মাদারীপুরে ট্রিপল মার্ডার
লেখাপড়ার পাশাপাশি সংসারের হাল ধরেছিল কিশোর পলাশ

সড়ক দুর্ঘটনায় হাত ভেঙে যায় বাবার। এরপর থেকে সংসারের হাল ধরতে পড়াশোনার পাশাপাশি অটোরিকশা চালাতে শুরু করে পলাশ সরদার (১৬)। শনিবারও (৮ মার্চ) জীবিকার তাগিদে অটোরিকশা নিয়ে বের হয়। তবে জীবিত আর ফেরেনি সে। প্রতিহিংসার শিকার হয়ে প্রাণ দিতো হয়েছে তাকে। ছেলেকে হারিয়ে বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েছেন মা সেরজান বেগম।
রোববার (৯ মার্চ) দুপুরে নিহত পলাশ সরদারের বাড়ি গেলে দেখা যায়, বাড়ির পাশেই কবর খোঁড়ার কাজ চলছে। সবাই মরদেহের অপেক্ষায় আছেন। উঠানে অজ্ঞান হয়ে পড়েন মা। তার জ্ঞান ফেরানোর চেষ্টা চলছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মাদারীপুর সদর উপজেলার খোয়াজপুর ইউনিয়নের খোয়াজপুর এলাকার ৬ নম্বর ওয়ার্ডের মুজাম সরদারের ছেলে পলাশ সরদার। সে খোয়াজপুর-টেকেরহাট উচ্চ বিদ্যালয়ে নবম শ্রেণিতে লেখাপড়া করতো। কয়েক মাস আগে অটোরিকশা চালাতে গিয়ে সড়ক দুর্ঘটনায় মুজাম সরদারের একটি হাত ভেঙে যায়। এরপর থেকেই পড়াশোনার পাশাপাশি অবসরে অটোরিকশা চালাতো পলাশ। পলাশের আয়ের টাকায় চলতো সংসারের খরচ।
শনিবার সকালেও অটোরিকশা নিয়ে বের হয় পলাশ। পরে চাচাতো ভাই সাইফুল সরদার, আতাউর সরদার ও অলিল সরদারের ওপর হামলার খবর পেয়ে বাড়িতে ছুটে আসে। অটোরিকশা বাড়ির উঠানে তালা দিয়ে দৌড়ে সেখানে যায়। ঘটনাস্থলে গেলে পলাশের ওপরও হামলা হয়। গুরুতর অবস্থায় তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় দুপুরে মারা যায় পলাশ।
এরপর থেকেই নিহত পলাশের মা সেরজান বেগম পাগলপ্রায়। রোববার সকালেও বাড়ির উঠানে তাকে অজ্ঞান অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখা যায়। জ্ঞান ফিরলেই বলতে থাকেন, ‘এত মানুষ বাড়িতে আসছে, কিন্তু আমার পলাশ কই? পলাশ আসে না কেন?’
নিহতের চাচি হেলেনা বেগম বলেন, ‘পলাশ খুবই ভালো ছেলে ছিল। ও কখনই কারও সঙ্গে মারামারি করতো না। এত অল্প বয়সেই সংসারের হাল ধরেছিল। ওর চাচাতো ভাইদের মারার খবর পেয়ে ছুটে গিয়েছিল। কিন্তু হোসেন সরদার ও শাজাহান খাঁর লোকজন তাকে বাঁচতে দিলো না। তাকে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়েছে। একটি কান কেটে ফেলেছে। শরীরের বিভিন্ন জায়গায় কুপিয়েছে। কতটা ভয়াবহ হলে এভাবে কাউকে মারতে পারে! আমরা এই হত্যার বিচার চাই। খুনিদের ফাঁসি চাই।’
মাদারীপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ভাস্কর সাহা বলেন, তিন খুনের ঘটনায় এখন পর্যন্ত আমরা তিনজনকে গ্রেফতার করেছি। অপরাধীদের ধরতে আমাদের অভিযান অব্যাহত আছে। এলাকায় উত্তেজনা থাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন আছে।
এরআগে শনিবার (৮ মার্চ) বেলা ১১টার দিকে মাদারীপুর সদর উপজেলার খোয়াজপুর ইউনিয়নের খোয়াজপুর এলাকার ৬ নম্বর ওয়ার্ডে তিন খুনের ঘটনা ঘটে। বালু ব্যবসা নিয়ে দীর্ঘদিন সাইফুল সরদারের সঙ্গে স্থানীয় হোসেন সরদার ও শাজাহান খাঁর দ্বন্দ্ব ছিল। সেই দ্বন্দ্বের জেরে আপন দুই ভাই ও চাচাতো ভাইসহ তিনজনকে হত্যা করা হয়।
নিহতরা হলেন একই এলাকার আজিবর সরদারের ছেলে সাইফুল সরদার (৪০) ও আতাউর সরদার (৩৫) এবং তাদের চাচাতো ভাই মুজাম সরদারের ছেলে পলাশ সরদার (১৬)। এসময় পাঁচটি বসতঘরে আগুন দেওয়া হয়। এ ঘটনায় আরও ১০ জন আহত হয়েছেন।
আয়শা সিদ্দিকা আকাশী/এসআর/জেআইএম