রমজান
২৫ টাকার লেবু ৫০ টাকা, ২০ টাকার বেগুন ৬০

ময়মনসিংহ শহরতলির ঐতিহ্যবাহী শম্ভুগঞ্জ বাজার। এই বাজারে সদরের চরাঞ্চলের কয়েকটি ইউনিয়ন থেকে প্রতিদিন প্রচুর পরিমাণ সবজি আসে। ফলে অন্যান্য বাজারের চেয়ে ন্যায্যমূল্যে সবজি বেচাকেনা হয় শম্ভুগঞ্জে। অথচ রমজানকে কেন্দ্র করে এই বাজারে সবজির দামে নৈরাজ্য সৃষ্টি করেছেন অসাধু ব্যবসায়ীরা। ইচ্ছামতো দামে বিক্রি করা হচ্ছে সবকিছু। এতে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন ক্রেতারা।
রোববার (৩ মার্চ) বিকেলে সরেজমিন বাজার ঘুরে জানা যায়, রমজানের দুদিন আগেও এই বাজারে আকারভেদে লেবু ২৫-৩০ টাকা হালি বিক্রি হয়েছে। অথচ এখন একই লেবুর দাম প্রতি হালিতে ২৫-৩০ টাকা বাড়িয়ে ৫০-৬০ টাকায় বিক্রি করা হচ্ছে। শসা দুদিন আগে ২৫-৩০ টাকা কেজি বিক্রি হলেও এখন ৪০-৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। কয়েক ধরনের সবজিতেও কেজিতে ২০-৪০ টাকা পর্যন্ত দাম বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।
গত সপ্তাহে করলা ৫০ টাকা কেজি বিক্রি হলেও এখন ৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ২০ টাকার বেগুন বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকায়। এছাড়া ২০ টাকার গাজর ৩০, ১৫ টাকার শিম ৪০, ২৫ টাকার মিষ্টিকুমড়া ৩০, ২৫ টাকার কাঁচা পেঁপে ৩৫, ৪০ টাকার কাঁচামরিচ ৫০ এবং ২০০ টাকার সজিনা ডাঁটা ২৬০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে।
অপরিবর্তিত অবস্থায় বাঁধাকপি ২০ ও ফুলকপি ১৫ টাকা পিস বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া টমেটো ২০, মটরশুঁটি ৬০, বরবটি ৬০, মুলা ১৫ ও কচুরলতি ৬০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
ক্রেতারা জানান, চরাঞ্চলের কয়েকটি ইউনিয়ন থেকে প্রচুর পরিমাণ সবজি বাজারে আসছে। বাজারে সবজি সরবরাহের কমতি নেই। তবুও যৌক্তিক কোনো কারণ ছাড়াই দাম বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।
কথা হয় বাজারে লেবু কিনতে আসা আব্দুল মজিদের সঙ্গে। তিনি জাগো নিউজকে বলেন, ‘দুদিন আগেও এক হালি বড় সাইজের রসালো লেবু ২৫-৩০ টাকায় কিনেছি। অথচ রমজান উপলক্ষে দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন বিক্রেতারা। এখন ছোট আকারের কম রসালো লেবু ৫০-৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। কয়েকটি দোকান ঘুরেও আগের দামে কিনতে পারিনি।’
শসা কিনছিলেন নাজিম উদ্দিন। তিনি বলেন, ‘বাজারে শসার অভাব নেই। অথচ কেজিতে ২০ টাকা পর্যন্ত দাম বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। তবুও বাধ্য হয়ে দুই কেজি শসা কিনেছি। বাজারে প্রশাসনের কঠোর নজরদারি না থাকলে বিক্রেতাদের নৈরাজ্য চলতেই থাকবে।
দাম বাড়ানোর যৌক্তিক কারণ নেই বলে সরল স্বীকারোক্তি দেন বিক্রেতা ফরহাদ হোসেন। তিনি বলেন, ‘রমজান উপলক্ষে সব বাজারেই কমবেশি সবজির দাম বেড়েছে। আমরা কৃষকদের কাছ থেকে আগের দামেই পণ্য কিনছি। আমার পাশের বিক্রেতারা যে দামে সবজি বিক্রি করছেন, আমিও একই দামে বিক্রি করছি। এতে খুব বেশি যে লাভ হচ্ছে, তা কিন্তু নয়।’
আরফান আলী নামের আরেক বিক্রেতা বলেন, ‘দাম বাড়লেও বিক্রি আগের চেয়ে বেড়েছে। রমজান উপলক্ষে অনেক ক্রেতা ব্যাগভর্তি করে নিয়ে যাচ্ছেন। এতে বিক্রি করতে আমাদের সমস্যা হচ্ছে না। তবে প্রয়োজনের তুলনায় কম কিনছেন নিম্ন ও মধ্যম আয়ের লোকজন।’
বেশি কিনলেই কি দাম বাড়িয়ে দেওয়া হবে—এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘সব বিক্রেতা যে দামে বিক্রি করছেন, আমি এর চেয়ে বেশি দামে বিক্রি করছি না।’
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর ময়মনসিংহের কার্যালয় সূত্র জানায়, গতবছর জেলায় ২১ হাজার ৮৫০ হেক্টর জমিতে সবজি উৎপাদন হয়েছে। এ বছর উৎপাদন হয়েছে ২১ হাজার ৮৬০ হেক্টর জমিতে। ময়মনসিংহ সদরে সবজি উৎপাদন হয়েছে ৫ হাজার ৯০০ হেক্টর জমিতে। গতবছর সদরে শসা উৎপাদন হয়েছিল ২৪০ হেক্টর জমিতে। এ বছর উৎপাদন হয়েছে ২৫০ হেক্টর জমিতে। এছাড়া সদরে গতবছর শুধু লেবু ২৫ হেক্টর জমিতে উৎপাদন হলেও এ বছর উৎপাদন হয়েছে ২৬ হেক্টর জমিতে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর ময়মনসিংহের উপপরিচালক ড. নাসরিন আক্তার বানু বলেন, সদরের ১০টি ইউনিয়নের মধ্যে চরাঞ্চলের বোররচর, পরানগঞ্জ ও সিরতা ইউনিয়ন সবজি ভাণ্ডার হিসেবে খ্যাত। এসব ইউনিয়নে প্রচুর পরিমাণ সবজি উৎপাদন হয়, যা শহরতলির শম্ভুগঞ্জসহ আশপাশের বিভিন্ন বাজারের চাহিদা পূরণ করে ট্রাকভর্তি করে ঢাকায় নিয়ে বিক্রি করা হয়। বাজারে সবজির যথেষ্ট সরবরাহ রয়েছে। বিক্রেতাদের কারসাজির কারণে দাম বাড়তে পারে।
এ বিষয়ে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর ময়মনসিংহের সহকারী পরিচালক মো. আব্দুস সালাম বলেন, রমজানকে টার্গেট করে অনেক বিক্রেতা ইচ্ছা করেই দাম বাড়িয়ে দেন। এজন্য আমরা বাজারে নজরদারিও বাড়িয়েছি। বাজারগুলোতে অভিযান চালানো হবে। ইচ্ছামতো দামে বিক্রি করে ক্রেতাদের ঠকানোর প্রমাণ মিললে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এসআর/জেআইএম