ওয়ারেন্টভুক্ত আসামি আ.লীগের চেয়ারম্যান প্রার্থী


প্রকাশিত: ০১:৩১ পিএম, ২৪ মে ২০১৬

টাঙ্গাইলের মির্জাপুর উপজেলার বাঁশতৈলে বন মামলার ওয়ারেন্টভুক্ত আসামি আতিকুর রহমান মিল্টন ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের মনোনীত চেয়ারম্যান প্রার্থী হয়েছেন। মামলার ওয়ারেন্ট স্বত্তেও প্রকাশ্যে এ প্রার্থীর ব্যাপক গণসংযোগে সমালোচনার মুখে পড়েছে দল ও স্থানীয় প্রশাসন। এ নিয়ে ব্যাপক তোলপাড় শুরু হয়েছে ভোটার ও সমর্থকদের মধ্যে।

সরেজমিন ঘুরে জানা যায়, মির্জাপুর উপজেলার বাঁশতৈল ইউনিয়নের পাঁচগাঁও গ্রামের আফতাব উদ্দিনের ছেলে ও বাঁশতৈল ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনিত প্রার্থী আতিকুর রহমান মিল্টন এর নেতৃত্বে গত ২৭ জানুয়ারি বাঁশতৈল রেঞ্জের জমি দখল করে ঘর নির্মাণে বাধা দেয়ায় অফিস ভাঙচুরসহ দুই কর্মচারীকে আহত করা হয়।

ঘটনার পরের দিন ২৮ জানুয়ারি বাঁশতৈল রেঞ্জ কর্মকর্তা ফরিদ আহম্মেদ ভূইয়া বাদী হয়ে আতিকুর রহমান মিল্টনসহ ৭ জনের নাম উল্লেখপূর্বক ৪ শতাধিক লোকের বিরুদ্ধে টাঙ্গাইল বন আদালতে মামলা দায়ের করেন। এ ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে গত ১৭ এপ্রিল গ্রেফতারি পরোয়ানা জারী করেন টাঙ্গাইল বন আদালত।

নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী উল্লেখযোগ্য প্রার্থী ও সমর্থকদের অভিযোগ, সরকার দলের মনোনীত চেয়ারম্যান প্রার্থী মামলার ওয়ারেন্টভুক্ত প্রধান আসামি হওয়া স্বত্তেও পুলিশ তাকে গ্রেফতার করছে না। সরকারি অফিস ভাঙচুর ও কর্মচারীদের মারধরকারীকে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ কিভাবে দলের চেয়ারম্যান প্রার্থী মনোনীত করলো এ নিয়েও প্রশ্ন তুলছেন তারা। এছাড়া প্রার্থীর বিরুদ্ধে মামলার ওয়ারেন্ট থাকা স্বত্তেও নির্বাচন কমিশন ও উপজেলা প্রশাসন নীরব ভূমিকা পালন করছে বলে অভিযোগ তাদের।

এ প্রসঙ্গে বাঁশতৈল ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের মনোনীত চেয়ারম্যান প্রার্থী আতিকুর রহমান মিল্টন জানান, তিনি শুনেছেন তার বিরুদ্ধে একটি বন মামলা আছে। তবে সেটির ওয়ারেন্ট জারি হয়েছে কিনা সে বিষয়ে তিনি নিশ্চিত নন। এছাড়া তার বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগের বিষয়টি অস্বীকার করেন তিনি।

এদিকে বাঁশতৈল ইউনিয়ন নির্বাচনী রিটার্নিং কর্মকর্তা আরিফুর রহমান জানান, নির্বাচনী প্রক্রিয়া ও যাচাই বাছাইয়ের সময় ইউনিয়নের আওয়ামী মনোনীত চেয়ারম্যান প্রার্থী আতিকুর রহমান মিল্টনের মামলায় গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির বিষয়ে কোনো তথ্য পাঠায়নি মির্জাপুর থানা পুলিশ। ফলে নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে তার বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ সম্ভব হয়নি।

এ বিষয়ে মির্জাপুর থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাঈনুদ্দিন জানান, নির্বাচনে অংশগ্রহণ প্রক্রিয়া সম্পন্ন হওয়ার পর বাঁশতৈল ইউনিয়নের আওয়ামী লীগ মনোনিত চেয়ারম্যান প্রার্থী আতিকুর রহমান মিল্টনের বিরুদ্ধে সরকারি অফিস ভাঙচুর ও দুই কর্মচারী হতাহতের ঘটনায় দায়েরকৃত বন মামলার ওয়ারেন্টপত্র পৌঁছায়। মামলার প্রধান আসামি আতিকুর রহমান মিল্টন বাঁশতৈল ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে ক্ষমতাসীন দলের মনোনীত চেয়ারম্যান প্রার্থী হওয়ায় তাকে গ্রেফতার করা সম্ভব হচ্ছে না। তবে তিনি আসামি গ্রেফতারের চেষ্টা অব্যাহত রেখেছেন।

জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মো. তাজুল ইসলাম জানান, আদালতে দায়েরকৃত মামলার ওয়ারেন্ট থাকা স্বত্তেও পুলিশ কেন তার বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করছে না, সেটা তার বোধগম্য নয়। তবে কোনো মামলার সাজাপ্রাপ্ত ও ওয়ারেন্টভুক্ত আসামি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে পারবে না বলেও জানিয়েছেন তিনি।

এ ব্যাপারে মির্জাপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাসুম আহম্মেদ বলেন, বাঁশতৈল ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের মনোনীত চেয়ারম্যান প্রার্থী আতিকুর রহমান মিল্টনের বিরুদ্ধে কোনো মামলায় গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি হয়েছে কিনা, বিষয়টি তিনি জানেন না। তবে নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী প্রার্থীর বিরুদ্ধে মামলায় গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি হওয়ার মত স্পর্শকাতর বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করবে নির্বাচন কমিশন বলেও জানান তিনি।

উল্লেখ্য, অনুষ্ঠেয় ৫ম দফা ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে আগামী ২৮ মে মির্জাপুর উপজেলার ৮টি ইউনিয়নে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।

আরিফ উর রহমান টগর/এফএ/এবিএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।