দু’পক্ষের দ্বন্দ্বে বন্ধ সাড়ে তিনশো বছরের ঐতিহ্যবাহী মেলা

জেলা প্রতিনিধি
জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি ফরিদপুর
প্রকাশিত: ১২:২৯ পিএম, ২৪ মার্চ ২০২৫

ফরিদপুরের বোয়ালমারী উপজেলার রুপাপাত ইউনিয়নের কাটাগড় দেওয়ান শাগির শাহ মাজারে প্রায় সাড়ে ৩শ বছর ধরে ঘোড়দৌড়সহ ঐতিহ্যবাহী মেলা অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। তবে মেলার কমিটি ঘিরে দুই পক্ষের দ্বন্দ্বে এ বছর মেলা অনুষ্ঠিত হবে না।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, উপজেলার রূপাপাত ইউনিয়নের কাটাগড় গ্রামে অবস্থিত দেওয়ান শাগির শাহ্ (র.) ওফাত (মৃত্যু) দিবস উপলক্ষে উরসকে কেন্দ্র করে প্রতিবছর এ মেলার আয়োজন করা হয়। চলতি বছর এ মেলার ৩৫১ বারের আয়োজন হওয়ার কথা ছিল। শুরু থেকে আজ পর্যন্ত কোনো কারণেই মেলাটি বন্ধ হয়নি বলে জানিয়েছে এলাকাবাসী। এমনকি করোনা মহামারির সময়ও (২০২১) স্বল্প পরিসরে এ মেলার আয়োজন করা হয়েছিল। এ বছর মেলার জন্য দূরদূরান্ত থেকে ব্যবসায়ীরা দোকানপাট নিয়ে এলেও স্থানীয়দের কাছ থেকে মেলা বন্ধ হয়ে যাওয়ার কথা শুনে ফিরে যাচ্ছেন।

বিজ্ঞাপন

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, প্রতিবছর সপ্তাহব্যাপী চলে এ মেলা। এ প্রাণের মেলায় আশপাশের ইউনিয়ন ও গ্রাম থেকে মানুষ আসে। প্রতি বছরের ১২ই চৈত্র অনুষ্ঠিত হয় এ মেলা। এক সপ্তাহ আগে থেকে বিভিন্ন রকম দোকান আসতে শুরু করে। মেলার প্রধান আকর্ষণ থাকে সাজ-বাতাসা, রসগোল্লাসহ হরেক রকমের মিষ্টি। এছাড়া কসমেটিক, খেলনা, ফার্নিচারসহ কয়েক হাজার দোকান বসে।

ফরিদপুরের বোয়ালমারী উপজেলার রুপাপাত ইউনিয়নের কাটাগড় দেওয়ান শাগির শাহ মাজারে প্রায় সাড়ে ৩শ বছর ধরে ঘোড়দৌড়সহ ঐতিহ্যবাহী

বিজ্ঞাপন

বিজ্ঞাপন

এ বছর স্থানীয়দের অন্তঃকোন্দলের কারণে মেলা আয়োজকদের দুই কমিটি বিভক্ত হয়ে পড়ে। দুইটি কমিটিই মেলার অনুমোদন চেয়ে প্রশাসনের কাছে আবেদন করে। এই দুইটি কমিটি গঠনকে কেন্দ্র করে সম্প্রতি দুই গ্রুপের সংঘর্ষও হয়। সংঘর্ষের ঘটনায় দুই পক্ষই মামলা করে। যার কারণে এলাকায় শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষার্থে প্রশাসন অনুমতি দেননি।

