মাদক কারবারিকে ১৫১ ধারায় চালান, বিনিময়ে ৪০ হাজার টাকা ঘুস!

নওগাঁর বদলগাছীতে ৫০ গ্রাম গাঁজাসহ দুজনকে আটকের পর ১৫১ ধারায় চালান দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে পুলিশের বিরুদ্ধে। তবে পুলিশ বিষয়টি অস্বীকার করেছে।
স্থানীয় প্রত্যক্ষদর্শীদের তথ্যমতে, গত ১৩ মার্চ সন্ধ্যায় বদলগাছী থানার উপপরিদর্শক (এসআই) আব্দুল মোমিনের নেতৃত্বে পুলিশের একটি টিম উপজেলা সদরের হাঁপানিয়া এলাকায় মাদকবিরোধী অভিযান পরিচালনা করে। অভিযানে ওই গ্রামের চিহ্নিত মাদক কারবারি উজ্জ্বল কুমার মহন্তকে (৪৫) ৫০ গ্রাম গাঁজা বিক্রি করা অবস্থায় হাতেনাতে আটক করা হয়। ওইসময়ে মেহেদী হাসান (২০) নামের এক যুবককেও গাঁজা সেবনরত অবস্থায় আটক করে পুলিশ। এরপর তাদের থানায় নেওয়া হয়। তবে রহস্যজনকভাবে পরের দিন পুলিশ তাদের আদালতে পাঠালে ওইদিনই জামিনে বেরিয়ে আসেন উজ্জ্বল ও মেহেদী।
পুলিশকে ঘুস দেওয়ার বিষয়টি অকপটে স্বীকার করেছে গ্রেফতার মেহেদী হাসানের পরিবার। মেহেদীর স্ত্রী মোছা. জান্নাতুন বলেন, ‘১৫১ ধারায় চালান দেওয়ার বিনিময়ে ওইদিন উজ্জ্বলের কাছে থেকে নগদ ৪০ হাজার টাকা ঘুষ নিয়েছে পুলিশ। এরপর আরও ১৫ হাজার টাকা দাবি ছিলো পুলিশের। সেই ১৫ হাজার টাকা দিতে না পারায় মেহেদীর ব্যবহৃত স্মার্টফোনটি তারা থানায় আটকে রেখেছে। ওই টাকা পরিশোধ না করলে ফোন ফেরত দেবে না বলে সাফ জানিয়ে দিয়েছেন এসআই মোমিন।’
স্থানীয়রা জানান, ‘উপজেলার আটটি ইউনিয়নের বিভিন্ন পয়েন্টে প্রকাশ্যে ফেরি করে গাঁজা, ফেনসিডিল, ইয়াবা, হিরোইন ও ট্যাপেন্টাডল ট্যাবলেট বিক্রি হচ্ছে। এসব মাদক কারবারিরা বিভিন্ন সময়ে পুলিশের হাতে আটক হলেও পুলিশের সহযোগিতায় সহজেই জামিয়ে বেরিয়ে আসছেন। বেরিয়ে আসার পর আরও দ্বিগুণ উৎসাহে তারা মাদক বিক্রি করেন। এ ধরনের গ্রেফতার বাণিজ্যে জড়িত পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।’
এ বিষয়ে মাদকবিরোধী অভিযানে নেতৃত্ব দেওয়া এসআই আব্দুল মোমিন বলেন, ‘ঘটনাস্থলে গাঁজা সেবনের উদ্দেশ্যে আসা উজ্জ্বল ও মেহেদীকে আটক করা হয়। তবে তাদের কাছে থেকে গাঁজার ছিঁটেফোটাও উদ্ধার হয়নি। তাই বাধ্য হয়ে ১৫১ ধারায় চালান দেওয়া হয়েছে।’
তবে বদলগাছী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাহজাহান আলী বলেন, ‘ওইদিন উজ্জ্বল ও মেহেদীর কাছে সামান্য পরিমাণে গাঁজা পাওয়া গেছে, যা নিয়মিত মামলা দেওয়ার জন্য যথেষ্ট নয়। আটকের পর যেহেতু ছেড়ে দেওয়ার সুযোগ নেই, তাই ১৫১ ধারায় চালান দেওয়া হয়েছে। রফাদফার মাধ্যমে মাদক কারবারিকে দ্রুত জামিন পেতে সহযোগিতা করার অভিযোগটি সঠিক নয়।’
সার্বিক বিষয়ে নওগাঁর পুলিশ সুপার সাফিউল সারোয়ার বলেন, মাদকসহ কাওকে গ্রেফতারের পর ১৫১ ধারায় চালান দেওয়ার সুযোগ নেই। বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে। সত্যতা পাওয়া গেলে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
আরমান হোসেন রুমন/এসআর/জেআইএম