নেত্রকোনায় খামারির ফাঁদে ধরা পড়লো মেছোবাঘ

জেলা প্রতিনিধি
জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি নেত্রকোনা
প্রকাশিত: ০৬:২৭ পিএম, ০৪ এপ্রিল ২০২৫

নেত্রকোনার কলমাকান্দায় খামারির ফাঁদে একটি মেছোবাঘ ধরা পড়েছে। শুক্রবার (৪ এপ্রিল) ভোর পৌনে ৫টার দিকে পাচুড়া গ্রামের শেখ জামালের হাঁসের খামার থেকে মেছোবাঘটি আটক করা হয়।

মেছোবাঘটির উচ্চতা প্রায় দুই ফুট, লম্বায় তিন ফুট। সারা গায়ে ডোরাকাটা দাগ রয়েছে। মুখমণ্ডল অনেকটা বিড়ালের মতো, গায়ের রং ধূসর। এটি দেখার জন্য লোকজন ভিড় জমিয়েছেন।

বিজ্ঞাপন

কলমাকান্দা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ফাইযুল ওয়াসীমা নাহাত বলেন, একটি হাঁসের খামারে মেছোবাঘ আটকের খবর পেয়েছি। বন-জঙ্গলে হয়ত খাবার না পেয়ে বাঘের বাচ্চাটি লোকালয়ে চলে এসেছে। এটি অবমুক্ত করার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।

স্থানীয় বাসিন্দা, পুলিশ ও জেলা বনবিভাগ সূত্রে জানা যায়, পাচুড়া গ্রামের বাসিন্দা শেখ জামালের খামারে গত দুই মাসে কিছুদিন পরপর রাতে দুই থেকে পাঁচটি করে হাঁস কমতে থাকে। তিনি খামারের বেড়ার চারদিকে জাল দিয়ে রাখেন। এতেও কাজ হয়নি। সম্প্রতি তিনি কলমাকান্দা থেকে লোহার তৈরি ফাঁদসহ একটি খাঁচা বানিয়ে আনেন। খাঁচাটির ভেতর একটি হাঁস রেখে রাতে খামারের এক পাশে রাখা হয়। এরই মধ্যে দুটি শেয়াল ওই ফাঁদে আটকা পরে। পরে শিয়ালগুলোকে ছেড়ে দেওয়া হয়। শুক্রবার ভোরে ওই ফাঁদে একটি মেছোবাঘ ধরা পড়ে। খবর পেয়ে সকাল থেকে উৎসুক লোকজন মেছোবাঘটি দেখতে ওই খামারির বাড়িতে ভিড় করে।

বিজ্ঞাপন

বিজ্ঞাপন

খামারি শেখ জামাল বলেন, গত দুই মাসে রাতের বেলা আমার খামারের অন্তত ২৮টি হাঁস কমেছে। আমি ভেবেছিলাম শিয়াল অথবা বনবিড়াল জাতীয় কোনো প্রাণী হাঁসগুলো খেয়েছে। পরে ফাঁদে বাঘ ধরা পড়ে। গ্রামের লোকজন মেছোবাঘটি মেরে ফেলতে চেয়েছিল। আমি তা হতে দিইনি। উপজেলা প্রশাসন, পুলিশ ও বনবিভাগের লোকজনকে খবর দেওয়া হয়েছে উদ্ধার করে নিয়ে যেতে।

জাগোনিউজের খবর পেতে ফলো করুন

নেত্রকোনা সরকারি কলেজের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের সাবেক প্রধান ও বন্যপ্রাণী গবেষক মো. নুরুল বাসেত জানান, মেছোবাঘ বিড়ালজাতীয় প্রাণী। দেখতে অনেকটা বাঘের মতো হওয়ায় মেছোবাঘ নামে পরিচিত। এগুলো হাওর, জলাশয় ও জলাভূমির আশপাশের ঝোপঝাড়, নির্জন কবরস্থানে ও বাঁশ ঝাড়ে আবাস গড়ে। এসব স্থানেই চলাফেরা ও বাচ্চা প্রসব করে। কখনো ধান-সবজি ক্ষেতে, কখনো বাড়ির পরিত্যক্ত ঘরের কোণে আশ্রয় নেয়। জলাশয়ের দুর্বল ও রোগাক্রান্ত মাছ শিকার করে খায়। ধানক্ষেতের জন্য ক্ষতিকর ইঁদুর শিকার করে। ফসল বাঁচায়। কৃষকের উপকার করে। কিন্তু জলবায়ু পরিবর্তনসহ প্রাকৃতিক পরিবেশ বিপর্যয়, ঝোঁপঝাড় উজাড়, জনবসতির সম্প্রসারণের ফলে প্রাণীটির আবাসস্থল সংকুচিত হয়ে পড়েছে। আন্তর্জাতিক প্রকৃতি সংরক্ষণ সংস্থাগুলোর সংগঠন আইইউসিএন মেছোবাঘকে সংকটাপন্ন প্রাণী হিসেবে লাল তালিকাভুক্ত করেছে।

এইচ এম কামাল/এমএন/এএসএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন jagofeature@gmail.com ঠিকানায়।