ঋণের টাকায় কেনা ভ্যান ছিনতাই, নিঃস্ব জাহাঙ্গীর

দেড় লাখ টাকা ঋণ নিয়ে কেনা ব্যাটারিচালিত ভ্যানই ছিল বৃদ্ধ জাহাঙ্গীর আলমের একমাত্র উপার্জনের মাধ্যম। সেই ভ্যান চালিয়ে তিনি সংসার চালাতেন। সন্তানদের পড়াশোনা ও ঋণের কিস্তি পরিশোধ করতেন। কিন্তু দুর্বৃত্তরা সেটিও কেড়ে নিয়েছে। অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে তাকে ও তার ছেলেকে বেঁধে ভ্যানটি ছিনিয়ে নিয়ে যান তারা।
শুক্রবার (২১ মার্চ) ভোররাতে চুয়াডাঙ্গার সদর উপজেলার বেলগাছি-মাখালডাঙ্গা সড়কে এ ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটে।
ভুক্তভোগী জাহাঙ্গীর আলম চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার মাখালডাঙ্গা গ্রামের মাঝেরপাড়ার বাসিন্দা। বয়স্ক এ মানুষটি দীর্ঘদিন ধরে ভ্যান চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করছিলেন। তার সংসারে স্ত্রী ও তিন সন্তান-বড় ছেলে এসএসসি পরীক্ষার্থী, মেজো ছেলে ষষ্ঠ শ্রেণি ও ছোট ছেলে প্রথম শ্রেণিতে পড়ে।
বৃহস্পতিবার রাতে চুয়াডাঙ্গার মারকাজ মসজিদে চারজন যাত্রীকে নামিয়ে দিয়ে বাড়ি ফেরেন জাহাঙ্গীর। তারা তাকে ভোরে আবার নিতে বলেছিলেন। সেই অনুযায়ী, শুক্রবার ভোর ৪টার দিকে ছোট ছেলেকে সঙ্গে নিয়ে তিনি বের হন। কিন্তু পথে বেলগাছি-মাখালডাঙ্গা সড়কে কলাগাছ ফেলে রাখা দেখতে পান। ভ্যানটি থামানোর সঙ্গে সঙ্গেই দুই দুর্বৃত্ত ধারালো অস্ত্র হাতে এগিয়ে আসে।
জাহাঙ্গীর আলম বলেন, আমাকে ও আমার ছেলেকে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে তারা হাত-পা বেঁধে ফেলে। আমার ছেলের সামনে আমাকে উলঙ্গ না করার জন্য আকুতি জানিয়েছিলাম, কিন্তু তারা কোনো কথা শোনেনি। সাহরির সময় হয়ে যাচ্ছে বলেও অনুরোধ করেছিলাম, তাও মানেনি। আমাদের ফেলে রেখে ভ্যান, মোবাইল ফোন নিয়ে পালিয়ে যায়।
জাহাঙ্গীর আলম বলেন, এ ভ্যান চালিয়ে সংসার চলত, ছেলেদের পড়াশোনা চলত, কিস্তির টাকা শোধ করতাম। এখন আমি কী করব? কোথায় যাব?" বলতে বলতে কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি।
প্রতিবেশীরা জানান, জাহাঙ্গীর আলম খুব কষ্ট করে সংসার চালাতেন। তার শরীরও ভালো নয়। ভ্যানটি হারিয়ে তিনি পুরোপুরি নিঃস্ব হয়ে গেছেন। তারা সমাজের বিত্তবানদের কাছে সাহায্যের আবেদন জানিয়েছেন।
সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) খালেদুর রহমান বলেন, ভুক্তভোগীকে নিয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। আশপাশের সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ করে অপরাধীদের শনাক্তের চেষ্টা চলছে।
হুসাইন মালিক/আরএইচ/এএসএম