এক পক্ষের মেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক আজাদ মোল্যা বলেন, গত ৪০০ বছর যাবত কাটাগড় ঐতিহ্যবাহী মেলা হয়ে আসছে। এ বছর স্থানীয়দের মধ্যে অন্তঃকোন্দলের কারণে দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে দুই গ্রুপ মেলার কমিটি বানিয়ে অনুমতির জন্য প্রশাসনের কাছে আবেদন করে। মেলা কমিটি নিয়ে দুই গ্রুপে মারামারিও হয়। মারামারির ঘটনায় মামলাও হয়। অনেকেই জেলে আছে আবার অনেকেই হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। প্রশাসন জানিয়েছিল যদি দুই গ্রুপ মিলেমিশে মেলা করতে পারেন তাহলে অনুমতি দেওয়া যেতে পারে।

তিনি আরও বলেন, দুই গ্রুপ এক হওয়ার কোনো সুযোগ নেই, তাই এ বছর মেলা বন্ধ থাকবে। যেসব দোকানপাট আসছে তারা চলে যাচ্ছে।

বিজ্ঞাপন

বিজ্ঞাপন

কাটাগড় দেওয়ান শাগির শাহ (রহ.) এর মাজারের নবম খাদেম সিদ্দিক ফকির বলেন, আমি এখানে ২০ বছর ধরে খেদমত করছি। এর আগে আমার দাদা, তার বাবা খেদমত করেছেন। ১২ই চৈত্র শাগির শাহ (রহ.) উহাদি হয়ে যান। সেইদিন থেকে এখানে ওরস হয়। ওরস উপলক্ষে এখানে মেলা হয়। মেলাটি কোনোদিন বন্ধের কথা শুনিনি। এ বছর কী কারণে বন্ধ হলো জানি না। আমরা চাই এখানে আবার মেলাটি শুরু হোক।

ফরিদপুরের বোয়ালমারী উপজেলার রুপাপাত ইউনিয়নের কাটাগড় দেওয়ান শাগির শাহ মাজারে প্রায় সাড়ে ৩শ বছর ধরে ঘোড়দৌড়সহ ঐতিহ্যবাহী

মেলা কমিটির সাবেক কোশাধ্যক্ষ ও রূপাপাত ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান মো. আজিজার রহমান জানান, কাটাগড় দেওয়ান শাগির শাহ’র ওরস উপলক্ষে প্রায় ৫২ বছর ধরে আমরা সব দলের লোকজন মিলেমিশে মেলাটি করে আসছি। আমরা আওয়ামী লীগের লোক হওয়ার কারণে এ বছর আমাদের মেলা কমিটিতে রাখেনি। এ নিয়ে আমাদের কোনো আপত্তি নেই। বিএনপির দু’পক্ষের রেষারেষির কারণে এ বছর মেলাটি বন্ধ হয়ে গেছে। তারা মেলার জন্য তিনবার কমিটি করেছে। গ্রামে একটি মারামারি ঘটনায় আমাদের লোকজন আহত হয়ে হাসপাতালে রয়েছে। এ নিয়ে মামলাও হয়েছে।

বিজ্ঞাপন

এ ব্যাপারে বোয়ালমারী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মাহমুদুল হাসান বলেন, ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে সবকিছু জানানো হয়েছে। অনুমতির বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষই দেখবেন।

এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) তানভীর হাসান চৌধুরী বলেন, দুইটি কমিটি অনুমোদন চেয়ে আবেদন করেছিলেন। তাদেরকে বলা হয়েছে দুই গ্রুপ যদি এক হতে পারে তাহলে অনুমতি দেওয়া যেতে পারে। তারা দুই গ্রুপ এক হতে পারবেন না বিধায় মেলা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, ওই এলাকায় মেলাকে কেন্দ্র করে দুই গ্রুপের সংঘর্ষ হয়। সংঘর্ষের ঘটনায় দুই গ্রুপেরই মামলা হয়। এলাকায় আইন-শৃঙ্খলা রক্ষার্থে মেলা বন্ধ করা ছাড়া উপায় নেই। তবে ওরশ শরীফ করতে কোনো বাধা নেই।

বিজ্ঞাপন

এন কে বি নয়ন/এফএ/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন jagofeature@gmail.com ঠিকানায়।