় পর্যায়ে রয়েছে। সবজির বিক্রেতারা সিন্ডিকেট করতে না পারলে
সারাবছরই ন্যায্য দামে পাওয়া যাবে। এজন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের বাজার মনিটরিং জোরদার করা প্রয়োজন।
সবজি বিক্রেতা জয়নাল মিয়া বলেন, ভোর হতেই সদর উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় ভ্যান ও পিকআপ ভর্তি করে প্রচুর সবজি আসছে। ক্রেতার তুলনায় সব ধরনের সবজির সরবরাহ বেশি। ফলে বেশিরভাগ সবজির দাম কমে গেছে। এতে বিক্রিও আগের তুলনায় বেড়েছে।
এদিকে একই বাজারে মুরগির দাম কেজিতে ১০ টাকা কমেছে। গত সপ্তাহ ব্রয়লার মুরগি ২০০ টাকা কেজিতে বিক্রি হলেও এখন ১৯০, সাদা কক ৩০০ টাকায় বিক্রি হলেও এখন ২৯০ ও লাল কক ৩১০ টাকায় বিক্রি হলেও এখন ৩০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া অপরিবর্তিত অবস্থায় গরুর মাংস ৭৫০ ও খাসির মাংস এক হাজার ১০০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে।
বাজারে উত্তাপ ছড়াচ্ছে মাছের দাম। আকার ভেদে কেজিতে মাছের দাম ১০ থেকে ৪০ টাকা পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। এতে বিপাকে পড়েছেন নিম্ন ও মধ্যম আয়ের মানুষ।
গত সপ্তাহ আকার ভেদে রুই ২৫০-৩০০ টাকায় বিক্রি হলেও এখন ২৮০-৩৩০, কাতল ২৪০-২৯০ টাকায় বিক্রি হলেও এখন ২৬০-৩১০, মৃগেল ২৩০-২৮০ টাকায় বিক্রি হলেও এখন ২৫০-৩০০, বাউশ ২৪০-২৮০ টাকায় বিক্রি হলেও এখন ২৫০-২৯০, সিলভার কার্প ১৭০-২০০ টাকায় বিক্রি হলেও এখন ১৮০-২১০, তেলাপিয়া ১৪০-২১০ টাকায় বিক্রি হলেও এখন ১৫০-২২০, পাঙাশ ১৩০-১৯০ টাকায় বিক্রি হলেও এখন ১৪০-২১০, রাজপুঁটি ২৫০-২৯০ টাকায় বিক্রি হলেও এখন ২৭০-৩২০, পাবদা ২৭০-৩৮০ টাকায় বিক্রি হলেও এখন ২৯০-৪২০, শোল ৪৪০-৫৫০ টাকায় বিক্রি হলেও এখন ৪৬০-৫৮০, টাকি ৩২০-৪৮০ টাকায় বিক্রি হলেও এখন ৩৫০-৫২০, ট্যাংরা ৩০০-৪১০ টাকায় বিক্রি হলেও এখন ৩২০-৪৩০, শিং ২৮০-৫৫০ টাকায় বিক্রি হলেও এখন ২৯০-৫৭০ ও কৈ ২৫০-২৮০ টাকায় বিক্রি হলেও এখন ২৭০-৩০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
একটি বেসরকারি ব্যাংক কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম ব্যাগ হাতে মাছ কিনছিলেন। এসময় তার সঙ্গে কথা হলে তিনি জাগো নিউজকে বলেন, বাজারে প্রচুর মাছ নিয়ে বসে আছেন বিক্রেতারা। তবুও দাম বাড়িয়ে বিক্রি করা হচ্ছে। এতে আমাদের কিছুই করার নেই। তাদের নির্ধারণ করা দামেই কিনতে বাধ্য হচ্ছি। এমন দামে অস্বস্তিতে পড়েছেন নিম্ন ও মধ্যম আয়ের লোকজন।
পাশেই এক মাছ বিক্রেতার সঙ্গে দামাদামি করছিলেন খোকন মিয়া। তিনি বলেন, ভ্যান চালিয়ে পরিবারের চার সদস্যের ভরণপোষণ করি। নিত্যপণ্যের দাম সহনীয় থাকলে স্বস্তিতে থাকি। তবে দাম বেড়ে গেলে সংসারে খরচের হিসেব মেলানো যায় না। এখন মাছের দাম আকাশচুম্বী। তাই প্রয়োজনের তুলনায় কম মাছ কিনে বাড়ি ফিরতে হচ্ছে।। মনে হচ্ছে, বিক্রেতারা সিন্ডিকেট করে দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন।
মাছের দাম বেশি রাখার কারণ সম্পর্কে জানতে চাইলে বিক্রেতা জহিরুল হক বলেন, আমি একা দাম বাড়াইনি। বাজারের সবাই যে দামে বিক্রি করছে, আমিও তাদের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে বিক্রি করছি। এতে আমাদের খুব বেশি লাভ হচ্ছে না। বাড়তি দামে কিনে এনেছি বলেই ক্রেতা পর্যায়ে দাম বেড়েছে।
এ বিষয়ে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর ময়মনসিংহের সহকারী পরিচালক মো. আব্দুস ছালাম বলেন, ঈদের পর এখন পর্যন্ত কোনো বাজারে অভিযান চালানো হয়নি। তবে বাজারগুলোতে খোঁজখবর নেওয়া হচ্ছে। নিজেদের মনমতো দামে মাছ কিংবা যেকোনো পণ্য বিক্রি করে ক্রেতাদের ঠকানোর প্রমাণ মিললে অভিযান চালিয়ে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
কামরুজ্জামান মিন্টু/এমএন/জিকেএস