অভাবে হাসপাতাল, সেবায় জোড়াতালি

জেলা প্রতিনিধি
জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি গাইবান্ধা
প্রকাশিত: ০৩:০৪ পিএম, ২৩ মার্চ ২০২৫

নানা সংকট ও অব্যবস্থাপনায় জোড়াতালি দিয়ে চলছে গাইবান্ধা জেনারেল হাসপাতালের চিকিৎসা ব্যবস্থা। অপরিচ্ছন্ন পরিবেশ এবং পর্যাপ্ত চিকিৎসক ও অবকাঠোমোর অভাবে সেবা নিতে এসে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে রোগীদের। কর্তৃপক্ষের দাবি, উপরমহলে বারবার জানিয়েও জনবল পাওয়া যাচ্ছে না।

হাসপাতাল সূত্র জানায়, জেলার প্রায় ৩৫ লাখ মানুষের চিকিৎসার ভরসাস্থল এই হাসপাতাল। হাসপাতালে প্রতিদিন বহির্বিভাগে গড়ে এক হাজার ৫০০ জন রোগীকে সেবা দেওয়া হয়। এছাড়া প্রতিদিন ২৭০ থেকে ৩০০ জন রোগী ভর্তি থাকেন। চিকিৎসক সংকটের কারণে তাদের সেবা দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। জেলাবাসীর দাবির পরিপ্রেক্ষিতে হাসপাতালটি সম্প্রতি ২৫০ শয্যা হিসেবে ঘোষণা করা হলেও চিকিৎসক রয়েছেন মাত্র ১৯ জন। যেখানে ১০০ শয্যার হাসপাতালের জন্য ৪২ জন চিকিৎসক দরকার হয়। ফলে চিকিৎসক সংকটে খুঁড়িয়ে চলছে হাসপাতালটি। এরমধ্যে চক্ষু, চর্ম-যৌন ও সার্জারি বিভাগে কোনো চিকিৎসক নেই।

বিজ্ঞাপন

সোমবার (১৭ মার্চ) সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, হাসপাতালের টিকিট কাউন্টারের সামনে রোগীর স্বজনরা সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে আছেন। চিকিৎসকের চেম্বারের সামনে দাঁড়িয়ে আছেন রোগীরা। হাসপাতালের বারান্দায় রোগীদের অনেকে বিছানা পেতে চিকিৎসা নিচ্ছেন। ওয়ার্ডের ভেতরের পরিবেশ অপরিচ্ছন্ন হয়ে রয়েছে। শিশু ওয়ার্ডে গিয়েও একই অবস্থা দেখা গেছে।

রোগী ও স্বজনদের অভিযোগ, দীর্ঘসময় লাইনে দাঁড়িয়ে টিকিট সংগ্রহ করলেও নিয়মিত চিকিৎসক না আসায় সেবা না পেয়ে দিন শেষে হতাশা হয়ে ফিরতে হয়। সরকারিভাবে ওষুধ সরবরাহের কথা থাকলেও দেওয়া হচ্ছেনা। রোগীদের ব্যবস্থাপত্রে যে পরিমাণ ওষুধ দেওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হয় কাউন্টারে কাগজ জমা নিলেও সে পরিমাণ ওষুধ দেওয়া হচ্ছেনা। এ নিয়ে বিভিন্ন সংগঠন আন্দোলন করলেও কোনো লাভ হয়নি। অন্যদিকে দীর্ঘ ৫ বছরের অধিক সময় হাসপাতালটিতে এক্স-রেসহ বিভিন্ন পরীক্ষা বন্ধ থাকায় ভোগান্তি ও হয়রানিতে পোহাচ্ছেন রোগীরা।

বিজ্ঞাপন

বিজ্ঞাপন

অভাবে হাসপাতাল, সেবায় জোড়াতালি

সদর উপজেলার বল্লমঝড় থেকে সোমা বেগম তিন বছরের সন্তান ফেরদৌসিকে হাসপাতালে শিশু ডাক্তার দেখাতে নিয়ে আসছেন। তিনি জাগো নিউজকে বলেন, ‘মোর ছলটাক ডাক্তার গাল মুখ দেখে এখান ফদ্দি লিখে দিল। ভালো-মন্দ কিছু বললো না। এই ক্যাঙকা রোগী দেখা মুই কিছুই বুঝনু না। ওই ডাক্তাররক এর আগে বাহিরোত দেখাছিনু। তখন ভালো করেই দেখছিলো।’

আরও পড়ুন:

বিজ্ঞাপন

বিজ্ঞাপন

সদর উপজেলার রিফাইতপুর গ্রামের হামিলা বেগম (৫৫) বলেন, ‘হাসপাতালে ওয়াডত কোনো চকি ফাঁকা নাই। তিনদিন ধরে বারান্দাত আছি। সকাল লাগাত একবার ডাকতার আছি দেকি যায়। ভরদিন আর কোনো খবর নাই। এটে বসে থাকি দম বন্ধ হয়ে যায়।

দক্ষিণ ধানগড়া গ্রামের ইসাহাক আলী (৪৮) বলেন, ‘হাসপাতালে চিকিৎসা নেওয়ার কোনো পরিবেশ নাই। চারদিক থেকে দুর্গন্ধে এখানে টেকা বড় দায়।’

হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা মো. আসিফ রহমান জাগো নিউজকে বলেন, ১০০ শয্যার জনবল দিয়ে ২৫০ শয্যার হাসপাতাল চালানোয় রোগীদের দুর্ভোগ হচ্ছে। জনবল ও অবকাঠামো সমস্যার কারণে এমন হচ্ছে।

বিজ্ঞাপন

হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. মাহবুব হোসেন বলেন, হাসপাতালের সবকিছু নিয়মিত পরিষ্কার করা হয়ে থাকে। কিন্তু রোগীর লোকজন এগুলো ময়লা ফেলে নোংরা করেন। চিকিৎসকের চাহিদা চেয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে কয়েকবার আবেদন করা হয়েছে। কোনো সাড়া পাইনি। সরকার থেকে চাহিদা মতো ওষুধ না পেলে রোগীদের কীভাবে দেব?

এ এইচ শামীম/এমএন/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন jagofeature@gmail.com ঠিকানায়।