সয়াবিন তেল সংকট

‘কোম্পানি লাভ কম দিচ্ছে, তাই বাড়তি দামে বিক্রি করে পুষিয়ে নিচ্ছি’

জেলা প্রতিনিধি
জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি ময়মনসিংহ
প্রকাশিত: ০৩:৪৬ পিএম, ০৭ মার্চ ২০২৫

বোতলের গায়ে লেখা মূল্যে সয়াবিন তেল কিনতে বিক্রেতার সঙ্গে দামাদামি করছিলেন আম্বিয়া খাতুন (৬৫)। কিন্তু বিক্রেতা নাছোড়বান্দা। নির্ধারিত মূল্যে তিনি বিক্রি করবেন না। এমতাবস্থায় ক্ষুব্ধ হলেও বাধ্য হয়ে বাড়তি দামেই সয়াবিন তেল কিনতে হয় বয়োবৃদ্ধ আম্বিয়াকে।

বৃহস্পতিবার (৬ মার্চ) দুপুরে ময়মনসিংহ শহরতলীর ঐতিহ্যবাহী শম্ভুগঞ্জ বাজারে গিয়ে এমন দৃশ্য দেখা যায়।

আম্বিয়া খাতুনের কাছে বাড়তি দামে তেল বিক্রি করা ওই ব্যবসায়ীর নাম উৎপল সাহা। তিনি বাজারের পুরাতন ব্যবসায়ী। শুধু উৎপল নন, বাজারের সব বিক্রেতাই ইচ্ছেমতো দামে সয়াবিন তেল বিক্রি করছেন। এতে ক্রেতারা ক্ষুব্ধ হলেও বাধ্য হয়ে বাড়তি দামেই কিনতে হচ্ছে। ক্রেতাদের দাবি, ইচ্ছে করে সয়াবিন তেলে এমন নৈরাজ্য সৃষ্টি করা হয়েছে।

আম্বিয়া খাতুন জাগো নিউজকে বলেন, ‘তেলের লাইগ্যা ৬ঢা দোহানে ঘুরলাম। একেক দোহানদার একেকরহম দাম চায়। কি আর করার! ট্যাহা বেশি দিয়াই তেল কিনন লাগছে।’

বেসরকারি চাকরিজীবী ফজলুল হক বলেন, ‘নিত্যপণ্যের অন্যতম অনুষঙ্গ সয়াবিন তেল। তাই ক্রেতাদের চাহিদাও বেশি। এক লিটার সয়াবিন তেল বোতলে লেখা মূল্যের চেয়ে ২০ টাকা বেশি দিয়ে কিনেছি। বাজারে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের নিয়মিত মনিটরিং না থাকায় বিক্রেতারা যে যার মতো পকেট ভারী করতে ক্রেতাদের ঠকাচ্ছে।’

‘কোম্পানি লাভ কম দিচ্ছে, তাই বাড়তি দামে বিক্রি করে পুষিয়ে নিচ্ছি’

তেল বিক্রেতা উৎপল সাহার সঙ্গে কথা হলে তিনি জাগো নিউজকে বলেন, ‘সয়াবিন তেল কোম্পানির প্রতিনিধিরা আমাদের চাহিদা অনুযায়ী তেল সরবরাহ করতে পারছে না। তারা আমাদের জানাচ্ছে উৎপাদন কম। সয়াবিন তেল কিনতে হলে তেলের সঙ্গে লবণ, বোতলজাত সরিষার তেল, প্যাকেট আটা, প্যাকেটের চালসহ চা-পাতি কিনতে হয়। এগুলো না কিনলে বলা হয়, কোম্পানিতে তেল নেই।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমার মনে হয়, কোম্পানির প্রতিনিধিরা সয়াবিন তেলের সংকট দেখিয়ে তাদের উৎপাদিত অন্যসব পণ্য বেশি সরবরাহ করতে চেষ্টা চালাচ্ছেন। আমাদের দোকানে অন্যান্য সব পণ্য থাকলেও সয়াবিন তেল পাওয়ার জন্য আমরা ওইসব পণ্য আবারও কিনতে বাধ্য হচ্ছি।’

নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে বাড়তি দাম রাখছেন কেন? এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘প্রতিটা বোতলের গায়ে লেখা মূল্যের চেয়ে ২-৩ টাকা কমে আমাদের কাছে বিক্রি করা হচ্ছে। তাই পাঁচ লিটার সয়াবিনের বোতলে ৮৫২ টাকা লেখা থাকলেও ৮৯০, তিন লিটারের বোতলে ৫২৫ টাকা লেখা থাকলেও ৫৪০-৫৪৫, দুই লিটারের বোতলে ৩৪৪ টাকা লেখা থাকলেও ৩৮০ ও এক লিটারের বোতলে ১৭৫ লেখা থাকলেও ১৯০-১৯৫ টাকায় বিক্রি করছি। অন্য দোকানিরাও একই দামে বিক্রি করছেন। ক্রেতারা এই দামে না কিনলে আমাদের কিছু করার নেই।’

‘কোম্পানি লাভ কম দিচ্ছে, তাই বাড়তি দামে বিক্রি করে পুষিয়ে নিচ্ছি’

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আরেকজন বিক্রেতা বলেন, ‘অনেক কোম্পানির বিভিন্ন পণ্য বাজারে কম বিক্রি হয়। এগুলো ব্যবসায়ীরা কেনেনও কম। ফলে বাজারে স্লো পণ্যগুলোর সরবরাহ বাড়াতে সয়াবিনের এমন কৃত্রিম সংকট তৈরি করা হয়েছে বলে আমরা ধারণা করছি। তবে এজন্য আমাদের (দোকানিদের) ক্ষতি নেই। কোম্পানির প্রতিনিধিরা সয়াবিনে আমাদের লাভ করার সুযোগ কম দিচ্ছে। তাই আমরাও বাড়তি দামে বিক্রি করে পুষিয়ে নিচ্ছি।’

এ বিষয়ে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর ময়মনসিংহের সহকারী পরিচালক মো. আব্দুস ছালাম বলেন, ‘আমরা বাজারে নিয়মিত অভিযান চালাচ্ছি। বিভিন্ন অসাধু ব্যবসায়ীদের জরিমানা করা হচ্ছে। তবে আমরা চলে আসার পরই অনেকে ক্রেতাদের ঠকাতে চেষ্টা করেন।’

তিনি আরও বলেন, ‘বাজারে অভিযান চলমান রয়েছে। বোতলের গায়ে লেখা মূল্যের চেয়ে বাড়তি দাম রাখার সুযোগ নেই। অভিযান চালিয়ে এর প্রমাণ মিললে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এছাড়া গুদামজাত করে কেউ কৃত্রিম সংকট তৈরি কিংবা তেলের সঙ্গে অন্যান্য পণ্য কিনতে বাধ্য করা হচ্ছে কিনা তাও তদারকি করা হবে।’

কামরুজ্জামান মিন্টু/এমএন/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।