ধ্বংসের মুখে মওলানা ভাসানীর স্মৃতি বিজড়িত প্রতিষ্ঠানগুলো
সরকারি পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে টাঙ্গাইল সন্তোষের মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীর স্মৃতি বিজড়িত সব কিছুই আজ প্রায় জরাজীর্ণ। মজলুম এই জননেতার বেশির ভাগ প্রতিষ্ঠানগুলো ধ্বংসের মুখে দাঁড়িয়ে আছে। সরকারি কোনো পৃষ্ঠপোষকতা না থাকায় ভাসানী ভক্ত ও স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যে চরম ক্ষোভ জন্ম নিয়েছে।
মুকুটবিহীন সম্রাট মওলানা ভাসানীর সন্তোষে যাদুঘরটিও রয়েছে শুধুই নামে মাত্র। ভিতরে রাখা তার সকল স্মৃতিময় জিনিসে আজ ধুলোর স্তর জমেছে। তার স্মৃতির সবকিছুই প্রায় বিলুপ্তির পথে। পাশাপাশি চলছে অবৈধভাবে মওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের জমি দখল।
জানা যায়, মওলানা ভাসানীর নামে ৩২টি প্রতিষ্ঠান রয়েছে। তার মধ্যে মওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়সহ ৩/৪টি প্রতিষ্ঠান ব্যতীত সবগুলোই প্রায় বিলুপ্তির পথে। এর মধ্যে সন্তোষ ইসলামিক টেকনিক্যাল কলেজ বিশ্ববিদ্যালয় ও ইসলামিক বালক হাই স্কুল ধুকে ধুকে বেঁচে আছে।
জং ধরা পুরানো টিন আর ঘুনে ধরা কাঠের খুটির ওপর নড়বড়ে হয়ে দাঁড়িয়ে আছে এই মহান নেতার মাজারের কাছে গড়ে তোলা দরবার হলটি। যে কোনো মুহুর্তে তা ভেঙে পরার সম্ভাবনা থাকলেও নেই কোনো সংস্কারের উদ্যোগ। ফলে রবার হলটিও আজ ধ্বংসের সম্মুখে। ২০০৬ সালে মওলানা ভাসানী রিসার্চ সেন্টার চালু করা হলেও তার কার্যক্রম শুধুই নামে মাত্র।
১৯৬৭ সালে মওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী চীন সফরকালে মাও সেতুং তাকে একটি ট্রাক্টর উপহার দিয়েছিলেন। সেটি তার জাদুঘরের সংরক্ষণ শালায় রাখার কথা থাকলেও রয়েছে গাছের নিচে অত্যন্ত অযত্ন আর অবহেলায়। নেই রক্ষণাবেক্ষণের কোনো উদ্যোগ।
এ বিষয়ে ভাসানীর প্রকাশিত তৎকালীন সাপ্তাহিক হক কথার সম্পাদক সৈয়দ ইরফানুল বারী জানান, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের চেয়ারম্যান প্রফেসর আবদুল মান্নান বিশ্ববিদ্যালয়ে এসে ট্রাক্টরটি সংরক্ষণের আশ্বাস দিয়েছেন। কিন্তু এখনো কোনো ফলাফল পাইনি। আশাকরি খুব শিগগিরই এটি বাস্তবায়ন হবে। যাদুঘরের আয়তন ছোট হওয়ায় ভিতরে ট্রাক্টর রাখা সম্ভব হয়নি।
এছাড়াও যাদুঘরের ধারণক্ষমতা কম থাকায় তার ব্যবহৃত জিনিস ও স্মৃতিময় ছবিগুলো সঠিকভাবে রক্ষণাবেক্ষণ করা সম্ভব হচ্ছে না। হুজুরের যাদুঘর যে পরিসর ও উন্নত মানের থাকা প্রয়োজন সেভাবে নেই। ছোট্ট গণ্ডির মধ্যেই সীমাবন্ধ রয়েছে। সরকারের সুদৃষ্টিই পারে আরো উন্নত ও বড় পরিসরে এটিকে গড়ে তুলতে।
মওলানা ভাসানীর নাতী ও মওলানা ভাসানী ফাউন্ডেশনের মহাসচিব মাহমুদুল হক সানু জানান, আমার নানা ভাইয়ের প্রায় ৩২টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ছিল, বর্তমানে ৩/৪টি প্রতিষ্ঠান ছাড়া বাকি সবগুলোই বিলুপ্ত হয়ে গেছে। ভাসানীকে নতুন প্রজন্মের কাছে তুলে ধরতে তার মৃত্যু বার্ষিকী উপলক্ষে মেলার আয়োজন করা হয়। টাঙ্গাইলের সন্তোষে তার জন্ম ও মৃত্যু বার্ষিকী আমরা পালন করে থাকি।
এছাড়া মহান এই নেতার জন্ম ও মৃত্যু বার্ষিকী দেশের কোথাও সরকারি বা বেসরকারিভাবে পালিত হয় না। এসব কারণে নতুন প্রজন্মের কাছে হারিয়ে যাচ্ছে মুকুট বিহীন সম্রাট মওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানীর নাম। সবচেয়ে কষ্টের বিষয় বাংলাদেশ শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের বোর্ড বই থেকে নতুন প্রজন্ম যে শিক্ষা গ্রহণ করবে, সেই বোর্ড বইয়ে তাকে নিয়ে কিছু লেখা নেই।
তিনি আরো জানান, ইতোপূর্বে তৃতীয় ও অষ্টম শ্রেণির বইতে তাকে নিয়ে যে লেখা ছিল সেটিও আজ নেই। যদি ভাসানীর সেই লেখা বোর্ড বইতে পুনরাই দেয়া হয়, তাহলে নতুন প্রজন্ম মজলুম জননেতা মওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানীর সঠিক ইতিহাস জানতে পারবে। বেঁচে থাকবে এই মহান নেতার রাজনৈতিক আত্মত্যাগ।
মাজারের খাদেম আব্দুল জব্বার জানান, আমি হুজুরের সঙ্গে ভারত থেকে এসে এই মাজারে ৫১ বছর যাবৎ কাজ করছি। মাজার হচ্ছে এবাদত ও সাধনার জায়গা। কিন্তু নারী-পুরুষ এই পবিত্র জায়গায় একত্রে বসে এবাদত করায় পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে। তাই কর্তৃপক্ষের কাছে আমার আবেদন যেন নারী ও পুরুষের পৃথক পৃথক রুমের ব্যবস্থা করে দেয়া হয়।
বিশ্ববিদ্যালয়ের জমি দখল নিয়ে সেখানকার সহকারী স্টেট অফিসার অ্যাডভোকেট সাইফুল ইসলাম জানান, জাতীয় সংসদে সরকার ঘোষিত সর্বমোট জমির পরিমাণ ৫৭.৯৫ একর। এর মধ্যে কিছু জায়গা স্থানীয় কতিপয় লোকজন দোকানপাট ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের নামে অবৈধভাবে দখল করে আছে।
এর মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের পশ্চিম পাশে গোপাল মন্দির নামে মন্দির ঘর ও কীর্তনঘর তৈরি করে অবৈধভাবে দখল করা হয়েছে এ প্রতিষ্ঠানের জমি। এছাড়াও এর বেশকিছু জমি দখল করে দিঘীর পাড়ে নির্মাণ করা হয়েছে বেশ কয়েকটি দোকান ঘর।
এফএ/এমএস