ধান চাষে আশা জাগাচ্ছে এডব্লিউডি সেচ পদ্ধতি

ধান চাষে প্রচলিত সেচ পদ্ধতির চেয়ে ২৮ শতাংশ পর্যন্ত সাশ্রয়ী অলটারনেট ওয়েটিং অ্যান্ড ড্রায়িং (এডব্লিউডি) পদ্ধতি। এই পদ্ধতিতে পরিমিত পরিমাণ পানি সেচ দেওয়ায় জমিতে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয় না। এতে নানা ধরনের জটিলতা থেকে মুক্ত থাকে ধানক্ষেত।
চলতি বোরো মৌসুমে ধান উৎপাদনে পরিবেশ সুরক্ষা ও পানি সাশ্রয়ে পার্বত্য খাগড়াছড়ির মাটিরাঙ্গায় প্রথমবারের মতো নতুন এ সেচ পদ্ধতি ব্যবহার করা হচ্ছে। সফলভাবে এ পদ্ধতি ব্যবহার করা গেলে ধান চাষে নতুন আশার কথা বলছেন কৃষি কর্মকর্তারা।
ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের তথ্যমতে, এডব্লিউডি প্রযুক্তিতে বলতে জমিকে পর্যায়ক্রমে ভিজানো ও শুকানোর মাধ্যমে ধানক্ষেতে প্রয়োজনমতো নিয়ন্ত্রিত সেচ দেওয়া বোঝায়। এ পদ্ধতিতে ধানক্ষেতে ১২ ইঞ্চি লম্বা ও তিন ইঞ্চি ব্যাসের ছিদ্রযুক্ত প্লাস্টিকের পাইপ দেওয়া হয়। যার ৮ ইঞ্চি মাটির নিচে পুঁতে রাখা হয়। এর মাধ্যমে ভেতরের পানির স্তর পরীক্ষা করে প্রয়োজনমতো পানি সেচ দেওয়া হয়ে থাকে। এক কেজি ধান উৎপাদনে যেখানে প্রচলিত পদ্ধতিতে প্রায় দুই থেকে তিন হাজার লিটার পানির প্রয়োজন হয় সেখানে এডাব্লিউডি প্রযুক্তিতে দরকার হয় মাত্র এক হাজার ২০০ লিটার পানি।
জানা যায়, ধানক্ষেতে সেচের পানির আধিক্যের কারণে ফসলের উৎপাদন ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে এবং পোকার আক্রমণ বেড়ে যেতে পারে। জলাবদ্ধ জমি থেকে ধান গাছ দস্তা ও জিপসাম সার গ্রহণ করতে পারে না। দস্তা গ্রহণ করতে না পারলে ধানে বাদামি দাগ দেখা দেয়। জলাবদ্ধ জমিতে বাদামি গাছ ফড়িং, চুঙ্গি পোকার আক্রমণ বৃদ্ধি পায়। জমিতে পানি আটকে থাকলে ধান গাছে কুশি উৎপাদন ব্যাহত হয়। জলাবদ্ধ জমিতে ইউরিয়া সার প্রয়োগ করা যায়না এবং মিথেন গ্যাস উৎপাদন হয়ে বাতাসে ছড়িয়ে পড়ে বাতাসকে দূষিত করে। কিন্তু এডব্লিউডি পদ্ধতির সেচ প্রকল্পে এই সমস্যা থাকে না। ফলে ধানের উৎপাদন বৃদ্ধিতে এডব্লিউডি খুবই উপকারী ও পানি সাশ্রয়ী একটি প্রযুক্তি।
মাটিরাঙ্গা পৌরসভার চড়পাড়া ব্লকে দুই একর ৫০ শতক জমিতে মো. তাজুল ইসলাম, সাজাই মারমা এবং সুফিয়া বেগমকে পরীক্ষামূলকভাবে এডব্লিউডি প্রযুক্তি প্রদর্শনী দেওয়া হয়। এ প্রযুক্তিটি নতুন বিধায় আশপাশের কৃষকদের মাঝে কৌতূহল সৃষ্টি করেছে। আশেপাশের অনেক কৃষকই প্রযুক্তিটি দেখে ধারণা নিতে প্রতিদিনই প্রদর্শনী দেখতে ভিড় করছে।
মাটিরাঙ্গা উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, এ প্রকল্পের আওতায় তিনজন কৃষককে, ব্রি-ধানের বীজ, ইউরিয়া সার, ডিএপি, এমওপি, জিংক সালফেট, জিপসাম, বোরণ, জৈব সার ও বালাইনাশক ছয়টি এডব্লিউডি পাইপসহ অন্যান্য উপকরণ প্রদান করা হয়।
কৃষক তাজুল ইসলাম বলেন, এডব্লিউডি প্রযুক্তি সম্পর্কে আমি পূর্বে অবগত ছিলাম না। উপজেলা কৃষি অফিস আমাদের পরামর্শসহ সকল প্রকার সহযোগিতা করে যাচ্ছে। এডব্লিউডি প্রযুক্তি পরীক্ষামূলকভাবে বেশ সফল। আমি কৃষকদের এ পদ্ধতি ব্যাবহারের সুফল ভোগ করতে পরামর্শ দেব।
এডব্লিউডি একটি পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তি মন্তব্য করে মাটিরাঙ্গা উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ মো. সবুজ আলী বলেন, মাটিরাঙ্গায় প্রথমবারের মতো এডব্লিউডি সেচ পদ্ধতি প্রচলন হয়। এডব্লিউডি প্রযুক্তি ব্যাপক জনপ্রিয়তা পেলে সেচের পানি, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সাশ্রয় হবে। একইসঙ্গে কৃষকের সেচ খরচ কমবে এবং ধানের ফলন বৃদ্ধির পাশাপাশি ভূ-গর্ভস্থ পানির ওপর চাপ কমবে।
এমএন/এএসএম